crimepatrol24
২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, এখন সময় রাত ৮:২১ মিনিট
  1. অনুসন্ধানী
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইটি বিশ্ব
  5. আইন-আদালত
  6. আঞ্চলিক সংবাদ
  7. আন্তর্জাতিক
  8. আফ্রিকা
  9. আবহাওয়া বার্তা
  10. আর্কাইভ
  11. ইউরোপ
  12. ইংরেজি ভাষা শিক্ষা
  13. উত্তর আমেরিকা
  14. উদ্যোক্তা
  15. এশিয়া

আজ সেই ১১ই ডিসেম্বর

প্রতিবেদক
মো: ইব্রাহিম খলিল
ডিসেম্বর ১১, ২০২০ ৯:৪১ অপরাহ্ণ

মহিনুল ইসলাম সুজন, নীলফামারীঃ
আজ সেই ১১ই ডিসেম্বর।এইদিনে মুক্ত হয়েছিলো নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা।১৯৭১সালের এইদিনে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ডিমলা পাক হানাদার মুক্ত করেন বাংলার বীর সন্তানেরা।
ইতিহাস: ডিমলার উত্তর দিকে বাংলাদেশ ভারতের বর্ডার, আর এই অঞ্চলে হানাদার বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান নেওয়া ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।যেহেতু ডিমলার উত্তর অঞ্চলটি ছিলো ভারতের বর্ডার সে কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান বর্ডারের কাছাকাছি। আর পাকিস্তানিরাও সেখান থেকে নিরাপদ স্থানে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প তৈরি করেন। আর উত্তর দিকে বালাপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গার হাট এবং পূর্বে বর্তমান তিস্তা ব্যারেজ পর্যন্ত সম্পূর্ণ ছিলো মুক্ত অঞ্চল।
ডিমলায় যেসব এলাকায় হানাদার ক্যাম্প ছিলো তা হলো:
বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ১টি ,টুনিরহাট বাজারে ১টি,খগার হাটে ১টি,শঠিবাড়ি বাজারে ১টি ও ডিমলা সদরের বর্তমানে ডিমলা উপজেলা পরিষদে ১টি ও রামডাঙ্গা পূরান থানায় ১টি। এসব ক্যাম্প পরিচালনা হত ডিমলা সদরের দুটি ক্যাম্প হতে।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রতিটি ক্যাম্পে ভারি সব অস্ত্রে সুসজ্জিত। আর এসব ক্যাম্প তৈরি করতে যে সকল ইট ও টিন ব্যবহার হয়েছিল তা বর্তমান নীলফামারী-১(ডোমার-ডিমলা)এর সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আফতাব উদ্দিন সরকার বাড়ি হতে প্রায় ২ লাখ পিস ইট নতুন বাড়ি তৈরি করার নতুন দুটি ২০০ হাতের বড় বড় টিনের ঘড় লুট করে নিয়ে যায় তারা।
ওইদিকে ডিমলার সমগ্র উওর অঞ্চল ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে। মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা পদ্ধতিতে উত্তর দিক হতে দক্ষিণ দিক দিয়ে যুদ্ধ করতে করতে সামনের দিকে অগ্রসর হবে এটাই ছিলো মূল পরিকল্পনা ।
ভারত থেকে সদ্য ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা ডিমলাকে ৬ টি কোম্পানি বা অঞ্চলে ভাগ করে নেন তাদের অবস্থান।
সেগুলো স্থান হলো: ১।দক্ষিণ বালাপাড়া অঞ্চলে মাহাবুব কোম্পানী।২।ঠাকুরগঞ্জ অঞ্চলে মনির কোম্পানি।৩।টুনির হাট ভাড়ালদাহ অঞ্চলে সিদ্দিক কোম্পানী।৪।কলোনী দোহলপাড়া অঞ্চলে রওশন কোম্পানী।৫।রহমানগঞ্জ ও টেপাখড়িবাড়ি অঞ্চলে হারেছ কোম্পানী।৬।তিস্তা নদীর তীর অঞ্চল দেখতেন মতিন কোম্পানী।এই ৬টি কোম্পানীর মুক্তিযোদ্ধারা যে সকল অস্ত্র ব্যাবহার করেছিল তা হলো:এস,এল,আর থ্রি নট থ্রি রাইফেল,এল,এম,জি টুইন্স মটার,সর্টমেশিন গান,এন্টিপারসোনাল ১৬ মাইন,এন্টিপারসোনাল ১৪ মাইন সহ আরও বেশ কিছু অস্ত্র।১৯৭১ সালে বছরের প্রথম থেকেই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানে হানাদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়ে যায়।লেগে যায় দাঙ্গা, অত্যাচার, হামলা, লুটপাট।মূল যুদ্ধ শুরু হয়ে য়ায়।বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৭ মার্চের ভাষনের পর।আমাদের ডিমলা অঞ্চলের মূল যুদ্ধশুরু হয় অক্টোবর মাস থেকে। এর পূর্বে চলছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতি গ্রহন ও যুদ্ধের পরিকল্পনা।
ডিমলার প্রথম যুদ্ধ ১০ই অক্টোবর ১৯৭১: রাজাকার বাহিনীদের একটা টহল টিম ডাঙ্গার বালাপাড়া ইউনিয়ন হাটের বেশ কয়েকটি গ্রামে মুক্তিবাহিনীর মুক্ত অঞ্চলে প্রবেশ করে।
অস্ত্র দেখিয়ে লুটতরাজ শুরু করে মুক্ত অঞ্চলের মানুষের ঘর বাড়ি। গ্রামবাসী একজন রাজাকারকে অস্ত্রসহ ধরে ফেলেন। ধরতে গিয়ে ডাঙ্গার হাটের জব্বার মেম্বারসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।রাজাকার ধরার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় মাহাবুব কোম্পানির বেশ ক’জন মুক্তিযোদ্ধা সেই রাজাকারকে বেঁধে ধরে নিয়ে যান মুক্ত অঞ্চলের ক্যাম্পে ।
পরে সেই রাজাকারকে ৬ নং সেক্টর ভারতের দেওয়ানগঞ্জে পাঠানো হয়।ইতোমধ্যে পাক বাহিনী ক্যাম্প ডাংগারহাটে সে খবর গেলে তারা প্রতিশোধের নেশায় উম্মাদ হয়ে যায়। আমাদের মুক্তিবাহিনীর উপর আক্রমনের নেশায় তারা প্রতিশোধের নীল নকশা বুনতে শুরু করে।গোপনে তারা রাজাকারের মাধ্যমে খবর নিতে থাকেন। মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের খবর তারা সংগ্রহ করে দক্ষিণ বালাপাড়া বাসুয়াল ঘাটিয়ালের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান নিশ্চিত হন।তাদের তথ্য সংগ্রহ করতে সময় লেগে যায় প্রায় ৮ দিন।
১৮ই অক্টোবর ১৯৭১: ঠিক সকাল অনুমান ৮/৯ টায় পাক হানাদার বাহিনী আক্রমনের প্রস্তুতি নেয়।এই অঞ্চলের দায়িত্বে রয়েছে মাহাবুব কোম্পানি। অপরদিকে বেলুজ রেজিমেন্টের মেজর জহুরুল হকের নেতৃত্বে হানাদার বাহিনীর ১০০ থেকে ১২০জনের একটি দল।আর আমাদের মাত্র ৯ জন মুক্তিযোদ্ধা যথাক্রমে-সেলিম(রংপুর,গঙ্গাচরা),মোহাম্মদ আলী(খুলনা),হযরত আলী(কুড়িগ্রাম),মটারম্যান আবদুস সামাদ(লালমনিরহাট),সেকশন কমান্ডার আফজাল(বগুরা),আশরাফ আলী ও নাম না জানা দু.জনসহ সবাই সেদিন পাক হানাদারদের প্রতিহত করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। শুরু হয় প্রচন্ড গোলাগুলি। এক পর্যায়ে চারিদিক দিয়ে থেকে ঘিরে ফেলে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের। মুক্তিযোদ্ধা মানিক আটকা পড়ে।সাথে সাথে বন্দুকের বেয়নেটের মাথায় মানিককে গেঁথে ফেলে মুহূর্তে চারিদিক হানাদার বাহিনী ব্রাশ ফায়ার শুরু করে।
সেখানে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলিকে বেওনেট দিয়ে খুঁচিয়ে ও পরে গুলি করে মেরে ফেলা হয়।গোলাগুলির শব্দ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে ঘন্টা খানেকের মধ্যে পাশে থাকা আমাদের মুক্তিবাহিনীর ৪ টি কোম্পানী মাহাবুব,সিদ্দিক,রওশন ও মনির কোম্পানির দ্রুত যুদ্ধ স্থানে চলে আসে প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে।এত বড় মুক্তিযোদ্ধার বাহিনী দেখে পাক বাহিনী পিছু হটতে থাকে।পিছু হটার সময় ৮০থেকে ৮২ টি ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং ১০থেকে ১৫ জন গ্রামবাসীকে ধরে নিয়ে যায় ডাঙ্গার হাট ক্যাম্পে(বর্তমান বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে)। পিছু হটার পর সেই স্থানে মোহাম্মদ আলীর পরে থাকা ক্ষত-বিক্ষত নিথর রক্তমাখা দেহটিকে উদ্ধার করে মুক্ত অঞ্চলে নিয়ে যায় সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা বৃন্দ।বর্তমানে পশ্চিম ছাতনাই ঠাকুরগঞ্জ বাজারে মসজিদের সাথে তাকে সমাহিত করা হয়।
আর ধরে আনা সাধারণ মানুষের উপর চলে সেই রাতে সারা রাতব্যাপি অমানবিক নির্যাতন। পরের দিন সকালে যাদের কপালে পিস কমিটির সুপারিশ জুটে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আর বাকিদের…….।
১৯ই অক্টোবর ১৯৭১ ডাঙ্গারহাট ট্রাজেটি: আগের দিন ধরে আনা দক্ষিণ বালাপাড়ার ৮ জন সাধারণ মানুষকে, গোমনাতি নিয়ে যাওয়ার পথে (বর্তমান বালাপাড়া বদ্ধভূমি) সেখানে ধরে আনা সাধারণ গ্রামবাসীকে নির্বিচারে বেয়নেট চার্জ ও গুলি করে হত্যা করা হয়। বর্তমানে সেখানে একটি বদ্ধভূমি রয়েছে।
২২শে অক্টোবর১৯৭১ স্থল মাইন আক্রমন: খানসেনার ডাঙ্গার হাট ক্যাম্প হতে গোমনাতি চৌরঙ্গীর রাস্তায় একটি টহল টিম প্রতিনিয়ত টহল দিতেন। কারণ ওই সড়কটি তারা নিরাপদ মনে করতেন কিন্তু আমাদের মুক্তিবাহিনীর দল এই রাস্তাটিকে মুক্ত করেই ছাড়বে। মাহাবুব কোম্পানির ক’জন মুক্তিযোদ্ধা, ঠিক বিকেল গড়িয়ে সন্ধা হলো।৩টি এন্টিপারসোনাল ১৬ ও ১০টি এন্টিপারসোনাল ১৪ মাইন নিয়ে রওনা দেন তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী রাস্তায় মাইন পুতে রাখবেন। ঠিক চৌরাঙ্গী হতে মাইন পোতা শুরু (বর্তমানে বালাপাড় ও চৌরাঙ্গীর শিসা তলি ঘাটের দিকে অগ্রসর হলেন)তখন রাত ঠিক ৮ টা কিংবা ৯ টা ।মাইন পুতে রাখা প্রায় শেষ, ইতোমধ্যে খানসেনাদের টহল টিমের গাড়ি। গাড়ির শব্দ শোনার সাথে সাথে সব মুক্তিযোদ্ধা যে যার মত সরে গেলেন।
২০০ গজের মত দুরে যাওয়ার সাথে সাথে চারিদিকে বিকট শব্দে মাইন ফাটতে শুরু করে। আর মাইনের আক্রমণের সাথে সাথে পাকি বাহিনীর দলের ৪ সদস্য ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করে ও ৩ জন গুরুতর আহত হন।এর পর থেকে আর ভুলক্রমেও সে রাস্তায় কখনও কোন খান সেনা আসেনি। সেই থেকে বন্ধ হয় ওই রাস্তা আর খান সেনার যোগাযোগ ব্যবস্থা।
২৮  অক্টোবর ১৯৭১ খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নরে টুনির হাটের যুদ্ধ: ঠিক সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত, পরে ভোর ৪টা ৪০মিনিট সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হয় ডিমলার টুনিরহাটে ।এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ৪টি কোম্পানি ।মাহাবুব কোম্পানি,মনির কম্পানী, সিদ্দিক কোম্পানী ও রওশন কোম্পানী।
পাকিস্তানিরা ভারি অস্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের যোদ্ধাদের হাতে সামান্য ক’টি অস্ত্র-বেশ ক’টি থ্রি নট থ্রি রাইফেল, এল,এম,জি,২২টি,টুইন মটরস ৫টি,এন্টি পার্সোনাল ১৬/১৪ মাইন,এস এল আর ৫টি সহ আরও বেশ কটি অস্ত্র যে যার মত পজিশন নিয়েছে টুনির হাট মুক্ত করতেই হবে, হানাদারদের উৎখাত করতে সব প্রস্তুতি শেষ।সময় শুধু সকালের অপেক্ষা ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে যুদ্ধ শুরু।চারটি কোম্পানীর প্রায় ৫০০ থেকে ৫৫০ জনের মুক্তিযোদ্ধা। চোখে মুখে বিজয়ের নেশা সাথে সাধারণ মানুষের অনুপ্রেরণা। চলছে প্রচন্ড গোলাগুলি। দুই দিক হতে শুধু গুলি আর গুলির আওয়াজ। ইতোমধ্যে আমাদের একজন যোদ্ধা রণাঙ্গনে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার পেটের ভুড়ি বের হয়ে গেল। আহত বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদ আরশাদ আলীর সহযোদ্ধারা তাকে কাঁধে করে নিয়ে গেলেন মুক্ত অঞ্চলে (বর্তমান আশাদগঞ্জে)। কিছুক্ষণ বেঁচে থাকার পর প্রচন্ড যন্ত্রনায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। পরে তাকে বর্তমানে আরশাদগঞ্জে বর্তমান সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আফতাব উদ্দিন সরকার ও উপজেলার চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা তবিবুল ইসলামসহ সকল সহযোদ্ধা সমাহিত করেন। বর্তমানে তার কবরটি স্মৃতি হিসাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
সে সময়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ধরা পড়েন বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদ শামছুল হক। তাকে পাকসেনারা ধরে নিয়ে আসেন ডিমলা বাবুর হাটের রামডাংগা পুরান থানা ক্যাম্পে ।হতাহত দু’জন মাহাবুব কোম্পানির যোদ্ধা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পিছু হটার সময় টুনিরহাটের বেশ কটি গ্রামের ১২০টির মত ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেন। এই যুদ্ধে খান সেনাদের ৯ জন সদস্য নিহত হন ও আহত হন ৬ জনের মত ।সেখান থেকে পিছু হটে খান সেনারা, চলে আসেন ডিমলার ক্যাম্পে, মুক্ত হয় টুনির হাট অঞ্চল ।
আর পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটার সময় রনাঙ্গণে আহত যোদ্ধা শহীদ শামছুল হককে পা বেঁধে মাটির সাথে হেঁচরিয়ে নিয়ে আসেন রামডাঙ্গা পুরান থানা ক্যাম্পে।সারারাত পাশবিক নির্যাতন, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয় তাকেও। হত্যার পর তার লাশ ফেলে দেওয়া হয় পাশের জঙ্গলে। রামডাঙ্গা এলাকার বেশ ক’জন মানুষ ভয়ে ভয়ে কোন রকম তাকে মাটি চাপা দিয়ে সমাহিত করেন ।এখন তার কবরটি মাননীয় সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আফতাব উদ্দিন সরকার নিজের উদ্যোগে সংরক্ষণ করেছেন।
৬ই নভেম্বর ১৯৭১ গয়াবাড়ী ইউনিয়নের সুটিবাড়িতে পাক বাহিনীর ক্যাম্প অপারেশন: প্রস্তুতি নিয়েছিলেন পরিকল্পনা মত । মতিন কোম্পানী, হারেছ কোম্পানী ও রওশন কোম্পানী সহ তিন কোম্পানী মিলে পাক বাহিনীর টহল টিমের উপর গেরিলা পদ্ধতিতে আক্রমণ শুরু করেন।
অতর্কিত আক্রমণে পাক বাহিনীর দুই সদস্য আহত হয় এবং পাক বাহিনীর দল যুদ্ধস্থল থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় ।পালিয়ে যাবার সময় পাক হানাদাররা ১২০ টি ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং বেশ ক’জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করেন। সে দিন সুটিবাড়ি(বর্তমান গয়াবাড়ি ইউনিয়ন) এলাকা পাক হানাদার মুক্ত হয়।মৃত সাধারণ মানুষদের সুটিবাড়ি বাজারের ভিতরে গণ কবর দেওয়া হয়।তাদের স্মৃতি সংরক্ষণে সেখানে বীরমুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকারের নিজ উদ্যোগে স্মৃতি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন।
১০শে ডিসেম্বর ১৯৭১ মাইন বিস্ফোরণ: যুদ্ধ চলাকালীন ডিমলায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চলাচলের বিভিন্ন রাস্তায় মুক্তিযোদ্ধার মাইন পুঁতে রাখেন।ডিমলা মুক্ত প্রায়।এবার পুঁতে রাখা মাইন তোলার পালা। বিভিন্ন স্থানে পুঁতে রাখা মাইনের আক্রমণে বেশ কটি কৃষকের গরুও মারা যায়। তাই মাইনগুলো তুলে নিস্ক্রিয় করতে হবে। মাইন তোলা নিস্ক্রিয় করার কাজ শুরু। চোখে মুখে যেমন বিজয়ে ডিমলা মুক্তকরণের নেশা।মুক্তিযোদ্ধারা পরিবারের কাছে ফিরে যাবে, তাদের মন পড়ে আছে বাড়িতে, তারপরও সব মাইন তুলে জমা করতে হচ্ছে ক্যাম্পে ।( বর্তমান ঠাকুরগঞ্জ বাজারের পাশে বালাপাড়া বিওপি ক্যাম্পের সাথে ধউলুর বাড়ির পাশে) ছিলো মুক্তিযোদ্ধার ক্যাম্প। সেখানে সব মাইন তুলে রাখা হলো। ক্যাম্পে যে যার মত একে অপরের কানে তাদের দেশ স্বাধীন হওয়ার আভাস জানাচ্ছিলেন।চোখে -মুখে এক আনন্দের কথা, দেশ স্বাধীন হবে।আর ক্যাম্পে ১০০/১৫০ টি জমা রাখা মাইন তো নিস্ক্রীয় করতে হবে। মনির কোম্পানির টু আইসিসহ ৭ জন সদস্য ক্যাম্পে জমা রাখা মাইন নিস্ক্রীয়করণের কাজে ব্যস্ত। কে জানে ঘটবে এমন দুর্ঘটনা। অসাবধানতার কারণে সেখানে একটি মাইন বিস্ফোরণ হওয়ার সাথে সাথে বাকি মাইনগুলো ফাটতে শুরু হল। সেই দুর্ঘটনার ফলে ক্যাম্পে থাকা ৭ জন বীরযোদ্ধার প্রাণ দিতে হলো বিজয়ের পরও। কারো মাথা উড়ে গেল ধান ক্ষেতে, কারো পা উড়ে পড়ে আছে বাঁশ ঝাড়ে, কারও পেটের ভুঁড়ি বাঁশের আগায়, কারও ক্ষত-বিক্ষত হাত পা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে যায় সেদিন। পরে ছড়িযে ছিটিয়ে থাকা শরীরের বিভিন্ন অংশ এক সাথে করে সমাহিত করা হয় এক সাথে সবাইকে । বর্তমানে সেখানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর ও হিন্দু মুক্তিযোদ্ধার সমাহিত মন্দির তৈরি করা হয়েছে।দীর্ঘ যুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণের বিনিময়ে মুক্ত হয় ডিমলা।তাই ১১ই ডিসেম্বর ডিমলা মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
 ্এদিকে  দেশব্যাপি মুক্ত হতে থাকে বিভিন্ন অঞ্চল।ডিমলা মুক্ত করার পর বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন কোম্পানী এডভান্স করতে থাকে মূল ক্যাম্প নীলফামারী নটখানার দিকে।মাহাবুব কোম্পানী গোমনাতী হয়ে বোড়াগাড়ি ডোমার হয়ে নটখানায়।সিদ্দিক কোম্পানী ডিমলা সদর হয়ে শৈলার ঘাট দিয়ে নীলফামারি নটখানায়।মনির,রওশন,মতিন কোম্পানী সুটিবাড়ি,ডালিয়া,চাপানি,জলঢাকা,কৈমারি,কিশোরঞ্জ হয়ে নটখানায়।সকল কোম্পানী নীলফামারী প্রধান ক্যাম্পে মিলিত হয়।
 হারেছ কোম্পানি সরাসরি রংপুর ক্যাম্পে মিলিত হয়।এভাবেই ১১ই ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় আমাদের ডিমলা।
তথ্য সংগ্রহ: যুদ্ধকালীন কোম্পানি কমান্ডার,যুদ্ধাহত বীরমুক্তিযোদ্ধা এ,জেড সিদ্দিক( সিদ্দিক কোম্পানী),কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান মনির( মনির কোম্পানী)ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী ।
Share This News:

সর্বশেষ - লাইফ স্টাইল

আপনার জন্য নির্বাচিত