মো. সাইফুল্লাহ খাঁন, জেলাপ্রতিনিধি, রংপুর : রংপুরে দেড় কোটি মানুষের জন্য নিয়োজিত রয়েছেন একজন ডুবুরি। নদীনালা ও খালবিলে ভরা রংপুর বিভাগ। এ বিভাগের বুক চিরে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, দুধকুমার, যমুনেশ্বরী, করতোয়াসহ নাম জানা ও অজানা অসংখ্য ছোট বড় নদ-নদী প্রবাহিত। এসব নদ-নদীসহ পুকুর ও খালবিলের পানিতে ডুবে প্রতিবছরই মানুষ মারা যাচ্ছে। লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর তালিকা। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি সংকট ও উদ্ধার অভিযানে তৎপরতার অভাবে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করছে সচেতন মহল। কারণ, বিভাগের আট জেলার জন্য মাত্র দু’জন ডুবুরি ছিল।এরমধ্যে তিন দিন আগে দিনাজপুরে এক যুবককে উদ্ধার করতে গিয়ে পানিতে ডুবে আব্দুল মতিন নামে এক ডুবুরি মারা যান। বর্তমানে বিভাগের প্রায় দেড় কোটি মানুষের ভরসা একজন ডুবুরিকে ঘিরে। ওই একজন দিয়েই চলছে উদ্ধারকাজ।
সচেতন মহলসহ সংশ্লিষ্টরা বলছে, জরুরি ভিত্তিতে ডুবুরির সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। কারণ বর্ষা মৌসুমে প্রতিমাসে পানিতে পড়ার মতো অন্তত ২০-২৫টি দুর্ঘটনা ঘটছে। শুধু জরুরি প্রয়োজনে ডুবুরির সংকট থাকায় পানিতে পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। সেইসঙ্গে যেকোনো উদ্ধার কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
রংপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগে এ বছরের মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত গড়ে প্রতিমাসে ৩০ থেকে ৩৫টি পানিতে ডুবে নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় উদ্ধার কার্যক্রম চালায় রংপুর ফায়ার সার্ভিসের দুইজন ডুবুরি। কিন্তু গত শনিবার দিনাজপুরের কাহারোলে নিখোঁজ যুবকের লাশ উদ্ধার করতে গিয়ে নদীতে ডুবে এক ডুবুরির মৃত্যু হওয়াতে এখন একজনকে দিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। নিহত আব্দুল মতিন (৪২) নামের রংপুর ফায়ার সার্ভিসের এক ডুবুরির মৃত্যু হয়েছে। তিনি ২০০৬ সালে ফায়ার সার্ভিসে যোগদান করেন। বিগত ৬ বছর ধরে রংপুরে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনে কর্মরত ছিলেন তিনি।
এদিকে স্থানীয় সংগঠক কামরুল হাসান টিটু বলেন, তিস্তা, ধরলা, করতোয়া, ঘাঘট, ইছামতি, আত্রাই, আখিরা, যমুনেশ্বরীসহ ছোট বড় প্রায় ৮২টি নদ-নদী এই বিভাগের মধ্য দিয়ে প্রবহমান। বর্ষা মৌসুমে ছোট শিশুসহ অনেক মানুষ পানিতে ডুবে মারা যান। দুর্ঘটনা কবলিত এসব মানুষ ও তাদের মরদেহ উদ্ধারে জরুরি ভিত্তিতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাই ভরসা। কিন্তু ডুবুরি সংকট ও প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় বেশির ভাগ সময়ে উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।
গত পাঁচ মাসে বিভাগের আট জেলা থেকে দেড় শ’ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। যাদের পানিতে পড়ে মৃত্যু হয়েছে বলে জানান রংপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিভাগে পানিতে পড়াদের উদ্ধার কাজের জন্য আগে দুইজন ডুবুরি ছিলেন। কিন্তু আব্দুল মতিনের মৃত্যুর পর এখন পুরো বিভাগজুড়ে একজন ডুবুরি রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে শূন্য পদে আরেকজন ডুবুরিকে বদলি করে আনা হবে।