
আনিছুর রহমান মানিক, ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধি>>
নীলফামারীর ডোমারে নেসকো লিঃ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর নানা অনিয়ম ও অ-ব্যবস্থাপনায় গ্রাহক ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। এ নিয়ে গ্রাহকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই অফিসের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলীর স্বেচ্ছাচারী, বেপরোয়া অনিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে দৈনিক শত শত গ্রাহক ধরনা দিচ্ছে অফিসটিতে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু দূর্নীতিবাজ কর্মচারীকে দিয়ে অনিয়ম করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন । এমনি একটি অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জানাগেল, নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ আলীর নানা অপকর্মের সহযোগী পিচরেট মিটার পাঠক রবিউল ইসলাম সদরের বড়রাউতা গ্রামের শফিকুল ইসলামের বাড়ির ব্যবহৃত এনালগ মিটার যাহার নম্বর-০৬৮১৬৪ পরিবর্তন করে (যাহা গত ১৭/১১/২০১৯ পর্যন্ত লাগানো ছিল) যাহার ব্যবহৃত ইউনিট ২৭৮৭৮। সেখানে ২৪৪০০ ইউনিট পর্যন্ত বিল করা হয়। অবশিষ্ট ৩৪৭৮ অতিরিক্ত ইউনিটের বিল না করে নতুন ডিজিটাল মিটার ইস্যু করেন, যাহার নম্বর-১১৬৬৮৮৮, মিটার না লাগিয়েই এই মিটার নম্বরে বিল শুরু করেন। এই গ্রাহকের নিকট থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে সরকারের প্রায় ৩০হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয় বলে অফিসের একটি সূত্র জানান।
অপরদিকে, একই ইউনিয়নের চিলাই পাড়ার সেকেন্দার মেম্বার এর ব্যবহৃত এনালগ মিটার যাহার নম্বর ০২৮৫০৪। ওই মিটারটিতে ১৪৮০৮ ইউনিট খরচ করা হলেও সেখানে টেম্পারিং করে ১১১৬৭ ইউনিটে নামিয়ে আনা হয়েছে। এখানেও সরকারের বিপুল অর্থ পকেটস্থ করা হয়েছে বলে ওই সূত্রটি জানায়।
পৌর এলাকার কাজি পাড়ার দরিদ্র বিদ্যুৎ গ্রাহক আনোয়ার হোসেন তাক্কান জানান, আমার ডিজিটাল মিটারে এ যাবত ১২ শত ইউনিট খরচ করলেও আমাকে প্রায় ৪ হাজার ইউনিটের অতিরিক্ত বিল দেয়া হয়েছে। বার বার লিখিত অভিযোগ করলেও নির্বাহী প্রকৌশলী কোন ব্যাবস্থা নেননি।
একই এলাকার গ্রাহক মৃত শাফিয়ার রহমানের ছেলে মমিনুল জানান, আমাদের ২টি ১৫ওয়াটের সিএফএল বাতির বিপরীতে মাসে ৬থেকে ৭ শত টাকা বিল দিচ্ছে। এবিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট অভিযোগ করলে আমাকে মিটারটি পরিবর্তন করতে বলে। আমি নতুন ডিজিটাল মিটার লাগালেও এখনো প্রতিমাসে ৬থেকে ৭ শত টাকা করেই বিল দিচ্ছি। অনেক বলেও এর কোন সুরাহা হয়নি।
এবিষয়ে একাধিক গ্রাহক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিনিধিকে জানান, মিটার পাঠক রবিউল ইসলাম, উত্তম কুমার, শরিফুল ইসলাম, মহিফুল গ্রাহকদের নিকট ভুয়া জরিমানার চিঠি নিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টা, মিটার টেম্পারিংসহ নানাভাবে হয়রানি করলেও নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ আলী কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের অবৈধ আয়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। পুরাতন পিচরেট মিটার পাঠকদের বাদ দিয়ে নতুন পিচরেট মিটার পাঠক নিয়োগে বিপুল নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। অপরদিকে ওই কর্মকর্তার এমন অনিয়মের কারণে সিষ্টেম লস বাড়তে বাড়তে কোন মাসে ৪০% পর্যন্ত ঠেকে। আর এই লসের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে আনতে সাধারণ গ্রাহকের ঘারে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে অসহনীয় মাত্রার ভুতুরে বিল। শুধু তাই নয়, বিগত সময়ে তাদের করা অনিয়ম ও গ্রাহক ভোগান্তির ১৩৪ টি অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনের গণ-শুনানীতে দেয়া হলে সকল অভিযোগের দায় স্বীকার করে ২মাসের মধ্যে তা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিলেও বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ আলী অধিকাংশ অভিযোগের সুরাহা করেন নি বলে একাধিক ভূক্তভোগী জানান।
এ সকল অভিযোগের বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ আলীর নিকট জানতে চাইলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি নিয়ম মাফিক কাজ করছি।