
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :
ঝিনাইদহ জেলা কালচারাল অফিসার জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও নীতি বর্হিভূত কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে ফুঁসে উঠেছে জেলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতৃবৃন্দ। সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দকে উপেক্ষা করে নিজের ইচ্ছামতো তিনি কাজ করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলার একাধিক সাংস্কৃতিক কর্মী অভিযোগ করেছেন, জেলা কালচারাল অফিসার বিগত ৬ বছর ঝিনাইদহে কর্মরত আছেন। এক স্থানে দীর্ঘদিন থাকার সুযোগে নানা অনিয়মও করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাংস্কৃতিক কর্মী অভিযোগ করেন, গত মঙ্গলবার সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে করোনার কারণে অস্চ্ছল ঝিনাইদহে ১’শ সাংস্কৃতিক কর্মীকে ৫ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করা হয়। এই অনুদানে সচ্ছল ও পাওয়ার অযোগ্যদের তালিকাভুক্ত করেছেন কালচারাল অফিসার জসিম উদ্দিন। নিজের ইচ্ছামতো পোষ্য কয়েকজন ও তার পছন্দের লোকদের এ তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছেন তিনি। যে কারণে ঝিনাইদহের প্রকৃত অসচ্ছল সাংস্কৃতিক কর্মীরা সরকারের এই সহযোগিতা পাননি।
বঞ্চিত সাংস্কৃতিক কর্মী বিপ্লব বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যন্ত্র বাজিয়ে আমার সংসার চলে। করোনার কারণে অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় এখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। আর্থিক সহযোগিতার জন্য কালচারাল অফিসারকে বললে তিনি তালিকায় নাম না দিয়ে উল্টো আমাকে বলেছেন, আমি নাকি শিল্পী না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো এক শিল্পী বলেন, অনেক সচ্ছল শিল্পী আছেন, যাদের ঢাকায় ফ্লাট আছে, ঝিনাইদহে বাড়ি আছে। প্রতি মাসে তাদের হাজার হাজার টাকা আয়। তাদের এই তালিকায় নাম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের মত অনেক শিল্পী এই সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এদিকে বিভিন্ন সময় শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের জানানো হয় না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার লাল্টু বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মীদের সহযোগিতার ব্যাপারে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। যারা পাওয়ার যোগ্য তারা বঞ্চিত হয়েছে।
ঝিনাইদহ ঝংকার শিল্পী গোষ্টির প্রতিষ্ঠাতা শান্ত জোয়ার্দ্দার বলেন, কালচারাল অফিসার এখানে চাকুরি করে। কে স্চ্ছল, কে অস্বচ্ছল সে কীভাবে জানবে? তার উচিত ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠনের যারা নেতৃত্ব দেয় তাদের সাথে কথা বলে তালিকা তৈরি করা। কিন্তু তা না করে জসিম উদ্দিন নিজের পরিচিত লোক, যারা তাকে তেল দিয়ে চলেন তাদের নাম অর্ন্তভুক্ত করেছেন। এর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সদস্য একরামুলক লিকু বলেন, ১’শ জনের মধ্যে ৫০ জনের তালিকার বিষয়টি আমি জানি, কিন্তু বাকি ৫০ জনের তালিকা কীভাবে হয়েছে সেটা আমি জানি না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলার ৮৯ জন সংস্কৃতিসেবীদের মাসিক কল্যাণ ভাতা প্রদান করা হয়। এ তালিকাভুক্ত ১০ জন গত মঙ্গলবার দেওয়া বিশেষ অনুদানও পেয়েছেন। তাছাড়াও সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, ছাত্র, সাংস্কৃতিক কর্মী না এমন লোককে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা কালচারাল অফিসার জসিম উদ্দিন বলেন, ৫০ জনের তালিকা জেলা শিল্পকলা একাডেমির এডহক কমিটির মাধ্যমে করা হয়েছে। বাকি ৫০ জনের তালিকা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে পাঠানো হয়েছে। তালিকার মধ্যে সচ্ছল ব্যক্তিদের নাম কীভাবে আসলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে যেভাবে তালিকা দিয়েছে আমি সেভাবেই করেছি। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারব না। তবে আমি সঠিকভাবেই কাজটি করেছি।