
মােঃ জাহিদ হোসেন, দিনাজপুর প্রতিনিধি।।
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নাজমুল হক মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘বর্তমানে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করতে আমাদের ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ বাহিনী বদ্ধপরিকর। পুলিশ বাহিনী অন্যান্য কাজের পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছে। রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি এবং দিনাজপুরের পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাদেরকে সার্বক্ষণিক বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। সে অনুযায়ী আমরা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। আগের তুলনায় ঘোড়াঘাটে মাদকের প্রভাব অনেকাংশে কমে গেছে। নতুন কিছু মাদক ব্যবসায়ী তৈরি হয়েছে। আমরা তাদের তালিকা তৈরি করেছি। তাদেরকে নিয়ে আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে। আমরা ঘোড়াঘাটকে মাদকমুক্ত উপজেলা হিসেবে উপহার দিতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ঘোড়াঘাটে নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযানে ৩ বছরে কোটি টাকার মাদক জব্দ ও প্রায় ৯২টি মামলায় ১৬৪ জন আসামীর মধ্যে ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে। এক সময় মাদক চোরাচালানের অন্যতম রুট হিসেবে ব্যবহৃত এই উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযানে অনেকটা কমেছে মাদকের প্রভাব। অনেক মাদক ব্যবসায়ী স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করলেও, তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন মাদক ব্যবসায়ী ও পা*চারকারী। ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের .৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ বছরে এই থানা এলাকা থেকে প্রায় কোটি টাকার মাদক জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ৪টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ঘোড়াঘাট উপজেলা থেকে মাদক নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে মাদক ব্যবসায়ীরা বার বার গ্রেফতার হলেও, জামিনে বেরিয়ে তারা আবারও মাদক ব্যবসায় ফিরছেন ।’
বিট পুলিশিংসহ অন্যান্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম স্থানীয়দের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে আইন শৃংখলা বাহিনী। গ্রামের সচেতন মানুষ মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়মিত তথ্য দিচ্ছেন বলে দাবি পুলিশের।
পুলিশ, র্যাব ও ডিএনসি থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘোড়াঘাট থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা হয়েছে ৪৮টি। ২০২৪ সালে মামলা হয়েছে ৫২টি। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত ১৬৪ জন আসামির মধ্যে ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পলাতকরাও বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হয়েছে। গত ৩ বছরে হওয়া এসব মামলার মধ্যে র্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) দুটি করে পৃথক ৬টি মামলা করেছে। বাকি মামলা করেছে থানা পুলিশ।
এই ১০০টি মামলার তথ্যে বলছে গত ৩ বছর এই উপজেলা থেকে ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে ১ হাজার ২৫৯ পিস, গাঁজা ১৬ কেজি ৫৫০ গ্রাম, হেরোইন ১ কেজি ৫৫ গ্রাম, চোলাই মদ ৩০০ লিটার, ফেন্সিডিল ২৬৬ বোতল, টাপেন্টাডল ট্যাবলেট ২৩ হাজার ৮৪১ পিস এবং এ্যাম্পল ১ হাজার ৪০০ পিস।
জব্দ করা এ সব মাদকদ্রব্যের স্থানীয় আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় কোটি টাকা।একই সময় এই উপজেলায় ভারতীয় আমদানি নিষিদ্ধ ফেন্সিডিলের স্বর্গরাজ্য থাকলেও, উচ্চমূল্য ও পুলিশের কঠোর অবস্থানে সীমান্তবর্তী হাকিমপুর ও বিরামপুর উপজেলা থেকে ফেন্সিডিল আগের মতো পাচার করতে পারছেন না কারবারিরা। পাশাপাশি রয়েছে সীমান্তে বিজিবির নিরাপত্তা বেষ্টনী। এ সব কারণে এই থানা এলাকায় ফেন্সিডিল ব্যবসায়ী ও সেবীর সংখ্যা অনেকাংশে কম। সেই সুযোগে স্থানীয় মাদকের বাজারে চাহিদা বেড়েছে ইয়াবা ও ব্যথানাশক টাপেন্টাডল ট্যাবলেটের। ২০২৪ সালে জব্দ করা হয় ্অর্ধ কোটি টাকার ২৩ হাজার ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট।
পুলিশের দেয়া তথ্য বলছে, এর আগে গত ২০২২ সালে এই থানা এলাকা প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মাদক জব্দ করেছিল আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থা। সেই তুলনায় ২০২৩ সালে মাদক উদ্ধার হয়েছে অর্ধেকের কম। ২০২৪ সালে মাদক জব্দ, মামলা ও গ্রেফতার হয়েছে বেশি। এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তাদের দাবী নিয়মিত অভিযান এবং নতুন নতুন কৌশলের কারণে মাদক ব্যবসায়ী ও কারবারিরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
তবে অনেক কর্মকর্তার দাবী এ বছর সরকার পতনের পর বিভিন্ন জটিলতার কারণে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যস্ততায় মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি অন্যান্য বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজ করতে হয়েছে তাদেরকে। সে কারণে মাদক উদ্ধার কিছুটা কম হতে পারে।
এ সবের পাশাপাশি গত ২০২৩ সালে মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ১০৩ জন, ২০২৪ সালে ১১২ জন, মাদকসেবীকে আটক করেছে থানা পুলিশ। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে চলা এ সব অভিযানে আটক ২১৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড প্রদান করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

















