আনিছুর রহমান মানিক, ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ
“ইলিশ” শব্দটা বলতেই বাঙালির জিভে জল এসে যায়। ইলিশ মাছ যেমন পুষ্টিগুণে ভরপুর বাঙালির জাতীয় মাছ, তেমনি সুস্বাদু। ইলিশ মাছ স্বাদ ও গন্ধে অনন্য। ইলিশ মাছ একবার খেলেই তার স্বাদ লেগে থাকে বছরের পর বছর। বাঙালির খাবারের পাতে গরম ভাতের সঙ্গে ইলিশের যেকোন তরকারি হলে জমে যেত বেশ। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব বাংলা নববর্ষ। যেটা পান্তা ভাত আর ইলিশ মাছ ছাড়া অসম্পূর্ন। এই দিনে বিত্তবান ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো ইলিশের চেহারা দেখলেও, নিম্ন আয়ের মানুষদের কপালে সেই ভাগ্যটাও হয় না। কিন্তু, দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, বর্তমানে এই ইলিশ মাছ শুধু বিত্তবানদের মুখেই জুটে। সাধারণ মানুষরা প্রায় ভুলেই গেছে এই ইলিশ মাছের স্বাদ কেমন। আগে নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে প্রায় সকলেই এই মাছ খেত। কিন্তু বর্তমানে এই ইলিশ মাছ খাওয়া তো দূরে থাক এর স্বাদই ভুলে গেছে মানুষ।
সারাদেশের ২৯টি জেলার ১৩৪টি উপজেলায় ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। মৎস্য অধিদপ্তর উক্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ২০২০-২০২৪ সাল পর্যন্ত। উক্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হয় ১ হাজার ২৬৬ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা। ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের উৎপাদন বাড়াতে বরাদ্দ করা হয়েছে ২৪৬ কোটি টাকার প্রকল্প। উক্ত প্রকল্পের আওতায় ঝাটকা ও মা ইলিশ আহরণকারী ৩০ হাজার জেলে পরিবারের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ এই ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটি। যার মাধ্যমে জেলে পরিবারদের আর কর্মহীন হয়ে থাকতে হবে না। তারা নিজেদের স্থানেই এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইলিশ মাছ চাষ ও বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে।
এই ইলিশ বাঙালির জাতীয় মাছ। যার মধ্যে নিখুঁতভাবে ভরে আসে প্রোটিন, উচ্চ মাত্রায় ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, নায়সিন, ট্রিপ্টোফ্যান, ভিটামিন বি ১২, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামসহ অন্যান্য ভিাটামিন ও মিনারেলস। ইলিশ মাছ মানুষের হার্ট ভাল রাখে, হার্টের সুস্থতা বজায় রাখে। ইলিশ মাছে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, চোখের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, দৃষ্টিশক্তি কমে আসার সমস্যা দূর করে, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, রক্তনালীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখে, ইলিশ মাছ সামুদ্রিক মাছ হওয়ায় এতে সম্পৃক্ত চর্বি কম থাকে, যার কারণে মানুষের হার্ট ভাল থাকে।
তাই সবদিক বিবেচনা করে দেখলে, দেখা যাবে ইলিশ মাছ আমাদের সকলের জন্য কতটা উপকারী। কিন্তু, এই ইলিশ মাছ আজ আর নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর মুখে রোচে না। ইলিশের তৈরী বহু খাবারের পদ রয়েছে। বাঙালিরা সেই পদগুলো রান্না করতে পারদর্শী। কিন্তু, নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর গৃহিণীদের হাতে স্বাদ থাকলেও, তাদের সাধ্য নেই ইলিশ মাছ কিনে খাওয়ার। বিত্তবান ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষদের মুখে তাও ইলিশের স্বাদ নেওয়ার মতো ক্ষমতা আছে। কিন্তু, নিম্ন আয়ের পরিবারের মানুষরা শুধু ইলিশ মাছ দেখেই তাদের স্বাদ মেটায়। কিন্তু কেনার ক্ষমতা তাদের আর নেই।