মো. সাইফুল্লাহ খাঁন, জেলাপ্রতিনিধি, রংপুর :
রংপুরে হঠাৎ মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় নগরজুড়ে এখন নতুন আতঙ্ক বিরাজ করছে। মশার কা’মড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এখানে বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত বাজার,রেস্টুরেন্ট, রাস্তা, উন্মুক্ত স্থান,পার্ক, খেলার মাঠ, অলিগলি, এমনকি বাড়ির ছাদসহ সর্বত্রই এখন মশা রাজত্ব। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে কয়েল জ্বালিয়েও মশার উপদ্রব থেকে রেহাই পাচ্ছে না অনেকেই। এছাড়াও শহরতলী ও সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকাগুলোতে মশার উপদ্রব চরমে। নিয়মিত ড্রেন,ঝোপঝাড় পরিষ্কার না করা, যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে এবং সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রমের অভাবে মশার বিস্তার প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নগরবাসী।
সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নগরবাসীর নানান ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ পেয়েছে। এ বিষয়ে মেডিক্যাল পুর্বগেইট এলাকার বাসিন্দা ওয়ালীউল্লাহ বলেন, ঋতু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মশার উপদ্রব এত ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যে, মনে হচ্ছে গ’জব এসেছে। মশার কারণে এখানে মানুষের দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। কয়েল ও স্প্রে ব্যবহার করে এমনকি মশারি টাঙিয়েও উৎপাত থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। মানুষের দিনরাত যেন সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে, স্বাভাবিকভাবে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। হঠাৎ মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।
জুম্মাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আকবর আলী বলেন, আমার বাসা সিটি বাজারের পাশেই, এখানে দিনে দুপুরেই মশার উপদ্রব। সন্ধ্যা হলেই বেড়ে যায় আরো কয়েকগুণ। মশার মহামারিতে আমরা শহরবাসী। মশার অত্যাচারে কোথাও স্থিরভাবে ২/৪ মিনিট বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে আমরা মশাবাহিত নানান কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আ’তঙ্কে আছি। বিশেষকরে অসুস্থ,বোবা,শিশু ও বৃদ্ধরা মা’রাত্মক বিপদে আছে। বলা চলে রংপুর নগরী এখন মশার নগরীতে পরিণত হয়েছে।
নগরীর আরসিসি আই স্কুল এন্ড কলেজ এলাকার বাসিন্দা মাসুদার রহমান বলেন, এলাকায় দিনের বেলা হাঁটার সময়ও গায়ে মশা পড়ে,বাইক চালানো অবস্থায় মশা ধরে। চারিদিকে ময়লা আবর্জনার স্তুপ, দুর্গন্ধে পথচলতেও কষ্ট হচ্ছে। দুর্গন্ধ আর মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ। মশক নিধনে সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি।
পার্কের মোড় এলাকার শিক্ষার্থী সুরভী আক্তার বলেন, সন্ধ্যার পর মশার কামড়ে ঠিকভাবে লেখাপড়া করা যায় না। ঝাঁকে-ঝাঁকে মশা ধরে। কামড় দেয়ার পর চুলকায়, ফুলে যায় এবং জ্বলে। কষ্টের শেষ নেই, এই পরিস্থিতিতে পড়াশোনাও ঠিকমতো করতে পারছি না।
দর্শনা এলাকার বাসিন্দা গোলজার হোসেন বলেন, দিনের বেলায় মশার জ্বালায় থাকা যায় না। মশার এত উৎপাত এর আগে কখনই দেখিনি। যেখানে যাই, সেখানেই অকল্পনীয় মশা। অফিস বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্রই মশার উৎপাত। এখানে এমনও ড্রেন আছে যার পাশ দিয়ে দু’র্গন্ধে হাঁটা যায় না। তবে রংপুরের জনগণ আজ মশার অত্যাচারে ছটফট করছে। আমরা আর সহ্য করতে পারছি না। সিটি কর্পোরেশনের কি কোনো দায়িত্ব নেই।
এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজনীতিবীদ ও সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ বলেন, প্রতি বছর শীত মৌসুমে মশার উপদ্রব বাড়ে। এই সময়ে ম্যালেরিয়াসহ নানাবিধ রোগ বেড়ে যায়। এবার শীত চলে যাওয়ার পরও এখন পর্যন্ত মসক নিধনে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের উদাসীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, আগামী সপ্তাহে মশা নিধন সপ্তাহ হিসেবে ৩৩ টি ওয়ার্ডজুড়ে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।