১৫ মামলায় আসামী ৬০ সাংবাদিক
ক্রাইম পেট্রোল ডেস্কঃ
রংপুরে গণমাধ্যম কর্মীদের উপর রংপুর পুলিশ কমিশনারের দমনপীড়নে অতিষ্ঠ মূল ধারার সাংবাদিকরা। তার ইন্ধনে গত সাড়ে ৩ বছরে রংপুরের সিনিয়র সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা হয়েছে এবং এতে আসামী করা হয়েছে সিনিয়র সাংবাদিক, পত্রিকার সম্পাদক ও টেলিভিশনের সাংবাদিকসহ ৬০ জনকে।
তথ্য মতে, রংপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি সংগঠন, বিশেষত স্থানীয় সংবাদকর্মীদের বিস্তর লেখালেখির তৎপরতায় প্রতিষ্ঠিত হয় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। প্রতিষ্ঠার মাত্র সাড়ে ৩ বছরে ৬০ জনেরও বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে মহানগরীর ৬টি থানাসহ আদালতে। তাদের বিরুদ্ধে চু’রি,ছি’নতাই, চাঁ’দাবাজি, হ’ত্যাচেষ্টা ও দা’ঙ্গাসহ সামাজিক নানা অ’পরাধের অভিযোগে মামলা নেয়া হয় কোন রকম তদন্ত ছাড়া।
স্থানীয় সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, রংপুরের সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখার কারণে তিনি একটি প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক সংগঠনকে দুইভাগে বিভক্ত করে দিয়ে বসে বসে মজা নিচ্ছেন। তার প্রতিফলন ঘটে রিপোর্টার্স ক্লাব,রংপুরে। ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটিতে গত ৪ বছর আগে ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে কার্যকরী কমিটি গঠিত হয়। সেই নির্বাচনে পরাজিত ব্যক্তিরা আশ্রয় নেয় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে। এরপর থেকে শুরু হয় রংপুরের প্রগতিশীল সাংবাদিকদের সংগঠনকে বিতর্কিত করার প্রতিযোগিতা। সেকারণে গত ৩ বছর আগে নির্বাচিত কমিটি অভিষেক অনুষ্ঠান করতে পারেনি। পরাজিত ব্যক্তিদের সহযোগিতা করতে এ পর্যন্ত ১৫টি মামলা হয়েছে। এই মামলায় রংপুরের মূল ধারার প্রায় ৬০ জন সাংবাদিককে আসামী করা হয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহা. আব্দুল আলিম মাহমুদ গত ৪ বছর আগে রংপুরে যোগদান করেন। তিনি যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে তেলবাজ সাংবাদিকদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে অনৈতিক স্বার্থ হাসিল করছেন। তাঁর শ্বশুর বাড়ি রংপুরে হওয়ায় রাজনৈতিক ব্যক্তির মত কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। তিনি মানবতার বন্ধন নামে একটি সংগঠনও খুলেছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে নিজের সুবিধায় পক্ষ নিয়ে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এই কারণে রংপুরে এ পর্যন্ত ১৫টি মামলা হয়েছে। এতে রংপুরের মূল ধারার ৬০ জন সাংবাাদিককে আসামী করে হ’য়রানি করা হচ্ছে।
মামলার তথ্য অনুযায়ী, যমুনা টেলিভিশনের রংপুরের সাংবাদিক সরকার মাজহারুল মান্নানের বিরুদ্ধে ৩ বছরে ৪টি মামলা। ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের রংপুর প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম রাজুর বিরুদ্ধে ৩টি মামলা। মামলা নং- ২৩/২১, ৮৩/৬৬০, দৈনিক দাবানলের সম্পাদক খন্দকার গোলাম সরওয়ার অনুসহ ওই পত্রিকার ৪ জনের নামে গত বছর মামলা হয়েছে। সময় টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি রংপুরের রতন সরকারের নামে ৩টি মামলা হয় যার নং ৮২/৬৬০। তার মধ্যে একটি মামলার ফাইনাল হয়েছে বাকি দুটি চলমান। একাত্তর টেলিভিশনের বিভাগীয় রংপুর প্রতিনিধি শাহ বায়েজিদ আহম্মেদের নামে ৩টি মামলা। যার মধ্যে ৫৫৫/১৯, ৫৭১/১৯, ৮২/৬৬০। আজম পারভেজ, গাজী টিভির রংপুর প্রতিনিধি, এশিয়ান টিভির সাংবাদিক বাদশা ওসমানী, দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার হালিম আনছারী, বাংলা টেলিভিশনের আরাফাত হোসেন বাধন, দৈনিক প্রথম খবরের নির্বাহী সম্পাদক তাজিদুল ইসলাম লাল, রবিন চৌধুরী রাসেল, নারী সাংবাদিক শরিফা বেগম শিউলী প্রমুখ। এছাড়াও এসএটিভির সাবেক ব্যুরো প্রধান বর্তমানে দৈনিক ঢাকা টাইমস এর ব্যুরো প্রধান রংপুর প্রেসক্লাববের সদস্য রেজাউল ইসলাম বাবুকে গেল ২২ জানুয়ারি ২০২২ স’ন্ত্রাসী কর্তৃক অ’পহরনের হু’মকিসহ তাকে হ’ত্যার হু’মকি দেয়ার ঘটনায় থানায় জিডি করা হয় যার নং- ১৪৯৬/২২-০১-২২। অপর একটি জিডি নং ১৬৬৫/২৭-৩-২২। এছাড়াও আরও কয়েকটি জিডি ও মামলার বিষয়ে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেননি তিনি।
সূত্র মতে, মামলাগুলোর বাদী, স্বাক্ষী বা আসামীরা কেউই ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও শুধুমাত্র হয়রানির উদ্দেশ্যে তাদের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি তিনি রংপুরের মূল সংগঠন রিপোর্টার্স ক্লাব রংপুরের আয়োজনে রংপুর চেম্বার মিলনায়তনে প্রধান অতিথি থেকে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ নিয়ে আলোচনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন। এর ক’দিন পরই আরেকটি পক্ষ একটি অস্থায়ী ভাড়া রুম নিয়ে সেখানে রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব খুলে বসে। সেখানেও তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন। এ ঘটনায় রংপুরের সাংবাাদিক মহল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে রংপুরের মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহা. আব্দুল আলীম মাহমুদ এর সাথে যোগাযোগের জন্য তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।