মো. সাইফুল্লাহ খাঁন, জেলাপ্রতিনিধি, রংপুর :
রংপুর মহানগরীর তাজহাট থানাধীন ৩১ নং ওয়ার্ডের পূর্ব নাজির দিগর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল খালেক , পেশায় মুদির দোকানদার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে পথ চলা এই মানুষটির শেষ ইচ্ছা আগামী প্রজন্মের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রকাশ ঘটিয়ে আলোকিত সমাজ গড়া। সেই উদ্যেশ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নিজ অর্থায়নে এলাকায় নির্মাণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত একটি ম্যুরাল যা ২০২০ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে উদ্বোধন করা হয়। পুর্ব নাজির দিগর এলাকায় নির্মিত এই ম্যুরালটি রাস্তার মোড়ে হওয়ায় মোড়টির নামকরণ করেন ‘বঙ্গবন্ধুর মোড়’ যা এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় বঙ্গবন্ধুর মোড় হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এছাড়াও একটি শহীদ মিনার, বঙ্গবন্ধুর নামে স্পোর্টিং ক্লাব ও পাঠাগার নির্মাণের ইচ্ছা তার। জায়গা জমি অর্থ কোনোটির অভাব না থাকলেও অভাব রয়েছে উপযুক্ত নির্দেশনার। আব্দুল খালেক কোনোরকম নিজের নামটাই লিখতে পারেন। আওয়ামী লীগের সমর্থক আব্দুল খালেকের হৃদয়জুড়ে বঙ্গবন্ধুর জন্যই ব্যাকুলতা সারাক্ষণ। তাই বঙ্গবন্ধুর আলোয় সমাজকে আলোকিত করার চেষ্টায় অবিরাম চিন্তা করেন। কিন্তু বিগত দুই বছরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাড়া না পাওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আব্দুল খালেকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে গন্ডগোলের সময় চারিদিকে বঙ্গবন্ধুর নাম শুনি। ওই সময় বঙ্গবন্ধু আসলেন রংপুরের কালেক্টরেট ময়দানে। তখন আমার বয়স ১৪ বছর। দলে দলে মানুষ সেই ময়দানে যাচ্ছিল, তাদের পেছন পেছন আমিও সেখানে যাই। বিশাল ময়দান লোকে লোকারণ্য।ইটের ওপর ইট দিয়ে স্তুপ বানিয়ে তার ওপর দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকে দেখার সৌভাগ্য হয়। বঙ্গবন্ধুর তেজি ভাষণ শোনা এবং তাঁকে দেখার পর থেকে তাঁর প্রতি গভীর ভালবাসার সৃষ্টি হয়। আজ পর্যন্ত আমার হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর সেই চেহারা ভেসে ওঠে। তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুর জন্য কিছু করার ইচ্ছা আমার।
দুঃখ্যভরাক্রান্ত হৃদয়ে তিনি বলেন, স্বাধীনের পর দেশে খুব দুর্ভিক্ষ ছিল, দুধ বিক্রি করে সংসার চালাতাম, অভাব থেকে বাঁচার জন্যে খড়ি ব্যাচি বাঁশ ব্যাচি কত কষ্ট যে করেছি! সেই দুঃখ্য আর নাই। এখন অনেক ভালো আছি। এখন বঙ্গবন্ধুর জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি, অর্থ ব্যয় করার শক্তি পাই, মূর্খসূর্খ মানুষ আমি তেমন কিছু বুঝি না। কীভাবে কী করতে হবে কারও পরামর্শ পাই না। নেতা তো দূরের কথা কোন কর্মীকেও পাশে পাই না। ম্যুরালের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের গাড়ির গিয়ার আরও বেড়ে যায়! ম্যুরাল উদ্বোধনের সময় শাফিয়ার রহমান শফি ভাই এসে উদ্বোধন করে অনেক উৎসাহ দিয়া গেছে, আর কেউ উৎসাহ দেয় নাই। ওই অনুষ্ঠান থেকে আমার এলাকার নেতারা এখানে দাঁড়ান না। অনেক নেতার কাছে গেছি তারা আমার মত লুঙ্গি পড়া মানুষকে দামই দিবার চায় না। আমার সবচেয়ে বড় কষ্ট, এরা যে বঙ্গবন্ধুর দল করে, এরা কি বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস জানে? আমি তো দল করি না বঙ্গবন্ধুর ভক্ত, নৌকায় ভোট দেই। আমার বড় আশা প্রত্যেকটা উৎসবে এখানে মাইকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনবো, মানুষ বঙ্গবন্ধুকে জানবে, শহিদ মিনার বানাবো এখানে মানুষ ফুল দিবে, পাঠাগার বানাব ছেলেরা এসে বই পড়বে, এইগুলো দেখার ইচ্ছা করে। আমার এই স্বপ্নগুলো করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর মহুবার রহমান বলেন, খালেক ভাই কষ্টবষ্ট করে মানুষ হয়েছেন, তিনি টাকা জমিয়ে জমিয়ে এইসব কাজ করেছেন। আজ এই বঙ্গবন্ধুর মোড়কে দশটা গ্রাম চিনছে তার নিজের প্রচেষ্টায়। আমরা এলাকাবাসী চাই এখানে প্রত্যকটি দিবস পালন করা হোক। স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা এখানে আসা যাওয়া করলে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আমরা আরও ইতিহাস জানতে পারব।
স্থানীয় কৃষক সুমন মিয়া বলেন, ইনি নিজে নিজেই এই মহৎ কাজগুলো করছেন। নিজের টাকায় বিভিন্ন উৎসবে মাইক ভাড়া করে এনে আমাদেরকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনান, ফুল কিনে এনে আমাদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানান। দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের উৎসাহ দেওয়া উচিত। আমরা চাই বঙ্গবন্ধুর মোড়কে সবাই চিনুক এবং জানুক, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাক সবার অন্তরে।
৩১ নং ওয়ার্ডের মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. জামাল উদ্দিন জানান, আমি বঙ্গবন্ধু ম্যূরালে গিয়েছিলাম, আগামীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানগুলো বঙ্গবন্ধুর মোড়ে পালন করবো।
এ বিষয়ে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শাফিয়ার রহমান শফি’র সাথে মূঠোফোনে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন বলে জানিয়েছেন।