মো. সাইফুল্লাহ খাঁন, জেলাপ্রতিনিধি, রংপুর :
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলীর ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতার উপজেলা যুবলীগের তিনজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কৃতরা হলেন ঘোড়াঘাট উপজেলার আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম (৪২) ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য আসাদুল ইসলামকে (৩৫) দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়াও ঘোড়াঘাট সিংড়া ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা মাসুদ রানাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মাসুদ রানাকে দিনাজপুর জেলা যুবলীগ এবং বাকি দুইজনকে কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শুক্রবার দিনাজপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ পারভেজ সাংবাদিকদের জানান, স্থানীয়রা তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হয়রানি, মাদক সেবনের অভিযোগ আনায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, তাদেরকে আর কখনও আওয়ামী লীগের কোন অঙ্গসংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হতে দেয়া হবে না।
দিনাজপুরে ঘোড়াঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম এবং তার বাবার ওপর হামলার ঘটনায় যে চারজন সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে দুইজন সরাসরি হামলায় সম্পৃক্ত ছিল বলে জানিয়েছেব র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কর্ণেল আশিক বিল্লাহ।
বুধবার মধ্যরাতে সরকারি বাসভবনে ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা খানম (৩৫) ও তার বাবা ওমর আলীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পর পর তদন্তে নামে র্যাব ও পুলিশের যৌথ দল। বৃহস্পতিবার দিনাজপুর ডিবি গোয়েন্দা পুলিশ ইউএনও’র বাসভবনের নৈশ প্রহরী পলাশকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। এরপর গোপন খবরের ভিত্তিতে ঘোড়াঘাট থেকে জাহাঙ্গীর ও মাসুদ রানা নামে আরও দু’জনকে আজ ভোরে সন্দেহভাজন প্রধান আসামী আসাদুল হককে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি সীমান্ত এলাকা থেকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নৈশ প্রহরী পলাশ ছাড়া বাকি তিনজনকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করা হয়। তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঘটনার তদন্তে এর মধ্যে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে এরই মধ্যে রংপুর বিভাগের ৫৮টি উপজেলায় ইউএনওদের নিরাপত্তায় ১০ জন করে অস্ত্রধারী আনসার সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এই ঘটনার পেছনে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
শুক্রবার এ ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে ঘোড়াঘাট থানায় মামলা করেন ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ভাই।
হামলার পর গতকাল ভোরের দিকে ওয়াহিদা খানম এবং তার বাবা ওমর আলী শেখকে উদ্ধার করে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে ওয়াহিদা খানমকে রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল ভর্তি করা হয়।
পরে ওয়াহিদা খানমের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। গত রাতে প্রায় দুই ঘণ্টা অস্ত্রপচারের পর মিসেস খানমের জ্ঞান ফিরেছে বলে জানান হাসপাতালটির বিভাগীয় প্রধান জাহেদ হোসেন।
অস্ত্রপচার সফল হলেও মাথায় ৯টি গুরুতর জখম এবং একপাশে খুলি ভেঙে যাওয়ায় পরিস্থিতি পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত নয় বলে তিনি জানিয়েছেন। তার একপাশ অবশ হয়ে গেছে। অন্তত ৭২ ঘণ্টা তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন জাহেদ হোসেন।
তিনি বলেন, “তাকে যখন এখানে আনা হয়, কোন জ্ঞান ছিল না। পরে সিটি স্ক্যানে দেখতে পাই যে খুলির হাড় ভেঙে মগজের ভেতরে ঢুকে গেছে। তাকে ভোতা কোন অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। পরে মেডিকেল বোর্ড অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেয়। আজকের সিটি স্ক্যান রিপোর্ট খুব ভালো এসেছে। বিকেলে আইসিইউ-তে আমার রোগীর সাথে কথা হয়েছে। উনি তার স্বামীর সাথেও কথা বলেছেন। স্বামীকে চিনতে পেরেছেন।