
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :
ঝিনাইদহের চিত্রানদীর তলদেশ ভরাটের কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে এখন সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে বর্ষা ছাড়াও বছরের অন্য কোন সময় পানি থাকে না। আর কিছু কিছু জায়গায় পানি থাকলেও খুবই কম পরিমাণে, যা নদীর প্রবাহকে ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। প্রাকৃতিকভাবে দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে নদীতে পলি পড়ে নদীর এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আবার নদী দখলদাররা নদীর দুই পাড় দখল করে অবৈধ স্থাপনা, পুকুর তৈরী, নিয়মিতভাবে গৃহস্থালির বর্জ্য, বিভিন্ন নালা-নর্দমার বর্জ্য, বৃষ্টির পানি গড়িয়ে আসা নানান আবর্জনা, দোকানপাটসহ গরু- ছাগল গোসল করানোর সময় পাড় ভেঙ্গে নদীকে এক প্রকার হত্যা করা হয়েছে। একটা সময় ছিল নদীর বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত জোয়ার-ভাটা হত। তখন প্রায় ৮০ হাজার একর জমিতে কৃষকরে সেচ কাজের সমাধান হত। পানির কোন অভাব হত না। বর্তমানে নদীতে পানি না থাকায় উৎপাদন কাজে সেচেরকর্ম ব্যাহতসহ প্রায় ১০ লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। যদিও প্রাকৃতিকভাবে নদী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবুও এই প্রতিকূল অবস্থার জন্য মানুষের সৃষ্টি কারণ মুখ্যভাবে দায়ী বলে বিশেষব্যক্তিরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। যার কারণে নদী হারিয়েছে তার অতীত ঐতিহ্য এবং পরিণত হয়েছে মরা নদীতে। ১৯২৭ সালের মাত্র চিত্রের তথ্যনুযায়ী, চিত্রা নদীটি কুষ্টিয়ার গড়াই নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে চুয়াডাঙ্গার দর্শাণার পাশ দিয়ে ঝিনাইদহ সদর, কোটচাঁদপুর-কালিগঞ্জের মধ্যদিয়ে ১৭০ কিলোমিটার নদীটি, ৮টি জেলা ২৬টি থানা অতিক্রম করে রূপসা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এক সময়ের উত্তাল প্রমত্ত চিত্রা নদী জীববৈচিত্র্য হারিয়ে নিজেও যেতে বসেছে। সচেতনব্যক্তিদের অভিমত, গত শতকের ৬০ এর দশকে দাতা সংস্থার পরামর্শ ও অর্থায়নে কিছু জলকাঠামো নির্মাণ করা হয়। যেগুলোর সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব পরিলক্ষিত হয় ঝিনাইদহ অঞ্চলের নদীগুলোর ওপর। যার ভয়াবহতার কবল থেকে বাদ পড়েনি এক সময়ের প্রমত্ত চিত্রা। এই বাঁধগুলোই নদীর প্রবাহমাণ ও গতিময়তাকে গ্রাস করে শীর্ণ দশায় পরিণত করেছে। অতীতে যে নদীতে লঞ্চ, স্টিমার ও জাহাজ চলতো, আজ সেখানে আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। যদিও নদীটি সংস্কারের দাবিতে ও অবৈধ দখলমুক্ত করতে জেলাবাসীসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আন্দোলন- সংগ্রাম করছে। এরই মধ্যে নদীকে নদীটির পশ্চিমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে চুয়াডাঙ্গার মধ্যে ২৬ কিলোমিটার খননের কাজ শুরু হয়েছে। ফলে, জেলাবাসীও তাদের অংশে খননের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী সরওয়ার জাহান সুজন বলেন, নদীটি খননের বিষয়ে ড্রাফট করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুতই কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।