crimepatrol24
২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, এখন সময় রাত ৯:২৪ মিনিট
  1. অনুসন্ধানী
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইটি বিশ্ব
  5. আইন-আদালত
  6. আঞ্চলিক সংবাদ
  7. আন্তর্জাতিক
  8. আফ্রিকা
  9. আবহাওয়া বার্তা
  10. আর্কাইভ
  11. ইউরোপ
  12. ইংরেজি ভাষা শিক্ষা
  13. উত্তর আমেরিকা
  14. উদ্যোক্তা
  15. এশিয়া

কুমিল্লার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে মাসিক সমন্বয় সভার নামে ব্যাপক চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির অভিযোগ

প্রতিবেদক
মো: ইব্রাহিম খলিল
সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২ ২:২৬ অপরাহ্ণ
কুমিল্লার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে মাসিক সমন্বয় সভার নামে ব্যাপক চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির অভিযোগ

কামরুল হক চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে মাসিক সমন্বয় সভা করার নামে ( জানামতে যা দেশের অন্য কোন জেলায় হচ্ছে না) জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিভিল সার্জনের এই নিরব চাঁদাবাজি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টির সৃষ্টি করেছে।

এছাড়াও,সিভিল সার্জনের কাছে মুঠোফোনে তার অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য জানতে চাইলে তার অফিসে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে বলেন এবং সাংবাদিকের চেহারা দেখার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।

এদিকে, সরকারি কোনো নির্দেশনা না থাকা সত্ত্বেও সিভিল সার্জনের মর্জিমাফিক এ ধরনের সভা ও অনুষ্ঠান করা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

অনুসন্ধানে জানা গেছে , উপজেলায় উপজেলায় গিয়ে মাসিক সমন্বয় সভা করার কোনো সরকারি নির্দেশনা এবং বরাদ্দ  না থাকলেও সিভিল সার্জনের মৌখিক নির্দেশে এ পর্যন্ত কুমিল্লার মোট ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৩ (তেরো) টি উপজেলায় সংশ্লিষ্ট ইউএইচ অ্যাণ্ড এফপিওগণ তাদের অধীনস্থ ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য সহকারীসহ অন্যান্য কর্মচারীদের কাছ থেকে ক্ষেত্র বিশেষে ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায়পূর্বক মাসিক সমন্বয় সভার ব্যয়ভার বহন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে জেলাজুড়ে বিভিন্ন মহলে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, সম্প্রতি দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. হাবিবুর রহমানকে কুমিল্লা জেলার শ্রেষ্ঠ আরএমও হিসেবে শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত করেছেন সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন। অথচ ডা. হাবিবুর রহমান শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার কিছুদিন পূর্বে তার সহকর্মী ডা. ওসমান গনির সাথে অসদাচরণ করেন। এক পর্যায়ে তিনি ডা. ওসমান গনিকে জুতাপেটা করতে বলেন এবং দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর প্রধান সহকারী মনির হোসেনের অফিসে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার কথাও বলেন। এ বিষয়ে গত ২ এপ্রিল ২০২২ খ্রি. তারিখে ডা. ওসমান গনি দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। উক্ত লিখিত অভিযোগের বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করে অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর করেন এন এস এন মোসা. নাছিমা বেগম, মোসা. জরিনা আক্তার, রোকেয়া আক্তার, মোসা. আকলিমা আক্তার স্টোর কিপার (ভারপ্রাপ্ত) মো. সাহিন খান এবং এমটি (ডেণ্টাল) মো. জয়নাল আবেদীন।

আচ্ছা, সম্প্রতি আপনি আপনার সহকর্মী ডা. ওসমান গনির সাথে অসদাচরণ করেছেন এবং এক পর্যায়ে তাকে জুতাপেটা করতে বলেছেন। এছাড়া আপনার দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর প্রধান সহকারী মনির হোসেনের অফিসে আগুন লাগিয়ে দিতে বলেছেন। একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে আপনি কি এমনটা করতে পারেন এমন প্রশ্নের জবাবে আরএমও ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ আসলে এটা ঠাট্টাচ্ছলে বলা হয়েছে।’

এছাড়া ডা. মো. হাবিবুর রহমান স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় এবং ৭/৮ বছর ধরে একই স্টেশনে কর্মরত থাকায় তার বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রভাব খাটানোরও অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে আরএমও ডা. হাবিবুর রহমান এর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি এই পুরস্কারের যোগ্য নই। স্যার   (সিভিল সার্জন) কেন আমাকে এই পুরস্কার দিলেন বিষয়টি নিয়ে আমি নিজেও বিব্রত।’

উপজেলায় উপজেলায় গিয়ে দিনে-রাতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে মাসিক সমন্বয় সভা করার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক  তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর এক কর্মকর্তা জানান, ‘মাসিক সমন্বয় সভা করার জন্য সরকারি কোনো নির্দেশনা ও বরাদ্দ নেই। স্টাফদের কাছ থেকে টাকা তুলে এই সভা সম্পন্ন করা হয়েছে।’

সরকারি কোন নির্দেশনা না থাকা সত্ত্বেও সিভিল সার্জন এটি কীভাবে করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে আমি এটা বলতে পারবো না।’

দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর এক কর্মচারীর নিকট এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,  ‘উপজেলা পর্যায়ে মাসিক সমন্বয় সভা করার জন্য সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। স্টাফদের কাছ থেকে টাকা তুলে এই সভা করা হয়েছে।’

কতো টাকা করে নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নার্সদের কাছ থেকে ২-৩ হাজার টাকা করে। ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীদের মধ্যে  কে, কতো টাকা করে দিতে হবে তা ভাগ করে দেওয়া আছে।’

আপনি টাকা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনিও টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু কতো টাকা দিয়েছেন সে বিষয়ে তিনি মুখ না খুলে শুধু মুচকি মুচকি হাসতে থাকেন।

এবিষয়ে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদ আল হাসান কোভিড আক্রান্ত হওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া যায় নি।

হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর এক কর্মচারী বলেন, “মাসিক সমন্বয় সভা করার জন্য স্টাফদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। আ-ও দেওর-বাউরের নাম হগলতে অই জানে, কেউ নাম লয়না।”

হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুস ছালাম শিকদার জানান, ‘উপজেলা পর্যায়ে মাসিক সমন্বয় সভা করার জন্য সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। আর নাচ-গানের বিষয়টা আমরা নিজেরাই করেছি। কারো কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে বা চাপ প্রয়োগ করে করা হয়নি। সব ইউএইচ অ্যাণ্ড এফপিওরা মিলেই করেছি।’

মেঘনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জালাল হোসেনের কাছে উপজেলা পর্যায়ে মাসিক সমন্বয় সভা করার জন্য সরকারি কোনো বরাদ্দ আছে কি-না  জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। আমরা স্টাফদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিয়েই সভাটা করেছি। আমরা শুধু সামান্য  খাবারের আয়োজন করেছি। কিন্তু আমাদের এখানে কোনো নাচ-গানের আয়োজন করা হয়নি।’

তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সরফরাজ হোসেন খান বলেন, ‘আমি চ্যালেন্জ করে বলতে পারবো মাসিক সমন্বয় সভা করার জন্য  আমার কোনো স্টাফের কাছ থেকে  টাকা-পয়সা নেওয়া হয়নি। আমাদের তো অনেক সোর্স আছে, ঔষধ কোম্পানি আছে। এটা কোন ব্যাপার হলো? একজন মেহমান আসলে তাকে কি আপ্যায়ন করতে হবে না? এটা একা করতে গেলে বার্ডেন হয়ে যায়। সবাই পার্টিসিপেট করেই দিতে হয়। কেউ টাকা-পয়সা দিয়ে যদি কমপ্লেইন করে, তাহলে তো সমস্যা।,

তিনি আরও বলেন, ‘হোমনার সভা রাত ৯ টা পর্যন্ত এবং বুড়িচং এ রাত ৮/৯ টা পর্যন্ত চলেছে।’

উপজেলা পর্যায়ে মাসিক সমন্বয় সভা করার সরকারি কোনো নির্দেশনা ও বরাদ্দ আছে কি-না জানতে চাইলে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন জানান, ‘সরকারি কোনো নির্দেশনা ও  বরাদ্দ নেই। সংশ্লিষ্ট ইউএইচ অ্যাণ্ড এফপিওরা স্ব-উদ্যোগেই এই সভার আয়োজন করেছেন।’

উল্লেখ্য, কুমিল্লার সিভিল সার্জন ও ডাক্তারদের দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রা’ণনাশের হু’মকির শিকার হন ক্রাইম পেট্রোল২৪. কম এর বিশেষ প্রতিনিধি কামরুল হক চৌধুরী। এ ঘটনায় তিনি মাই টিভি’র দাউদকান্দি প্রতিনিধি মো. জহিরুল ইসলাম জিল্লু, কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন, ডা. শহিদুল ইসলাম শোভন ও ডা. মো. হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দাউদকান্দি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী ( জিডি) করেন। যার নং- ১০৯৩, তারিখঃ ২৩/০৯/২০২২ খ্রি.

আরও উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি ২০২২ খ্রি: তারিখে একমাত্র ‘ক্রাইম পেট্রোল ২৪.কম’ পত্রিকায় “কুমিল্লার সিএস বললেন করোনার কোনো বরাদ্দই আসেনি, লাইন ডিরেক্টর বললেন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ওই সংবাদের ভিত্তিতেই  গত ২৬/০১/২০২২ খ্রি: তারিখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক ডা. ফরিদা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে (যার স্মারক নং স্বা: অধি:/বাজেট/২০২১-২০২২/৩৪০৩)  কোভিড সংক্রান্ত অর্থ কোন্ কোন্ খাতে ব্যয় করা হয়েছে তার উপযুক্ত প্রমাণকসহ ২৮/০১/২০২২ খ্রি: তারিখের মধ্যে মন্ত্রণালয়কে অবহিতকরণের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিলো।

Share This News:

সর্বশেষ - লাইফ স্টাইল