সৈয়দ আনোয়ার,হোমনা,কুমিল্লা :
কুমিল্লার হোমনার আসাদপুর ইউনিয়নের কলাগাছিয়া (চারকুড়িয়া) গ্রামে প্রায় ৮ মাস আগে ধর্ষণের শিকার হওয়া, দরিদ্র পরিবারের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী ১১ বছরের সেই কিশোরী মেয়েটি সন্তান প্রসবের জটিলতায় মারা গেছেন বলে পরিবারের তথ্যমতে জানা যায়।
গত মঙ্গলবার ৯ মাসের গর্ভবতী মেয়েটির প্রসব ব্যাথা উঠে। প্রথমে হোমনা সদরে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার, পরীক্ষা- নিরীক্ষা শেষে জটিল অবস্থা দেখে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও দরিদ্র পিতা টাকার অভাবে,মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে আসতে বাধ্য হন। কিন্তু মেয়েটির আর্তচিৎকার আর বেঁচে থাকার আকুতি বাবা মায়ের মন হাউমাউ করে কাঁদে। পাগলের মতো টাকার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে ছোটে যায় ধর্ষকের পরিবারের কাছেও ।আকুতি জানায় মেয়েকে বাঁচাতে। কিন্তু ধর্ষকের পিতা-মাতা গাল-মন্ধ করে তাড়িয়ে দেয়। কোথাও কোন টাকার ব্যবস্থা করতে না পেরে পরে থাকে মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে।
পরে কিছু টাকা যোগাড় করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার রোগির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সিজারের সিদ্ধান্ত নেন।পরে সিজারের মাধ্যমে একটি পূত্র সন্তানের জন্ম হলেও মেয়েটির অবস্থা হয়ে পড়ে আশঙ্কাজনক। শুরু হয় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা।ডাক্তারের পরার্মশ আইসিইউতে নেয়ার।
কিন্তু টাকার অভাবে দরিদ্র পিতা নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও পাষাণে বুক বেঁধে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি চলে আসতে বাধ্য হন। তখনও জ্ঞানহীন অবস্থায় মেয়েটি বেঁচে থাকার লড়াই করছিল মৃত্যুর সাথে।
বাড়িতে আসার পর বুধবার রাত আনুমানিক ৩ টার দিকে এই সমাজ ও মানুষের প্রতি ঘৃনা জানিয়ে চির বিদায় নেন কিশোরী। এমনটাই জানালেন মেয়েটির এক নিকটাত্মীয়।
সরেজমিনে চারকুড়িয়া গ্রামে কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মেয়েটির নিথর দেহ খাটিয়ায় রাখা হয়েছে উঠানের এক দিকে। আশে-পাশে শত শত নারী-পুরুষের ভীড়, সকলের চোখে জল মুখায়বে প্রতিবাদের ভাষা স্পষ্ট। মা,বোনের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে চার পাশ। ততক্ষণে লাশ দাফনের প্রক্রিয়ায় আইনি কাজে বাবার ছোটাছুটি। চরম নিষ্ঠুরতার ধর্ষণের শিকার হয় ১১ বছরের এই কিশোরী। ৮ টি মাস একটি সন্তান গর্ভে ধারণ করে প্রচন্ড মাতৃত্বের যন্ত্রনা ভোগ করে অবশেষে চলে গেল না ফেরার দেশে।বিচারের ভার দিয়ে গেল বিবেকবানের বিবেকের দরজায়।
ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, গত ০৫,০৩,২০১৮ ইং তারিখ রাতে কলাগাছিয়া(চারকুড়িয়া) গ্রামের মোঃ জুলহাস মিয়ার কিশোরী মেয়ে তার প্রতিবেশী চাচার বাড়িতে টিভিতে স্টার জলসার নাটক দেখতে যায়। নাটক দেখে আনুমানিক রাত ৯ টা সময় বাড়ি ফেরার পথে একই এলাকার প্রতিবেশী মোঃ তছর মিয়ার বিবাহিত লম্পট ছেলে জাকির হোসেন (২৬) ধনু মিয়ার নির্জন কাঠ বাগানে একা পেয়ে জোর পূর্বক মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে।মেয়েটি তখন যন্ত্রনায় চিৎকার করতে চাইলেও জাকির তাকে প্রাণে মেরে ফেলাসহ নানা ধরনের ভয় ভীতি দেখায়।বুদ্ধি প্রতিবন্ধি মেয়েটি ভয়ে বিষয়টি গোপন রাখে।
ঘটনার শিকার কিশোরীর ভাবী মর্জিনা বেগম জানান,হঠাৎ মেয়েটির শারীরিক পরিবর্তন দেখে আমার মনে সন্দেহ জাগে। আমি তাকে নীরবে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেও সে ভয়ে কিছু বলতে চায়না। আমি তাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দিয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে জাকির কর্তৃক জোর পূর্বক ধর্ষনের শিকার হয়েছে বলে জানায়। পরে ডাক্তারী পরীক্ষা করিয়েও দেখি মেয়েটা অন্তঃসত্তা। মেয়েটি অনেকটাই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি। মেয়েটির মা,বাবাও সহজ সরল,কী করবে বুঝতে না পেরে বিষয়টি জাকিরের মা-বাবাকে জানালেও উনারা গুরত্ব না দিয়ে বরং ভয় ভীতি দেখায়।
এই বিষয়ে ওয়ার্ড মেম্বার শিব্বির আহামদের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাটি আমি শোনার পর প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি মেয়েটি অন্তঃসত্তা। সাথে সাথেই ওসি স্যারকে ফোন দিয়ে ঘটনাটি জানিয়েছিলাম । পর দিন অর্থাৎ গত ২০,০৮,২০১৮ ইং তারিখে মেয়েটির বাবা হোমনা থানায় উপস্থিত হয়ে একটি ধর্ষণ মামলা রুজু করেন। ধর্ষণের অভিযোগে মামলার আসামী জাকির পুলিশ কর্তৃক আটক হয়ে বর্তমানে কুমিল্লা জেল হাজতে আছে বলে জানান ।এই ঘটনার কঠিন বিচারের দাবী জানান এলাকাবাসী।