ক্রাইম পেট্রোল ডেস্ক:
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দু’র্নীতির অভিযোগের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মো. আমির হোসেন কর্তৃক লা’ঞ্চিত শিকার হয়েছেন দুই গণমাধ্যম কর্মী।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বালিয়াকান্দি উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস রুমে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা হলেন নিউজ ২৪ টেলিভিশনের রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি মিঠুন গোষ্ঠমী ও জাতীয় দৈনিক কালবেলা পত্রিকার বালিয়াকান্দি উপজেলা প্রতিনিধি মো. রিয়াদ হোসেন। ইতোমধ্য সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক সাংবাদিক লা’ঞ্চিত হওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে।
লাঞ্চিত সংবাদ কর্মী মিঠুন গোষ্মামী বলেন, ‘বালিয়াকান্দি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের নানা অ’নিয়ম -দু’র্নীতির তথ্য সংগ্রহ শেষে সাব রেজিস্ট্রার কর্মকর্তার কাছে সাক্ষাৎকার চাইলে তিনি সাংবাদিকতা নিয়ে উপহাস করেন এবং আমিসহ আরেকজন সহকর্মীকে আটকে রেখে মা’রপিট দিতে বলেন। যার ভিডিও রেকর্ড রয়েছে। ‘
ভিডিওতে দেখা গেছে, সাব-রেজিস্ট্রার এর কাছে অ’নৈতিক অর্থ লেনদেনের বিষয় জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, টাকা কি আপনার বাবার কাছ থেকে এনে দেয়। আপনি কোন ধরনের অভিযোগ করছেন। বের হন, আপনাকে ডাকছে কে? বের হন, এখান থেকে। দুই কলম পড়ে এসে নাম লিখতে পারেন না, আসছে সাংবাদিকতায়। সাংবাদিকদের অবস্থান এখন কই, ভালোই জানি। মাথা ঝুলাচ্ছেন কেন আপনি? মোবাইল দিয়ে কী রেকর্ড করেন? আপনি কার পারমিশন নিয়েছেন। এই মোবাইলটা নাও তো। এই দরজা আটকানতো। পি’টাইয়া তারপর বের করতে হবে। এই মাসুদকে ডাক দেন তো।’
অভিযোগ রয়েছে, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের অ’নিয়ম-দু’র্নীতির মাধ্যমে ঘু’ষ ছাড়া কোনো একটি দলিল সম্পাদন যেন স্বপ্নের সমান। সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন দেখিয়ে, সাব-কবলা দলিলের পরিবর্তে হেবাবিল এওয়াজ, অসিয়ত নামা, ঘোষণাপত্র, আমমোক্তার নামা দলিল রেজিস্ট্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সাব-রেজিস্ট্রার ও সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়াও কথিত ‘সেরেস্তা’ নামে টাকা আদায়সহ পদে পদে হ’য়রানির ও ঘু’ষ বাণিজ্যের ম্যারাথনে কুপোকাত সাধারণ জনগণ। জমি রেজিস্ট্রি করতে সরকারি ফি ইউনিয়ন পর্যায়ে ৬.৫ শতাংশ। কিন্তু বালিয়াকান্দি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে সরকারি নিয়ম চলে না! চলে দলিল লেখক সমিতির নিয়ম। এখানে রেজিস্ট্রেশনে নেওয়া হয় লাখে ১২ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার পর্যন্ত। অঞ্চল এবং ব্যক্তি ভেদে এই অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়।
বালিয়াকান্দি সাব-রেজিস্ট্রার মো. আমির হোসেন মোবাইল ফোনে জানান, ‘আমার খাস কামরায় বসে সাংবাদিকরা ভিডিও করে। আমি বলি, আপনার কি আমার অনুমতি নিয়েছেন? একপর্যায়ে আমি বলেছি, দরজা আটকিয়ে রেখে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ঠিক হয়ে যাবে।’
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলামকে অবগত করলে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে একজন সরকারি কর্মকর্তার এমন ব্যবহার দুঃখজনক এবং মোটেও কাম্য নয়। সাংবাদিকরা সমাজের দর্পন। তাদের তথ্য দিয়ে সাহায্য করা উচিৎ ছিল, তা নাকরে এমন দু’র্ব্যবহার সত্যিই অ’নৈতিক। আমি বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যারকে জানিয়েছি।’
রাজবাড়ী জেলা রেজিস্ট্রার মো. সাজেদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের আগামীকাল সাব-রেজিস্টারদের সঙ্গে মিটিং আছে। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে দু’র্ব্যবহারের বিষয়টি উঠানো হবে।’
এদিকে এ ঘটনায় সর্বশেষ সোমবার রাত সোয়া ৮টায় সাংবাদিক মিঠুন গোস্বামী বাদী হয়ে বালিয়াকান্দি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।