![](https://crimepatrol24.com/wp-content/uploads/received_354020175629060.jpeg)
মোঃ পারভেজ আলম, জেলা প্রতিনিধি, ঢাকাঃ
রেকর্ড ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরো ট্রান্সফার ফিতে বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দেয় নেইমার। লক্ষ্য ছিল মেসির ছায়া থেকে বের হয়ে নিজেই কোন দলকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের উপলক্ষ হবে, সে হাসি হাসতে আর মাত্র একটি ম্যাচ জয় দরকার ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টারের। গল্পের মধুর সমাপ্তির অপেক্ষায় ফরাসি চ্যাম্পিয়নরাও। বায়ার্ন মিউনিখকে হারালেই অবসান হবে প্রতীক্ষার; মিলবে অধরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বাদ। দলের স্বপ্ন পূরণে নেইমার কি পারবেন নিজেকে স্বরূপে মেলে ধরতে?
যে আকাশছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে ২০১৩ সালে ইউরোপে পাড়ি জমান নেইমার, বার্সেলোনার জার্সিতে শুরুতে তা সত্যি হওয়ার আভাসও মেলে। চার বছরের সেই অধ্যায়ে কাতালান ক্লাবটির অনেক সাফল্যের কারিগর ছিলেন তিনি; লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেসের সঙ্গে গড়েন বিধ্বংসী আক্রমণত্রয়ী, জেতেন একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও দু’টি লা লিগাসহ আটটি শিরোপা। কিন্তু কখনোই ‘মেসির ছায়া’ থেকে বের হতে পারেননি তিনি।
নেইমার যদিও নিজে কখনও তেমন কিছু বলেননি। তবে অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞের মতে, বিশ্ব ফুটবলে নিজেকে সেরার আসনে বসাতেই ২০১৭ সালে তিনি যোগ দেন পিএসজিতে।
ফুটবল বিশ্বকে চমকে দিয়ে পিএসজি যখন নেইমারকে দলে টানে, তখনও তাদেরকে তাড়া করছিল কয়েক মাস আগের কাম্প নউয়ে ভরাডুবি। সেবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ ষোলোর প্রথম লেগে ঘরের মাঠে ৪-০ গোলে জিতেছিল তারা। কিন্তু ফিরতি পর্বে তাদেরকে ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করে বার্সেলোনা।ক্যাম্প নউয়ে ৮৮তম মিনিটে থেকে তিন গোল করেছিল তারা, এর একটিতে এসিস্ট এবং অন্য দু’টি গোল করেন নেইমার নিজে। ভাঙা হৃদয় নিয়ে তখন বিদায় নেয় পিএসজি।
প্রতিপক্ষ নেইমারের বিপক্ষে পিএসজির হতাশার চিত্র সেবারই প্রথম নয়; ২০১৪-১৫ আসরেও লেখা হয়েছিল প্রায় একই গল্প। সেবার কোয়ার্টার-ফাইনালের প্রথম লেগে পিএসজির মাঠে বার্সেলোনার ৩-১ ব্যবধানের জয়ে দলকে ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে দেন নেইমার। আর ফিরতি লেগে ঘরের মাঠে দলের ২-০ ব্যবধানে জয়ে দু’টি গোলই করেন তিনি।
তিন বছরের মধ্যে এমন দুটি হারের পরই পিএসজি কর্তৃপক্ষ উঠেপড়ে লাগে নেইমারকে পেতে। তার বিশাল অঙ্কের রিলিজ ক্লজও বাধা হতে পারেনি।
তবে, এই মৌসুমের আগ পর্যন্ত নেইমারের পিএসজি অধ্যায় মোটেও সুখকর নয়। বার্সেলোনা শিবিরের সফল মেধাবী নেইমার প্যারিসে এসে হয়ে ওঠেন অসুখী। সতীর্থদের সঙ্গে বারবার বিবাদে জড়িয়ে পড়েন, কর্তৃপক্ষও তাকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছিল।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে পায়ের পাতার মেটাটারসাল হাড় ভেঙে ছিটকে যান নেইমার। মৌসুমের বাকি সময়ে আর খেলতে পারেননি তিনি। পিএসজিও পারেনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ৩-১ গোলে হারের পর ফিরতি পর্বে ঘুরে দাঁড়াতে।
২০১৯ সালের শুরুতে আবারও পায়ের চোটে ছিটকে যান নেইমার। ফলে খেলতে পারেননি ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে শেষ ষোলোর দুই লেগেই। সেবার ঘরের মাঠে ফিরতি লেগের শেষ সময়ে ‘বিতর্কিত’ এক পেনাল্টি গোলে ম্যাচটি জিতে যায় ইউনাইটেড। আর ওই অ্যাওয়ে গোলেই এগিয়ে যায় তারা, বিদায় নেয় পিএসজি। ২০১৮/২০১৯ সালে নেইমার নকআউট পর্বে খেলতে না পারায় যে পিএসজি বাদ যায় তা এখন বলাই যায়, কারণ এই প্রথম পিএসজির হয়ে নকআউট পর্বে খেলে একেবারে ফাইনালে তুলে নিল দলকে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এবারের আসরেও শুরুতে দেখা যায়নি নেইমারকে। গত নভেম্বরে গ্রুপ পর্বে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ২-২ ড্র ম্যাচে প্রথম মাঠে নামেন তিনি। আক্রমণভাগের সতীর্থ কিলিয়ান এমবাপের সঙ্গেও ফুটবল উপভোগ করতে শুরু করেন তিনি।
ধীরে ধীরে নেইমার হয়ে উঠেছেন ঠিক তাই, যা দল তার কাছে আশা করে। পিএসজি প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দু এখন তিনি। পেছনের হতাশা পেছনে ফেলে যে এখন সুখী হয়ে উঠেছেন, তা তার অভিব্যক্তিতেই ফুটে উঠছে। এমবাপের সঙ্গে মাঠে ও মাঠের বাইরে তার বন্ধুত্ব বেশ জমে উঠেছে।
নেইমারের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সেও একেবারে আগুনে। ২৮ বছর বয়সে তিনি দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিততে মরিয়া। আগেরবার জিতেছিলেন ২০১৫ সালে।
শেষ ষোলোয় বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে দুই লেগেই গোল করেন নেইমার। কোয়ার্টার-ফাইনালে আতালান্তার বিপক্ষে অনেকগুলো সুযোগ নষ্ট করার পরও তার পারফরম্যান্স দারুণ প্রশংসিত হয়, হন ম্যাচ সেরা। লাইপজিগের বিপক্ষেও বল পায়ে তার নৈপুণ্য ছিল নজরকাড়া। যদিও এই ম্যাচেও গোল পাননি তিনি।
পিএসজির হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলে এখন পর্যন্ত ৮৪ ম্যাচে ৭০ গোল করেছেন নেইমার। ক্লাবের ভক্ত-সমর্থকরা নিশ্চয় আশায় আছে, এই তারকা ফরোয়ার্ড তার পরের গোলটি করবেন রোববারের ফাইনালে। অধিনায়ক ও তার জাতীয় দল সতীর্থ চিয়াগো সিলভাও সেই আশায় বুক বেঁধেছেন।
“আশা করি, ঈশ্বর তাকে রোববার গোল করতে এবং আমাদের জেতাতে সাহায্য করবেন।”
আর তা হলে আরেকটি স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে পারেন নেইমার। সময়ের সেরা খেলোয়াড়ের প্রশ্নে অনেকেই লিওনেল মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পেছনে রাখেন ব্রাজিলিয়ান তারকাকে। রোনালদোর ইউভেন্তুস ছিটকে গেছে শেষ ষোলো থেকে, মেসির বার্সেলোনা কোয়ার্টার-ফাইনালে স্রেফ উড়ে গেছে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে। পিএসজিকে শিরোপা জিতিয়ে নেইমারের সামনে সুযোগ সময়ের সেরা হিসেবে নিজের দাবি জোরালো করার।
মহামারির এ বছরে যদিও দেওয়া হবে না বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার ব্যালন ডি’অর। আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না পেলেও অনেকের কাছে বর্ষসেরা ফুটবলার হিসেবে হয়তো তখন বিবেচিত হবেন নেইমার।