মো. ইব্রাহিম খলিলঃ
এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় সরকারি কোষাগারে জমা নিয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে গতকাল ২৮ তম দিন পর্যন্ত রাজপথে অবস্থান করেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষক-কর্মচারীরা। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং অসুস্থতার হার দিন দিন বেড়ে চলেছে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহজোটের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে। যদিও শিক্ষকদের ২/১ টি সংগঠন ১-২ ঘণ্টার নামমাত্র কর্মসূচি দিয়ে বাসায় চলে গেছেন। কিন্তু মহাজোটের নেতৃবৃন্দ তাদের আন্দোলন বিরতিহীনভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন।
গতকাল এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোটের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ২৮তম দিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিক্ষক-কর্মচরীগণ এসে অবস্থান করেন। মহাজোটের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন ও সদস্য সচিব জসিম উদ্দিন বলেন, ‘দীর্ঘ ২৯ দিন ধরে যে সকল শিক্ষক-কর্মচারীগণ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করে কর্মসূচিকে সাফল্যমন্ডিত করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শুভকামনা। লাগাতার কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে অথবা নিজ গৃহে চিকিৎসাধীন আছেন। অসুস্থ শিক্ষক-কর্মচারীগণের জন্য পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দিন শুক্রবার বাদ জুম্মা এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংযুক্ত মসজিদসমুহে ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত বা প্রার্থনার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান। আমরা দীর্ঘ ২৮ দিন ধরে এখানে অবস্থান করছি এবং ১২ থেকে ১৬ মার্চ এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে তিন ঘণ্টার কর্মবিরতি পালিত হয়েছে। জাতীয়করণের সুস্পষ্ট ঘোষনা না আসা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে ।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষক-কর্মচারীগণ বলেন “স্বাধীনতার একান্ন বছর পরেও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ তাদের ন্যায্য আর্থিক সুযোগ- সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পাঠ্যক্রম, আইন এবং একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হলেও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীগণের সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিরাট পার্থক্য বিরাজমান।
বৈষম্য গুলো হলো- বাড়ি ভাড়া, উৎসবভাতা, চিকিৎসা ভাতা, পদোন্নতি না থাকা, সন্তানের শিক্ষা ভাতা, হাউজ লোন, বদলি প্রথা, চাকরি শেষে নেই পেনশনের সুবিধা। অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট্রে শিক্ষক-কর্মচারীগণের নিকট থেকে প্রতি মাসে বেতনের ১০% করে কেটে রাখলেও বৃদ্ধ বয়সে যথাসময়ে এ টাকা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নেই। অনেক শিক্ষক-কর্মচারী টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যান। অধিকাংশ শিক্ষক নিজ জেলার বাইরে চাকরি করেন। তাদের জন্য বদলী ব্যবস্থা চালু অতীব জরুরি। অধ্যক্ষ থেকে কর্মচারী পর্যন্ত নামমাত্র ১০০০ টাকা বাড়িভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং ২৫% উৎসব ভাতা পান। বিশ্বের কোনো দেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন বৈষম্য আছে বলে মনে হয় না। এই বৈষম্য দূরীকরণে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ জরুরি। এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণে প্রয়োজন শুধু সরকারের সদিচ্ছা ও সুষ্ঠু নীতিমালা। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ও টিউশন ফি বাবদ যা আয় হয় তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে সরকারের পক্ষে কোনো রকম ভর্তুকী ছাড়াই জাতীয়করণ সম্ভব।
সার দেশ থেকে আসা শিক্ষক-কর্মচারীগণের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রিন্সিপাল দেলাওয়ার হোসেন আজীজী, আবুল কালাম আজাদ, জিল্লুর রহমান বাদল, মো. আরিফুর রহমান, রবিউল ইসলাম, তোফায়েল সরকার, নয়ন মোর্শেদ, নজরুল ইসলাম, মো. মানিক মিয়া, রিপন শিকদার , মেসবাহ উল হাসান প্রমুখ ।
এসময় বক্তারা জাতীয়করণের সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত রাজপথে অবস্থানের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এমনকি তারা আন্দোলন করতে করতে মৃত্যুবরণ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলেও ঘোষণা দেন।