
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহঃ
স্মার্ট ফোনের জগতে সেলফি কতোটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তা বয়ান না করলেও চলে। ঘন ঘন সেলফি তোলাকে মনোবিজ্ঞানীরা মানসিক সমস্যা বলে চিহ্নিত করেছেন। সেলফি তোলার জন্য অনেকেরই মাথায় এ ধরনের বুদ্ধিও আসতে দেখা গেছে। এর কারণে অনেকেই অসাবধানতাবশত মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে অহরহ। অনেকে রীতিমত গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ রেখে মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিয়ে থাকে। সেলফির নেশায় ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেন। সোস্যাল মিডিয়ার সূত্রে এমনই এক ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ কোলা বাজারের বিনোদপুর গ্রামের এজের আলীর ছেলে মন্টু ওরফে মন্টু মামু (৪৫) তার নিজের ফেসবুক আইডির নাম মন্টু মামু। সে ২ ছেলে ও ১ মেয়ের জনক। বড় ছেলে কালীগঞ্জ সরকারি মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচ.এস সি পরীক্ষা দেবে এবং ছোট ছেলেও শহীদ নূর আলী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পরীক্ষা দেবে। তার মেয়ের বয়স ৪ বছর। তিনি কোলা বাজারের লাটা হাম্বার গাড়ির ষ্টাটারী পেশায় নিয়োজিত। এতে যা রোজগার হয় তাই দিয়ে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে। তিনি অনেক আগে থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভালবেসে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। বর্তমানে তিনি কোলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক। তার বাবার অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল না থাকার কারণে লেখাপড়া বেশি করতে পারেননি। কোলা বাজার ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেনি পাশ করার পর আর লেখাপড়া ভাগ্যে জোটেনি। ঐ বয়স থেকেই সংসারের হাল ধরতে হয়েছে তার। তিনি জানান, মানুষের হাতে স্মার্ট ফোন দেখে আমার খুব শখ হতো যদি একটা স্মার্ট ফোন কিনতে পারতাম কিন্তু টাকার অভাবে কিনতে পারতাম না। এর আগে বহু কষ্ট করে একটা কম দামের স্মার্ট ফোন কিনে ছেলেদের দিয়ে ফেসবুক আইডি খুলে টুকটাক সেলফি তুলে পোষ্ট করতাম। কিন্তু ছবি ভালো না হওয়ায় মনটা খুব খারাপ লাগতো। তাই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি একটা ভালো স্মার্ট ফোন কিনবো। তখন থেকেই বহু কষ্ট করে ২ বছর ধরে অল্প অল্প করে টাকা যোগাড় করে আজ থেকে ১৫ দিন আগে একটা সাওমি রেডমি-এইট সেট কিনে এখন মনের আশা পূরণ করেছি। তিনি আরো বলেন, যেখানে সভা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় সেখানেই আমি হাজির হই একটিই উদ্দেশ্য জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পুলিশ এবং প্রশাসনের সাথে সেলফি তোলা। এরপর ফেসবুকে পোষ্ট করে আত্মতৃপ্তি মেটাই। আমি এপর্যন্ত প্রায় শতাধিক ছবি তুলে ফেসবুকে পোষ্ট করেছি। এর মধ্যে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু কনক কান্তি দাস, উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম জাহাঙ্গীর সিদ্দিকী ঠান্ডু, পৌর মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ, ভাইস চেয়ারম্যান শিবলী নোমনী, জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন সোহেল, জেলার প্রায় সকল ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, থানার ওসি, সাংবাদিক, শিক্ষক সহ বিভিন্ন প্রশাসনের লোকজনের সাথে ছবি তুলে পোষ্ট করেছি। লোক সমাগম দেখলেই শত কাজ থাকলেও সেখানে যেয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে পোষ্ট করেন বলে জানান। তার খুব শখ সে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, ঝিনাইদহের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য খালেদা খানম, আব্দুল হাই এমপি, পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু সহ সকল রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং ঝিনাইদহে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দের সাথে ছবি তুলে পোষ্ট করবেন। কিন্তু সময় এবং অর্থের অভাবে সে আশা পূরণ হচ্ছে না মন্টু মামুর। এটা সে শখের বশেই করে থাকে এর পেছনে তার আর কোন উদ্দেশ্য নেই। তার যাকে ভালো লাগে সে তার সাথে সেলফি তোলার জন্য সমস্ত কাজকর্ম বাদ দিয়ে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে তার পর তার ভালো লাগা ব্যক্তিকে নিজে পরিচয় দিয়ে অনুরোধ করেন এটা সেলফি তোলার জন্য। সেলফি তোলা হলে সে আর দেরি করেনা ফেসবুকে পোষ্ট করতে। আবার সে অনেক কষ্ট করে মানুষের নিকট থেকে স্ট্যাটাস লেখাটাও সময় ব্যয় করে শিখে নিয়েছেন। আবার তার আইডিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের ছবি, সাংবাদিকদের লেখা বিভিন্ন অনলাইন, প্রিন্ট ও ভিডিও নিউজ শেয়ার করেন। শত কষ্টের মাঝেও মন্টু মামু সব সময় থাকেন হাসি মুখে। দেখে মনে হয় দুঃখ কষ্ট তার ধারে কাছে আসতে পারে না। জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষ তাকে ভালবাসেন। এই ভালবাসাতেই সে সমস্ত দুঃখ কষ্ট ভুলে যায়। সে একজন সাধারণ শ্রমিক, সামান্য আয় রোজগারে তার সংসার চলে। বাবার পৈত্রিক সম্পদ বলতে রয়েছে মাত্র ৮ শতক জমি এর ওপর ঝুপড়ি ঘর। যার কারণে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের নিকট আমার অর্থিক অসচ্ছলতার কথা জানিয়েছি। তারা আমাকে খুব ভালবাসে এ কারণে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বরাদ্দ দশ শতক জমির ওপর ২ লক্ষ ৯৯ হাজার ৮ শত টাকা ব্যয়ে যে ঘর বরাদ্দ দেয় তার জন্য আমি স্থানীয় চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছি। আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বরাদ্দকৃত ঘরটি পাওয়ার ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রনিধিরা আমাকে সহযোগিতা করবেন।