
ক্রাইম পেট্রোল ডেস্ক>>
র্যাবের অনুসন্ধানে জানা গেছে, মোঃ আতিকুর রহমান আতিক (৩৯) ১৯৮২ সালে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থানায় জন্মগ্রহণ করে। সে দীর্ঘদিন যাবত সিদ্ধিরগঞ্জ স্থানীয় স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করত। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে ডিজিটাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন নামে একটি মানবাধিকার সংস্থা খুলে তিনি নিজেই তার প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়। কথিত মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান থাকাকালীন বিভিন্ন ব্যক্তিদের সাথে তার পরিচয় হয়। মূলত সেখান থেকেই তার প্রতারণা কার্যক্রম শুরু হয়। ধৃত আসামী বিভিন্ন ক্ষমতাশীল ব্যক্তিদের পরিচয় দিয়ে তাদের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষের কাছে ভুয়া পরিচয় দিয়ে দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী অফিস খুলে চাকুরী দেওয়া, জমি উদ্ধার, ফ্ল্যাট উদ্ধার এই সমস্ত কাজের কথা বলে সাধারণ মানুষের নিকট হতে প্রতারণার উদ্দেশ্যে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিয়ে তা আত্মসাৎ করে আসছে। দেশের বিভিন্ন নিরীহ ও সাধারণ মানুষ কে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে তাদের ব্যবহার করে জোরপূর্বক জমি ও টাকা পয়সা কেড়ে নিয়ে তা আত্মসাত করতো। সে চলাফেরা করত আলিশান গাড়িতে, সব সময় যেনো মিটিং লেগেই আছে। এই আতিকুর রহমান আতিক তার সুন্দর চেহারার মোহে বিভিন্ন নারীদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে সেগুলোর গোপন ভিভিও ধারণ করে তাদেরকে ফাঁদে ফেলত এবং সেই ভিডিও কাজে লাগিয়ে সে নারীদেরকে বিভিন্ন অপকর্মে কাজ করাতে বাধ্য করত। এছাড়া সে বিভিন্ন এলাকার নারীদের সাথে বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে তাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। এই পর্যন্ত সে বিভিন্ন এলাকায় ভুয়া পরিচয় দিয়ে মোট ০৮ জন নারীকে বিবাহ করেছে বলে জানা যায়। তাদের সাথে কিছু দিন সম্পর্ক রাখার পর প্রতারণাপূর্বক টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যেত। পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থানায় তার নামে একটি ধর্ষণ মামলা রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি এসবের সত্যতা স্বীকার করেছে এবং এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করে ।
পরবর্তীতে দুই মাসের অধিক সময় হাজত বাসের পর জামিনে মুক্ত হয়। এরপর পুনরায় শুরু হয় তার অপকর্ম। প্রতারক আতিকুর রহমান জেল থেকে বের হয়ে র্যাব-৪ কে দোষারোপ করে অর্থাৎ র্যাব নাকি অন্যায়ভাবে তাকে গ্রেফতার করেছে এবং তার সঙ্গে অসদাচরণ করেছে মর্মে তার ফেসবুক পেইজ ‘ ডিজিটাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফাউণ্ডেশন’ -এ লাইভ করে। কিছুদিন পূর্বেও রাজধানীর পল্লবী থানার এসআই তারেকের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলে লাইভ করে।
শুধু তাই নয়, জেল থেকে বের হয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বরিশালের পটুয়াখালী জেলার সদর থানার তানিয়া আক্তার নামেেএক মেয়েকে বিয়ে করে। পরে ওই মেয়ের কাছ থেকে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে রেখে গত ৩০ অক্টোবর, ২০২১ তারিখে তাকে তালাক দেয়। ভুক্তভোগী তানিয়া প্রতারক আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
এছাড়াও গত ২০ নভেম্বর, ২০২১ তারিখে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কক্সবাজারের চকরিয়া থানার ফাহমিদা জান্নাত নামের এক মাদরাসা ছাত্রীকে বিয়ে করে।এটি হল তার দশম বিয়ে। এরপর ওই মাদরাসা ছাত্রীর পিতা-মাতা নাকি ফাহমিদা জান্নাতকে তাদের বাড়িতে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করছে এ অভিযোগে তুলে আতিকুর রহমান ই-মেইলে তাদের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় অভিযোগ করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফাহমিদা জান্নাতের পিতা জানান, আমার মেয়ের সাথে ফেসবুকে পরিচয় হয়ে সামান্য কথা হয়েছে, তার সঙ্গে দেখাও হয়নি, বিয়ে তো দূরের কথা। আতিকুর রহমান আমার মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। নোটারী পাবলিকে আমার মেয়ে স্বাক্ষর করেনি , আতিক নিজে বানিয়েছে।
এ বিষয়ে আতিকুর রহমানের ব্যবহৃত হোয়াটস অ্যাপে জানতে চাইলে, সে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয় নি। এমনকি প্রতিবেদককে মিথ্যা মামলায় জড়ানোসহ বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি প্রদান করে।
প্রসঙ্গত, দেশের বিভিন্ন থানায় প্রতারক আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে ৮/১০টি জিডি ও ২ টি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা ও প্রতারণার মামলা চলমান রয়েছে। তার প্রতারণার বিষয়ে কেউ মুখ খুললেই সে তার ডিজিটাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফাউণ্ডেশন নামের ফেসবুক পেইজে লাইভে এসে তাদেরকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়, তাদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা জিডি করে এবং বিভিন্ন দফতরে মিথ্যা অভিযোগ দেয়।