মো. সাইফুল্লাহ খাঁন, জেলাপ্রতিনিধি, রংপুর : গতবারের প্রথম ফেজে করোনার বিষয়ে মানুষ যতটা সচেতন ও বিধিনিষেধ মেনে চলার চেষ্টা করেছিল এবার দ্বিতীয় ফেজে মানুষ যেন উদাসীন। এরই মধ্যে রংপুর জেলায় করোনা রোগীর আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। রোগী বাঁচাতে জীবন বাজি রেখে সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। পরিবারের সান্নিধ্য ছেড়ে সেবার মানসিকতা নিয়ে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের চিকিৎসকরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
জানা যায়,গত এক বছরে (১৯ এপ্রিল পর্যন্ত) রংপুর জেলায় কোভিড রোগীর মৃতুর সংখ্যা ৭৭ জন এবং করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ৪৫৯জন। এদিকে রংপুর বিভাগের দেড় কোটি মানুষের জন্য আইসিইউ বেড রয়েছে ২৬ টি। যার মধ্যে রংপুর জেলায় ১০টি ও দিনাজপুরে ১৬ টি। বিভাগের অন্য কোন জেলায় আইসিইউ নেই। অথচ প্রতিদিনই করোনা আক্রন্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এক্ষেত্রে বিভাগের ১২টি হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রায় ৭০০ করোনা রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগ।
রংপুর স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিভাগের ৮ জেলায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ১২টি হাসপাতালে প্রায় ৭০০ বেডের ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে রংপুরের করোনা ডেডিকেডেট হাসপাতালে রয়েছে ১০০টি শয্যা, যার মধ্যে আইসিইউ বেড রয়েছে মাত্র ১০টি। এখন এসব বেড খালি পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে। এছাড়া রংপুর বক্ষ্যব্যাধি হাসপাতালে ২০ শয্যা, হারাগাছ ৩১ শয্যা হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে কোন আইসিইউ নেই। দিনাজপুরের এম আব্দুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০ শয্যায় করোনার চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে আইসিইউ রয়েছে ১৬টি। এছাড়া দিনাজপুরের বিরলে ২৫ শয্যা ও কাহারোলে ল্যাম্প হাসপাতালে ১০ শয্যায় করোনা রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে কোন আইসিইউ নেই। এছাড়া কুড়িগ্রামে আধুনিক সদর হাসপাতালে ৫০ শয্যা, লালমনিরহাটের নার্সিং ইন্সটিটিউশনে ১২ শয্যা, লালমনিরহাট সরকারি হাসপাতালে ৫০ শয্যা, রেলওয়ে হাসপাতালে ২০ শয্যা, পঞ্চগড়ে চাইল্ড ওয়েল ফেয়ারে ৫০ শয্যা, ঠাকুরগাঁও টেকনিকেল স্কুল এন্ড কলেজে ১০০ শয্যা, গাইবান্ধার আনসার ট্রেনিং সেন্টারে ৮০ শয্যা ও নীলফামারী সরকারি হাসপাতালে ১০০ শয্যায় করোনার রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও ওইসব চিকিৎসা কেন্দ্র কোন আইসিইউ নেই।
রংপুর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রিফাত মাহমুদ জানান, রংপুরে করোনা রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসক, নার্স, বয় মিলে ৩০ জন কাজ করছে। এছাড়াও রোগীর চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে চিকিৎসক বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান,রংপুর বিভাগের দিনাজপুর বাদে অন্য জেলাগুলোর হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা বেড থাকলেও আইসিউ নেই। তাই অন্য জেলাগুলোতে আইসিউ বেড ব্যবস্থা থাকলে রংপুর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চাপ কম পড়বে।
রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার জানান,করোনা রোগীদের শ্বাসকষ্টের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবস্থা রংপুরে ভালো রয়েছে। করোনা শনাক্ত হলেই রোগীরা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মনিটরিংয়ে থাকেন। তাছাড়া এখানকার চিকিৎসকরা আবাসিকভাবেই হোম কোয়ারেন্টাইন করেন।
তিনি আরও জানান,রংপুর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আজ বুধবার পর্যন্ত করোনা রোগী আছেন ৪৭ জন আর আইসিউ বেডে আছেন ৭জন। রংপুর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের তত্বাবধায়ক চিকিৎসক ডা. নূরন্নবী জানান,বর্তমানে করোনা ভয়াবহতা সম্পর্কে অনেকেই উদাসীন। সবার আগে প্রয়োজন নিরাপদে থাকা ও মাস্ক পরিধান করা। করোনা রোগীদের সেবাদানে রংপুর করোনা হাসপাতালের পুরোপুরি সক্ষমতা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।