
মো. সাইফুল্লাহ খাঁন, জেলাপ্রতিনিধি, রংপুর: স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশে ব্যাপক উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হলেও আজ একটি সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে পীরগাছা উপজেলার ১০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। তারা বাঁশের ভাঙা সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছে তাদের জানমাল। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার প্রতিপাল গ্রামের বুড়াইল নদীর উপর জরাজীর্ণ এই বাঁশের সাঁকোটি এখন গ্রামের মানুষের মরণ ফাঁদে রূপ নিয়েছে। বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও নির্মাণ হয়নি স্বপ্নের সেতুটি। জানা গেছে, উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের প্রতিপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-পরাণ সড়কের বুড়াইল নদীর ওপর দেশ স্বাধীনের পর থেকে কোন সেতু নির্মাণ করা হয়নি। গ্রামবাসী বিভিন্ন সময়ে চাঁদা তুলে বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে চলাচল করছে। আশেপাশে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হলেও এ স্থানে সেতু তৈরিতে নেই কারো মাথা ব্যাথা। গত বছর থেকে সাঁকোটি ভাঙতে শুরু করলে আর মেরামত সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র মাঝদিয়ে দু’টি লম্বা বাঁশ দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে এ অঞ্চলের অসহায় লোকজন। সম্প্রতি প্রতিপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির ছাত্র একই গ্রামের ছফি মিয়ার ছেলে মারুফ মিয়া (৮) ওই সাঁকো পারপারের সময় পা ফসকে পড়ে গিয়ে মারা যায়। এছাড়াও ওই সাঁকো দিয়ে পরাণ, ব্রাহ্মণীকুন্ডা, পশ্চিমদেবু, শালমারা, আদম, পাওটানা, কামারপাড়াসহ ১০ গ্রামের মানুষ চলাচল করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পারাপার হচ্ছে। কেউ সাঁকোতে উঠলেই দুলতে থাকে।
এলাকাবাসী নুর আলম, আব্দুল করিম, আবুল হোসেন বলেন, সাঁকো দিয়ে চলাচল করা কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে কৃষি পণ্য উৎপাদন ও ফসল পরিবহণে আমাদের বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয় সবসময়।
৯০ বছরের বৃদ্ধ আবদুস সোবহান বলেন, আমরা বুঝমান হওয়ার পর থেকে এ অবস্থা, কিয়ামত পর্যন্ত হবে কিনা সন্দেহ হয়। বেশ কয়েকবার মাপযোখ করা হলেও সেতু হয়নি।
প্রতিপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কেরামত আলী বলেন, বিদ্যালয়ের পাশে সাঁকোটি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়। এই সাঁকোটির কারণে বর্তমানে কোমলমতিরা বিদ্যালয়ে আসতে অনীহা প্রকাশ করছে। অনেকেই পড়া লেখা ছেড়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর থেকে অভিভাবক মহল আতংকিত।
তাম্বুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান রওশন জমির রবু সরদার বলেন, ওই স্থানে সেতু নির্মাণের বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য টিপু মুনশি ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মনিরুল ইসলাম বলেন, সেতুটি নির্মাণের জন্য কাগজপত্র ঠিক করে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই নির্মাণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।