
আনিছুর রহমান মানিক, ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধি>>
নীলফামারীর ডোমারে ঐতিহ্যবাহী শালকি নদী মরাখালে পরিণত হয়েছে। অবৈধ দখলদারদের দখলে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে নদীটি।
ডোমার পৌরসভার বুকচিরে শালকি নদীটি আজ বিলিনের পথে। বছরের প্রতিটিদিন বহমান শ্রোত ধরে রাখা নদীটি আজ কালের সাক্ষীতে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন স্থানে নদীটি দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করায় সংকুচিত হয়ে পড়েছে নদীর আকার। অনেকে নিজের জায়গা মনে করে আবার মাটিফেলে ভরাট করে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করছে এবং বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করছে। ডোমার উপজেলা থেকে উৎপত্তি হওয়া এই শালকি নদীটি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন তারা। উপজেলার সদর ইউনিয়নের বড় রাউতা গ্রামের মৃত আশরাফ আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম জানান, বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড বুড়ারডোবা খুলখুলির পুল থেকে উৎপত্তি হয়ে ডোমার সদর ইউনিয়নের বড়রাউতা, ছোট রাউতা ও পৌর এলাকার কোল ঘেঁষে প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার শালকি নদীটি গিয়ে মিলিত হয়েছে বোড়াগাড়ীর দেওনাই নদীতে। উৎপত্তি স্থল হতে শেষ মাথা পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে অবৈধ স্থাপনা তৈরি হওয়ায় নদীর মালিকানা এখন দখলদারদের কবলে হারিয়ে যেতে বসেছে। শালকিকে আর নদীরুপে চেনাই যায়না, শুকিয়ে মরা খাল হয়ে গেছে। আগের শালকি আর এখনকার শালকির মধ্যে আসমান জমিন তফাৎ। মনে হচ্ছে দখলদাররা তাদের বাড়ীর নোংড়া পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন তৈরি করেছে। পানি প্রবাহ না থাকায় যেটুকু আছে সেটাও আজ হারিয়ে যেতে বসেছে মানচিত্র থেকে। এতে করে পরিবেশ যেমন দূষিত হচ্ছে তেমনি আগামী প্রজন্মের কাছ থেকে শালকি নদীর নামটিও মুছে যেতে বসেছে ইতিহাসের পাতা থেকে। এ নদীকে প্রভাবশালী, ক্ষমতাবানরা গ্রাস করে নির্মাণ করেছে, দেয়াল, দোকানঘর, টয়লেটের স্যোকোল, বাড়ীসহ বিভিন্ন স্থাপনা, আর ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য অবশিষ্ট অংশটুকু রেখেছে। সবখানে দেখা যাচ্ছে শুধু দখলের চিহ্ন।
নদী পাড়ের আর এক বাসিন্দা মজনু মিয়া জানিয়েছেন, এইতো সেই দিনের কথা নদীটি সারা বছর পানিতে টই টুম্বুর থাকতো, ছেলেরা ব্রীজের ওপর থেকে নদীর পানিতে লাফ দিয়ে গোসল করতো,বর্ষাকালে ব্রীজে বসে পা নামিয়ে পানি ছোঁয়া যেতো, বরশি দিয়ে অনেক মাছও ধরা যেতো, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এই নদীতেই তাদের প্রতিমা বিসর্জন দিতো। এখন নদী তার জীবন ও যৌবন হারিয়েছে বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, নদীর জায়গাটি এখন ব্যাক্তি মালিকানায় পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়রা মনে করেন, উপজেলা শহরে উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষার সময় আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
নীলফামারী জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লা আল মামুন জানান, শালকি নদীটি দ্বিতীয় পর্যায়ে খননের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এই প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে আড়াই কোটি টাকা, প্রকল্পটি অনুমোদন হলে দ্রুত খননের কাজ শুরু করা হবে। জলবায়ু ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপজেলার অনেক নদী খনন করা হচ্ছে। শালকি নদীটি খননের জোর দাবি জানান এলাকাবাসী।