
জেলা ক্রাইম রিপোর্টার নীলফামারী॥ নীলফামারীর ডিমলায় নাম সর্বস্ব লাইফ কেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।শুধু তাই নয় প্রসূতি ওই মায়ের মৃত্যুর পর কর্তৃপক্ষ বর্তমান প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতিতে চিকিৎসা নিতে এসে মৃত্যুবরণের কথা জানাজানি হলে পুরো পরিবারকেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে এমন ভয়ভীতি দেখিয়ে ও হুমকি দিয়ে তড়িঘড়ি করে লাশ অন্যত্র সরিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টারও অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
নিহতের পরিবার সূত্রে ও অনুসন্ধানে জানা যায়,গত শনিবার(১১ এপ্রিল) ডিমলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের মধ্যম কুমার পাড়া গ্রামের বাসিন্দা আশরাফ হোসেন তার স্ত্রী নুবিনা বেগম(৩০)কে সন্তান প্রসবের জন্য ডিমলা সদরের আলমপ্লাজা মার্কেটের পিছনে অবস্থিত লাইফ কেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিলে কর্তৃপক্ষ সিজারিয়ান অপারেশনের কথা বললে তিনি তাতে সম্মতি দেন।পরে ওই প্রতিষ্ঠানটির চুক্তিবদ্ধ চিকিৎসক নন সার্জারী ও নন এনেসথিষ্ট ডা. আইনুল হক অধিক মুনাফার লোভে সন্ধ্যায় নিজেই এনেসথেসিয়া করিয়ে সিজারিয়ান করেন।এতে সৃষ্টিকর্তার কৃপায় ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হলেও পরের দিন রবিবার(১২ এপ্রিল)ওই প্রসূতি মায়ের অসহ্য পেট ব্যথা,শ্বাসকষ্ট ও খিচুনী দেখা দিলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা না করায় রাত পৌনে ১২টায় তিনি ওই নাম সর্বস্ব হসপিটালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।এ সময়ে নিহতের স্বজনেরা আহাজারি করলে হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির কর্তৃপক্ষ তাদের হুমকি-ধামকি দিয়ে বর্তমান প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের মহামারী পরিস্থিতিতে প্রশাসন ও লোকজন জেনে গেলে তাদের(স্বজনদের)সমস্যা হবে জানিয়ে একটি মাইক্রোবাসযোগে মৃতদেহটি তড়িঘড়ি করে সরিয়ে দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপার চেষ্টা করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিকটির একাংশের মালিক মতিয়ার রহমান ও ম্যানেজার তাজুল ইসলাম জানান,ওই প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরে রেফার্ড করলে রাত পৌনে ১২টার সময় পথিমধ্যে সে মৃত্যুবরণ করে।
তবে লাশ বহনকারী মাইক্রোবাস চালক নাসির বলেন,আমার গাড়িতে লাশটি মৃতের বাড়িতে পৌঁছে দেবার জন্য ১৫শত টাকায় আমার গাড়িটি ভাড়া করা হয়েছিল।যার মধ্যে আমাকে হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির কর্তৃপক্ষ ১হাজার টাকা নগদ দিয়েছিলেন এবং এখনো বাকী ৫শত টাকা পরিশোধ করেননি।
এ ব্যাপারে ডা. আইনুল হক বলেন,আমি শুধু সিজার করেছি।এনেসথেসিয়া করেছেন ক্লিনিকটির(হসপিটালটির) একাংশের মালিক এনেসথেসিষ্ট ডা. নিয়ারঞ্জন।এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,প্রসূতির খিচুনী,শ্বাসকষ্টসহ প্রেশার বেড়ে গিয়ে একলামসিয়া হলে আমি তাকে ১২এপ্রিল সন্ধ্যায় রংপুরে রেফার্ড করার পরও তিনি রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত ওই ক্লিনিকেই কীভাবে মারা গেলেন তা আমি জানিনা।আমি কোনো সার্জারী সার্জেন্ট নই,সিজার করতে পারি তাই করি।তবে আমি ঢাকা পিজি হাসপাতালে ডেপুটেশনে আছি।
ডা. নিয়ারঞ্জনের কাছে ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন,আমি সবশেষ এ মাসের ১০এপ্রিল ডিমলায় ও ওই হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়েছিলাম এবং আমি ওই রোগীকে এনেসথেসিয়া করিনি বলে ফোন কেটে দেন।পরে তাকে আবারও ফোন করলে তিনি বলেন,হ্যা, হ্যা আমি তাকে এনেসথেসিয়া করেছি কিন্তু সিজার করিনি?
এ বিষয়ে নীলফামারী সিভিল সার্জন ডা. রনজিৎ কুমার বর্মন বলেন,ভুক্তভোগীর পরিবারের উচিত ডাক্তারসহ ওই নাম সর্বস্ব হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির নার্স,মালিক সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।বর্তমানে আমি করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে ব্যস্ত আছি তবে ভুক্তভোগীর পরিবার আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে আমি বিষয়টি দেখব।
এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, নাম সর্বস্ব লাইফ কেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিতে একাধিকবার ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স ছাড়াই কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত করে আসছেন।এখানে নার্সের যাবতীয় কাজ করে থাকেন পরিছন্নতাকর্মী আয়া!
এমনকি স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের উদাসীনতায় অবৈধ উক্ত হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির মান সম্পন্ন সেবার পরিবর্তে দেদারছে তাদের স্বার্থান্বেষী কার্যক্রম পরিচালনা করেও রয়েছেন বহালতবিয়তেই!তাই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোড়ালো দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীর পরিবারসহ স্থানীয়রা।