জাহিদুর রহমান তারিক,ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জমজমাট পিঠা উৎসব ও ঘুড়ি ওড়ানো প্রতিযোগিতা। পৌষের শেষ ভাগে কনকনে শীতের যখন সারাদেশ জবুথবু; তখন মানুষের মাঝে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দিতে ঝিনাইদহে আয়োজন করা হলো পিঠা উৎসবের। রোববার দিন ব্যাপী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে এ আয়োজন করা হয়। যেখানে রকমারি পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেন গৃহবধু ও নানা সংস্থার নেতৃবৃন্দ। পাটি সাপটা, জামাই ভাজা, বকুল পিঠা, গোলাপফুল, সিমফুল দুধপুলি, চন্দ্রপুলিসহ প্রায় ৫০ রকমের পিঠার আয়োজন করা হয় এসব স্টলে। ফুল, পাতা ও পাখিসহ বাহারি নকশার এসব পিঠাপুলির স্বাদ পেতে দূর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসেন নারী-পুরুষ শিশুসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়াম এলাকা যেন পিঠা প্রেমীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। সেই সাথে বাড়তি আনন্দ যোগ করে ঘুড়ি ওড়ানো প্রতিযোগিতা। রঙ- বেরঙের নানা ঘুড়ি নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এমন আয়োজনে অংশ নিতে পেরে খুশি অংশগ্রহণকারীরা।
ঝিনাইদহ শহরের সিও সংস্থার পরিচালক শামসুল আলম বলেন, বাঙ্গালী গ্রামীণ ঐতিহ্য এ পিঠা পুলি শহুরে জীবনে অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ উৎসবে অংশ নিতে পেরে নতুন করে পরিচিত হতে পারলাম ভোজন রসিক বাঙ্গালীর ঐতিহ্যের সাথে।
ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের ছাত্র প্রতাপ আদিত্য বিশ্বাস বলেন, ছোটবেলায় গ্রামের মাঠে ঘুড়ি উড়াতাম। এখন আর সেই বয়স বা সেই সময় আর নেই। আজ ঘুড়ি ওড়ানো দেখে মনে হচ্ছে ছোট বেলায় ফিরে গেছি।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ ঐতিহ্য পিঠা উৎসব ও ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগিতা জেলা প্রশাসনের আয়োজনের সাথে উপজেলা প্রশাসন যোগ হতে পেরে নিজেকে আজ গর্বিত মনে করছি।
ঝিনাইদহ লেডিস ক্লাবের সভাপতি শ্যামলী নাথ বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরণের এক ব্যতিক্রমী আয়োজনকে আমি সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে জানান দিতে এ ধরণের আয়োজন প্রতি বছরই হওয়া দরকার।
আয়োজক জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, বাঙ্গালী সংস্কৃতির সাথে খাবার অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। রয়েছে নানা প্রকার খাবার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আকর্ষনীয় পিঠা পুলি। পৌষের এই শেষ দিনে বাঙ্গালীর ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের মাঝে দেশীয় সংস্কৃতি ও গ্রামীণ ঐতিহ্য তুলে ধরতেই এ প্রয়াস।
পিঠা মেলা পরিদর্শনে এসে অভিভূত খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া। তিনি বলেন, এমন আয়োজন তার চাকুরি জীবনে এই প্রথম দেখলেন। এ আয়োজনে যুব সমাজের যে উৎসবমুখর পরিবেশে অংশগ্রহণ তা লক্ষনীয়। বর্তমান সরকারের এটাই লক্ষ্য। যে বিভিন্ন খেলা, সংস্কৃতি চর্চা ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অপরাধ থেকে তাদের দূরে রাখা। জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগে সে প্রয়াস সফল হয়েছে।