মো.সাইফুল্লাহ খাঁন, জেলাপ্রতিনিধি, রংপুর : অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি রংপুর বিভাগীয় সিটি বাজার। ১৯৮৬ সালে স্থাপিত হওয়ার পর থেকে হাজারও বিপর্যয় কাটিয়ে বেড়ে ওঠা আজকের এই সিটি বাজারটি পুরোপুরি অবহেলিত। পানি নিষ্কাশনে সমস্যা থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানিবন্দি হয়, নেই গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা ও চলাচলের উপযোগী রাস্তা। এ বাজারে প্রবেশের ফটক/গেট নেই, এছাড়াও এখানে বাথরুমগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। উন্নয়নের অভাবে এরকম বেহালদশা সিটি বাজার যেন অস্তিত্বের সঙ্কটে- নানান ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা ক্রেতা, বিক্রেতাসহ বাজারের ব্যবসায়ী সমাজ ও কমিটির নেতৃবৃন্দ।
সিটি বাজার ব্যবসায়ী কমিটির দেওয়া তথ্যমতে- বাজারের রাস্তা, ড্রেন, বাথরুম, গেট, ও পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় কয়েক দফায় মেয়রের দ্বারস্থ হয়েও আশানুরূপ সারা পাননি সিটি বাজার ব্যবসায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ। পরে গত ৩১ মার্চ ২০২১ ইং তারিখে সংবাদ সম্মেলন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ এপ্রিল ২০২১ ইং তারিখে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা সিটি বাজারে এসে ব্যবসায়ী কমিটিকে অনেক আশার বাণী শুনিয়ে গেছেন। দীর্ঘ ৯ মাস অতিবাহিত হলেও অদ্যাবধি কোনো কাজ শুরু হয়নি। সেই প্রতিবাদে আগামী ১৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার ভোর ৬টা হতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিটি বাজার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
রংপুর সিটি বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মোস্তফা কামাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই বাজারের উন্নয়নের জন্য আমরা বহুবার মেয়রের সাথে সাক্ষাৎ করেছি, আমাদের দাবিগুলো তিনি শুধুই শুনে গেছেন, এখন পর্যন্ত বাজারের উন্নয়নে কোনো কাজ করেননি। এখানে বৃষ্টির সামান্য পানিতে বাজার তলিয়ে যায়, দুর্গন্ধে বাজারে থাকা যায় না। এখানে টয়লেট নেই, দরজা ও গেট কিছুই নেই। বর্তমানে এখানকার ব্যবসায়ীদের অসহায়ত্ব্যের শেষ নেই। সিটি বাজারের উন্নয়নের জন্য আমরা সংবাদ সম্মেলনসহ নানান কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে মেয়রকে অবগত করেছি। এখন ব্যবসায়ীরা সম্মিলিতভাবে কঠোর আন্দোলনের দিকে যাচ্ছি। প্রতিবাদস্বরুপ আগামী মঙ্গলবার সিটি বাজার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রয়োজনে আমরা কঠোর আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হব।
সিটি বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আলী হোসেন ছোট বাবু বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে এমন দুর্দশাগ্রস্ত বাজার চোখে পড়ে না। তবে রংপুর বিভাগের অন্যতম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন প্রধান বাজারটি এতই অস্বাস্থ্যকর যে, এখানে অনেকেই আসতে ঘৃণা প্রকাশ করে। বাজারের সামনে গেট নেই, আছে আবর্জনার স্তুপ যার পচা দুর্গন্ধে নাকে রুমাল দিয়ে রক্ষা পান না এখানে ক্রয় করতে আসা মানুষজন। এটা রংপুর সিটি কর্পোরেশনের জন্য লজ্জাজনক। কাজেই আমরা সিটি বাজারকে বাঁচাতে টেকসই উন্নয়ন দাবি করছি।
সিটি বাজারের প্রচার সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ সজিব বলেন, সিটি বাজারের উন্নয়ন আমাদের একমাত্র উদ্যেশ্য, মেয়রের মিষ্টি কথায় আমরা নরম হব না। আমাদের পাঁচ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা বাজারের ব্যবসায়ীরা আন্দোলন চালিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।
এদিকে ডিম ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের দাবি পুরণ হওয়া চাই, অনেক কষ্টে আছি আমরা। টয়লেট ব্যবহার করার উপায় নাই, কখনও রামমোহন মার্কেট কখনও জেলা পরিষদ কমিউনিটি মার্কেটে যাই বাথরুম সারানোর জন্য। বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ভাঙ্গাচোরা ড্রেন, প্রতিদিন শতশত মানুষজন পা পিছলে পড়ে।
বাজারের ভিতরে কাঁচামাল ও সবজি বিক্রেতা চান মিয়া ও শামছুল হক বলেন, বাইরে রাস্তা বন্ধ করে অসংখ্য সবজির দোকান হওয়ায় বাজারের ভিতরে দোকানগুলোর বিক্রি নেই। সুপার মার্কেটের সামন থেকে রামমোহনের পিছন ও কৈলাশ রঞ্জন মার্কেটের সামনে হয়ে সিটি বাজারের পিছন পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে খুচরা সবজি বিক্রি হয়। সিটি বাজারের ভিতরে কাঁচামাল ও সবজির দোকানগুলো প্রায় অচল সারাদিনও ১০ কেজি পেঁয়াজ ৫ কেজি টমেটো বিক্রি করতে পারি নাই। এভাবে চলতে পারে না। আমরা পরিকল্পিত সব্জির দোকানসহ সিটি বাজার চাই।
সিটি বাজারের ৬ নং ব্লোকের ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের ব্লকের এই রাস্তাটি সারাক্ষণ পানিবন্দি থাকে। ময়লা ও আবর্জনার স্তুপ সবসময় দেখতে পাবেন। সময়মত ময়লা অপসরণ না করায় কাঁদা পানির মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটুর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।