কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি।।
ধান কাটার মৌসুমে একসময় কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলজুড়ে কৃষি শ্রমিকদের ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই দৃশ্যপট বদলে যাচ্ছে। আধুনিক যন্ত্র—বিশেষ করে কম্বাইনড হারভেস্টার—এর ব্যবহারে দ্রুত ধান কাটা, মাড়াই ও ঝাড়াই সম্পন্ন হওয়ায় কৃষকদের সুবিধা বাড়লেও কর্মসংস্থান হারাচ্ছেন হাজারো কৃষি শ্রমিক।
কিশোরগঞ্জ সদর, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন, ইটনা, নিকলী—এসব উপজেলার হাওরাঞ্চলে এবার ব্যাপক হারে কম্বাইনড হারভেস্টার ব্যবহৃত হচ্ছে। সরকারের ভর্তুকি সহায়তায় অনেক কৃষক কিংবা সমবায় গোষ্ঠী এই যন্ত্র কিনেছেন বা ভাড়ায় নিচ্ছেন।
নিকলীর চরপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, “আগে ধান কাটার জন্য ১৫-২০ জন শ্রমিক লাগত। এখন একটামাত্র যন্ত্রেই এক দিনে পুরো জমির ধান তুলে ফেলি। খরচও কম।”
কিন্তু এই সুবিধার বিপরীতে কৃষি শ্রমিকদের জীবনে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ধান কাটার কাজ না পেয়ে অনেকে চলে যাচ্ছেন শহরমুখী পেশায়।
মিঠামইনের কৃষি শ্রমিক শাহাবুদ্দিন বলেন, “আগে মৌসুমে ১৫-২০ দিন কাজ পেতাম। এখন দুই-একদিন ডাক পড়ে, বাকিটা সময় বসে থাকতে হয়। কেউ কেউ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ চলে যাচ্ছে।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, সময়ের চাহিদা অনুযায়ী যান্ত্রিকীকরণ দরকার, তবে এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে গ্রামীণ শ্রমজীবীদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাও জরুরি।
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, “যন্ত্রের ব্যবহারে ধান তোলার সময় কমে আসছে, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বড় সুবিধা। তবে আমরা চেষ্টা করছি ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের নিয়ে প্রশিক্ষণ ও বিকল্প কর্মসংস্থানের প্রকল্প হাতে নিতে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ অবশ্যই সময়ের দাবি, তবে এর প্রভাব পড়ে যে বিশাল শ্রমজীবী শ্রেণির ওপর, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে একধরনের বৈষম্য তৈরি হতে পারে।
–