crimepatrol24
৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, এখন সময় বিকাল ৪:৪৩ মিনিট
  1. অনুসন্ধানী
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইটি বিশ্ব
  5. আইন-আদালত
  6. আঞ্চলিক সংবাদ
  7. আন্তর্জাতিক
  8. আফ্রিকা
  9. আবহাওয়া বার্তা
  10. আর্কাইভ
  11. ইউরোপ
  12. ইংরেজি ভাষা শিক্ষা
  13. উত্তর আমেরিকা
  14. উদ্যোক্তা
  15. এশিয়া

বর্তমান সমাজিক অবক্ষয় থেকে মুক্তি পেতে আমাদের করণীয়

প্রতিবেদক
মো: ইব্রাহিম খলিল
মার্চ ২৯, ২০২৩ ৩:৩১ অপরাহ্ণ

 

মো. ইব্রাহিম খলিলঃ
একটি পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্র ব্যবস্থা ভাল- মন্দের সংমিশ্রণেই গঠিত হবে এটাই স্বাভাবিক। একটি পরিবারের সকল সদস্যের কথা-বার্তা, চাল-চলন ও আচার-ব্যবহার যেমন এক রকম নয়, ঠিক তেমনি একটি সমাজ তথা রাষ্ট্রের মানুষের কথা-বার্তা, চাল-চলন ও আচার-ব্যবহার এক রকম আশা করা যায় না। কারণ একটি পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্রে শিক্ষিত, অশিক্ষিত, নে’শাগ্রস্ত, জুয়াড়ি, কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, চাকুরিজীবী, আলেম-ওলামা, হক্কানি পীর, ভন্ডপীর, চোর- ডাকাত, অভিনেতা- অভিনেত্রী, গায়ক-গায়িকা, ব্যবসায়ী, ডাক্তার, ইঞ্জিয়ার, শিক্ষক, পুলিশ, সাংবাদিক, কামার, কুমারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বসবাস। বিভিন্ন মানুষের পেশা এবং চাহিদাও ভিন্ন। সেকারণে সর্বক্ষেত্রে ভিন্নতা থাকাটাও স্বাভাবিক। তবে সবকিছুই সীমার মধ্যে থাকা একান্ত আবশ্যক। তাহলে এই সীমা অতিক্রম করে কেন সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নেওয়া যাক। একজন মানুষ কখনোই ভাল বা খারাপ হয়ে জন্মায় না। সে তার জন্মের পর প্রথমেই তার পিতা-মাতা, পরিবারের অন্যান্য সদস্য, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে অনুসরণ ও অনুকরণ করতে শেখে। আর সেভাবেই সে নিজেকে গড়ে তুলতে চেষ্টা করে।
আমরা যখন আমাদের সন্তানদেরকে সমাজের কোনো বাচ্চার সামনে গালমন্দ করি তখন ওই বাচ্চাটিও আমার মুখ থেকে বের হওয়া শব্দগুলো রপ্ত করে সেগুলো অন্যত্র ব্যবহার করার চেষ্টা করবে। অপরদিকে কেউ আপনার সামনে অন্য কাউকে গাল-মন্দ করলে বা কোনো অপরাধ করলে আপনি যদি তাকে তার কৃত অপরাধের জন্য শাসন করেন, তাহলে যারা তা দেখবে এবং তা অনুসরণ ও অনুকরণ করবে। তাদের মাঝে এমন ধারণা জন্মাবে যে, কোনো অপরাধ করলে তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে অথবা শাস্তি পেতে হবে। এই ভয়ে তারা অপরাধে জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকবে।

আগেকার দিনে এলাকার কোনো শিক্ষক, মুরব্বী বা আলেম ওলামাদের সমাজে অনেক সম্মান ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা নেই বললেই চলে। অধিকন্তু সমাজে শিক্ষক পি’টানো, আলেম-ওলামা ও মুরব্বীদের অ’পমান-অ’পদস্থ করা নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে পড়েছে। বর্তমানে মসজিদের সভাপতি হচ্ছেন বেনামাজি, অযোগ্য, অশিক্ষিত, টাকাওয়ালা, সু’দখোর, ঘু’ষখোর, মা’দকাসক্ত ব্যক্তিরা। আর তারা শাসন করছেন সমাজের শিক্ষিত, সভ্য ও যোগ্য ব্যক্তিদের। অর্থাৎ মুর্খরা সমাজের নেতৃত্ব দিচ্ছে আর জ্ঞানীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না সমাজের নিরীহ মানুষেরা, সর্বক্ষেত্রে শিকার হচ্ছেন চরম নি’পীড়ন ও নি’র্যাতনের। কিন্তু প্রা’ণহানি, চাকরি হারানো ও স্বজন হারানোর ভয়ে নিরব ভূমিকা পালন করছেন তারা।

বর্তমান সমাজে ছেলে-মেয়েরা বাবা-মার কথা শোনে না, স্ত্রী স্বামীকে মানে না, ছোট ভাই বড় ভাইকে মানে না, ছোট বোন বড় বোনকে মানে না, ভাতিজা চাচা-জেঠাকে মানে না, বউ শ্বশুর-শাশুড়িকে মানেনা, জামাতা শ্বশুর-শাশুড়িকে মানে না, ছাত্র শিক্ষককে মানে না, কেরানি অফিসারকে মানে না, কর্মীরা নেতাকে মানে না, বড়রা ছোটদের ভয়ে সমাজে হক কথা বলতে পারে না, মুরব্বীরা রাস্তা দিয়ে চলার সময় ছোটদের জন্য রাস্তা ছেড়ে দিতে হয়, মজলিসে ছোটরা বসে চেয়ারে আর মুরব্বীরা দাঁড়িয়ে থাকে, রাজনৈতিক মঞ্চে ছোটরা বসে থাকে বড়রা দাঁড়িয়ে থাকে, যুবকরা মাদক সেবন করে, জুয়া খেলে, ছেঁড়া প্যাণ্ট পরে, ব’খাটে স্টাইলে চুল কাটে, মেয়েরা পুরুষের মতো শার্ট প্যাণ্ট ও নেট পোশাক পরে এবং বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অপরাধ করে কিন্তু মুরব্বীরা ভয়ে কথা বলতে পারেন না। ফলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মা’দক, ধ’র্ষণ ও হ’ত্যার মতো অপরাধ। অর্থাৎ কোথাও কোনো শৃঙ্খলা নেই। আর এই বিশৃঙ্খলার মূল কারণ হলো নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়। এই যে অবস্থার সৃষ্টি হলো এর জন্য মূলত আমরা অভিভাবকরা এবং রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার দুর্বলতাই দায়ী। কারণ সমাজের যে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েগুলো এরা তো আপনার- আমারই সন্তান। আমরা যদি প্রত্যেকটি অভিভাবক নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমাদের সন্তানদের সঠিকভাবে পরিচালিত করি, তাহলে সমাজে এতো বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে না। সমাজে এমন কোনো মানুষ নেই- যে কারো কথাই শোনে না। আপনার স্ত্রী অথবা স্বামী আপনার কথা শোনে না তার সমাধান শ্বশুর-শাশুড়ি দিতে পারেন। আপনার সন্তান আপনাকে মানে না সমস্যা নেই। সে যাকে মানে তাকে দিয়ে কাউন্সিলিং করুন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

আসলে এ নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যন্য কারণগুলো হলো মানুষের মাঝে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার অভাব, লোভ- লালসা, সম্পদের পাহাড় গড়ার প্রতিযোগিতা, সমাজে ন্যায়বিচার না থাকা ইত্যাদি। একটি সমাজে ন্যায়বিচার না থাকলে সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। অনেকে মনে করেন, আমার ধন, জন ও ক্ষমতা আছে আমি সবই পারি। আসলে এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। কারণ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে সিংহাসনে বসান, আবার যাকে ইচ্ছা সিংহাসন থেকে টেনে-হেঁচরে নামিয়ে দেন। যাকে ইচ্ছা সম্পদ দান করেন যাকে ইচ্ছা তাকে মুহূর্তের মধ্যে পথের ভিখারী বানিয়ে দেন। যাকে ইচ্ছা সন্তান দান করেন আবার যাকে ইচ্ছা নিঃসন্তান বানিয়ে দেন। যাকে ইচ্ছা সম্পদ দেন কিন্তু ভোগ করার সুযোগ দেন না। যাকে ইচ্ছা ভোগ করার শক্তি দান করেন কিন্তু সম্পদই দেন না। এছাড়া এ পৃথিবীর ক্ষমতাধর বহু পালোয়ানকে তিনি মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং সেগুলো থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত যে, আমাদেরকে যেকোনো মুহূর্তে নিঃশ্বেষ করে দিতে পারেন।

এই অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে প্রথমেই সঠিক ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। সামজিকভাবে একটু কঠোর হতে হবে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে শক্ত হাতে অপরাধ
দমন করতে হবে এবং আলেম-ওলামাদেরও যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।

পরিশেষে আমাদের সবাইকে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। কারণ আপনার আমার দাদা তাদের পূর্বপুরুষদের নিকট থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে যে সম্পদ অর্জন করেছিলেন তা আপনার- আমার বাবাকে বিলিয়ে দিয়ে গেছেন, বাবারা আমাদের জন্য রেখে গেছেন, আমরাও আমাদের সন্তানদের জন্য রেখে যাব। এটাই দুনিয়ার সিস্টেম। আমরা কেউ আমাদের গড়া সম্পদ কবরে নিয়ে যেতে পারবোনা। সম্পদগুলো ভোগ করবে আমাদের পরবর্তী বংশধররা। তারা হয়তো আমাদেরকে অল্প কিছুদিন স্মরণ রাখবে। এরপর তারা আমাদের সকল স্মৃতি ভুলে যাবে। আমাদের কবর যিয়ারত করার সময়ও হয়তো তারা পাবে না। যেমনটা আমরা পাচ্ছি না। অথচ আমরা কীভাবে সম্পদ অর্জন করেছি, আমাদের জীবদ্দশায় কোন পথে তা ব্যয় করেছি তার হিসাব মহান স্রষ্টার কাছে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আমাদেরকেই দিতে হবে। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ ও বিধিবিধান অনুসরণ করে জীবিকার্জন করা এবং সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। আর আমাদের সন্তানদেরকে এমনভাবে গড়ে তোলা যাতে তারা মৃত্যুর পরেও আমাদের উপকারে আসে। আর তা করতে হলে অবশ্যই সৎ পথে উপার্জন করে আমাদের সন্তানদের মানুষ করতে হবে।

 

Share This News:

সর্বশেষ - লাইফ স্টাইল

আপনার জন্য নির্বাচিত