মো. ইব্রাহিম খলিল, হোমনা,কুমিল্লাঃ
কুমিল্লার হোমনায় সাদিয়া আক্তার (১৮) নামে এক গৃহবধূর ঝু’লন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার দুপুরে উপজেলার ভংগারচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সাদিয়া আক্তার ভংগারচর গ্রামের ফারুক মিয়ার স্ত্রী ও একই উপজেলার চরেরগাঁও গ্রামের সাহাবুদ্দিনের মেয়ে।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ৩ মাস আগে সাদিয়া আক্তারের বিয়ে হয় ভংগারচর গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে ফারুক মিয়ার সাথে। বিয়ের সময় নগদ কোন টাকা পয়সা দিতে না হলেও ১৫০ জন লোক খাইয়ে ৫০/৬০ হাজার টাকার ফার্নিচার ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র দিতে হয়েছিল সাহাবুদ্দিন কে। কিন্ত বিয়ের পর থেকেই স্বামী, শ্বশুর,শাশুড়ি ও ননদসহ বাড়ির লোকজন দামি ফার্নিচার ও মোটা অংকের যৌ’তুকের জন্য শা’রীরিক ও মা’নসিক নি’র্যাতন করতো সাদিয়াকে। এ নিয়ে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে একাধিকবার শালিসও হয়েছে।
গতকাল রোববার দুপুরে নিহতের শ্বশুর বাড়ি ভংগারচর গ্রাম থেকে সাদিয়ার ঝু’লন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের শরীরে আ’ঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলেও জানান নিহতের স্বজনরা। এ ঘটনার পর নি’হত সাদিয়ার শ্বশুরবাড়ির লোকজন পলাতক রয়েছে। নিহতের পরিবারের দাবি সাদিয়াকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন যৌ’তুকের জন্য নি’র্যাতন করে হ’ত্যার পর ফ্যানের সাথে ঝু’লিয়ে রাখা হয়েছে। তারা এ হ’ত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছেন।
হোমনা থানার এসআই আশিকুল ইসলাম বলেন, নিহতের শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন নেই, শুধু গলায় ফাঁসের দাগ রয়েছে। ঘরের ছিটকিনিও ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। পরে ঘরের দরজা ভেঙ্গে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এতে প্রাথমিক তদন্তে এ ঘটনাটি একটি আত্মহত্যা বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট আসলেই নিশ্চিত করে বলা যাবে আসলে এটি হ’ত্যা না আ’ত্মহত্যা।
নিহত সাদিয়ার পিতা সাহাবুদ্দিন জানান, বিয়ের সময় কোন ফার্নিচার বা যৌ’তুক দেয়ার কথা ছিলনা। শুধু ১৫০ জন বর যাত্রী খাইয়ে বিয়ে হয়েছে। তারপরেও মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে ৫০/৬০ হাজার টাকার ফার্নিচার ও জিনিস পত্র দিয়েছি।শনিবার সাদিয়া আক্তার আমাকে ফোন করে জানায় যৌ’তুকের জন্য তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে বে’ধড়ক মা’রধর করেছে। টাকা না দিলে রাতে তাকে মেরে ফেলার হু’মকি দিচ্ছে।
এরপর শনিবার বিকাল থেকে তার মোবাইলে বারবার ফোন করলেও কেউ ফোন না ধরায় মনে সন্দেহ হয়। রোববার সকালে লোক মারফত খবর পাই সাদিয়া আক্তার ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ফাঁ’স দিয়ে আ’ত্মহত্যা করেছে।
তিনি বলেন, আমার মেয়ে আ’ত্মহত্যা করেনি। যৌ’তুকের টাকার জন্য তাকে মেরে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছে।
কিন্ত তার স্বামীর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে হ’ত্যা মামলা করতে চাইলে ওসি স্যার আমাকে আত্মহত্যার মামলা করতে বলেন। পরে আমি মামলা না করে চলে আসি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হোমনা থানা অফিসার ইনচার্জ মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ভংগারচর গ্রাম থোকে একগৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসলেই বলা যাবে এটি হত্যা না,আত্মহত্যা।
ভিকটিমের বাবা অভিযোগ দায়ের করতে চাইলে আপনি (ওসি) তাকে আত্মহত্যার অভিযোগ দিতে বলেছেন। আপনি কি তাকে এধরনের পরামর্শ দিতে পারেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,আমি তাকে আত্মহত্যার মামলা করতে বলব কেন। পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট আসার আগে তো হত্যা মামলা নিতে পারি না। এরপর ভিকটিমের বাবা অভিযোগ না দিয়ে চলে গেছে।