
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :
ঝিনাইদহের শৈলকুপা কবিরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখার কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির জন্য নীতিমালা বহির্ভূত ও ত্রুটিপূর্ণ কাগজপত্র পাঠানোর গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এই কাজে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও মাধ্যমিক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অবৈধ লেনদেন এবং পরস্পরের যোগসাজস রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে লিখিত এক অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, কবিরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শপ এ্যাসিসট্যাণ্ট পদে প্রথম নিয়োগ পান আতিকুর রহমান ডাবলু। তাকে বাদ দিয়ে ল্যাব এ্যসিসট্যাণ্ট পদে লুৎফর রহমান ও একই পদে গিয়াস উদ্দীনকে এমপিওভুক্তির জন্য সুপারিশ করে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে লুৎফর রহমানের বয়স নিয়োগকালীন ১৮ বছর ছিল। অন্যদিকে গিয়াস উদ্দীনের জাল সনদ ও বয়স না হওয়ার পরও তাকে এমপিও ভুক্তির সুপারিশ করায় বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত আতিকুর রহমান ডাবলু অবিচার ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০০৪ সালের জনবল কাঠামোতে একটি স্কুলের কারিগরী শাখায় দুইটি শপ, ল্যাব বা কম্পিউটার ল্যাব এ্যাসিসট্যান্ট পদে নিয়োগ করা যাবে। সে হিসেবে কবিরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আতিকুর রহমান ডাবলু ও লুৎফর রহমানের নিয়োগ পর্যন্ত বৈধ ছিল। পরে অর্থের বিনিময়ে ল্যাব এ্যাসিসট্যাণ্ট পদে গিয়াস উদ্দীনকে নিয়োগ দেয় কমিটি, যা জনবল নীতিমালা বর্হিভুত। দুর্নীতি ও অনিয়ম এখানেই থেমে নেই। গিয়াস উদ্দীনের নিয়োগের টেবুলেশন সিটে কাটাকাটি রয়েছে। সেই সিটে শৈলকপা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের স্বাক্ষরও নেই। গিয়াস উদ্দীনকে বিধি বহির্ভূত ভাবে এমপিওভুক্তির সুপারিশ করে পাঠিয়ে স্কুলের সভাপতি তৈয়ব খান ও জেলা শিক্ষা অফিসার সুশান্ত কুমার দেব দুর্নীতির সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন। এদিকে ২০২০ সালের ১৩ মে কারিগরী শিক্ষা অধিদপ্তর এক অফিস আদেশে লুৎফর রহমান ও গিয়াস উদ্দীনের কাগজপত্রে ত্রুটি পেয়ে ফেরৎ দিয়েছেন। ওই আদেশে জেলা শিক্ষা অফিসারকে যাচাইয়ের জন্য বলা হলেও তিনি তা না করে আবোরো একই ত্রুটিপূর্ণ কাগজ কারিগরী শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রেরণ করেছেন।
এ ব্যাপারে স্কুলের সভাপতি তৈয়ব খান জানান, এমপিও ভুক্তির কাগজ পাঠানোতে কোন ভুল নেই। যদি থাকেও তবে সেটা কারিগরী শিক্ষা অধিদপ্তর দেখবেন। তিনি বলেন , আতিকুর রহমান ডাবলু অন্য ট্রেডে নিয়োগ। তাই তার এমপিও ভুক্তির আবেদন করা হয়নি।
স্কুলটির প্রধান শিক্ষক এনামুল হক বলেন, আমি স্কুল সভাপতির বাইরে যেতে পারি না। তিনি যেটা নির্দেশ করেছেন আমি সেটাই করতে বাধ্য হয়েছি।
এদিকে শৈলকুপার গাড়াগঞ্জ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহীম খলিলসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক- কর্মচারীর এমপিও ভুক্তির জন্য কাগজপত্র প্রেরণ করলেও জেলা শিক্ষা অফিসার সুশান্ত কুমার দেব কোন অজুহাত ছাড়াই বিদ্যালয়ের সহকারী গ্রন্থাগারিক এবং শৈলকুপা ফাযিল মাদরাসার সহকারী গ্রন্থাগারিকের এমপিও ভুক্তির কাগজ খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ে প্রদান না করে বাতিল করে দেন। পরবর্তীতে পুনরায় শৈলকুপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইন আবেদন করা হলে তিনি তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন এবং প্রধান শিক্ষক ইব্রাহীম খলিল ও শৈলকুপা ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ এ,এস,এম আক্তারুজ্জামানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। অভিযোগ উঠেছে ধার্য্য তারিখের পরেও (১৮ই জুন ২০২০) জেলা শিক্ষা অফিসার শৈলকুপার সারুটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দিগনগর ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বাতিল করা শিক্ষক কর্মচারীর কাগজপত্র এমপিওভুক্তির জন্য আঞ্চলিক কার্যালয়ে প্রেরণ করেছেন।
ঝিনাইদহের শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, জেলা শিক্ষা অফিসার সুশান্ত কুমার দেবের মানসিক নির্যাতন ও খারাপ আচরণে তারা অতিষ্ঠ। জেলা শিক্ষা অফিসার সুশান্ত কুমার দেব তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কারো কাছ থেকে টাকা নিয়েছি কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না। তিনি বলেন, যে সব শিক্ষক কর্মচারীর এমপিও ভুক্তির কাগজ পাঠানো হয়েছে তা সবই আইন মেনে করা হয়েছে। বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার চালানোর জন্য একটি মহল এহেন মিথ্যা অভিযোগ তুলছে বলে তিনি মনে করেন।