মিজানুর রহমান , শেরপুর জেলা প্রতিনিধি : স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও শেরপুরের ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীতে শহর রক্ষার বাঁধ নির্মাণ না করায় এই নদী এখন জনগণের কাছে আর্শিবাদ না হয়ে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
একদিকে নদীটি খনন না করায় হারিয়েছে তার নাব্যতা। অপরদিকে নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে অবৈধভাবে বসতবাড়ী নির্মাণ করায় খরস্রোতা নদীটি একটি খালে পরিণত হয়েছে।
যে কারণে প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে অবিরাম বর্ষণ আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি হয়।
এতে উপজেলা শহরের আশেপাশে বেশ কয়েকটি জায়গায় ভেঙ্গে গিয়ে ঢলের পানি উপজেলার সদর বাজার, অফিস -আদালত সহ বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয় সাধারণ মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে মহারশি নদী। কালের বির্বতনে খরস্রোতা নদীটি খনন না করায় হারিয়েছে তার নাব্যতা।
অপরদিকে নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে অবৈধভাবে বসতবাড়ী নির্মাণ করায় দিনে দিনে নদীটি সংকুচিত হয়ে খালে পরিণত হয়েছে। এতে বর্ষার মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি হয়। যে কারণে দু’পাড়ের কাঁচা বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে
উপজেলার বিভিন্ন অফিস, কোটি টাকা রাজস্ব্য আদায়ের সদর বাজার, নদীর তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের শত শত বাড়িঘর সহ
হাজার হাজার একর ফসলী জমিতে পানি প্রবেশ করে। এতে বিপাকে পরে মানুষ।
ক্ষয়-ক্ষতি হয় লক্ষ লক্ষ টাকা সহ রাস্তা ঘাটের। শুধু তাই নয়, বেড়িবাঁধ না থাকায় হুমকির মুখে রয়েছে কয়েকটি গ্রাম সহ দিঘীরপাড় ফাযিল মাদরাসা। যে কোন সময় নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে রামেরকুড়া পুর্বপাড়া ও দিঘীরপাড় ফাযিল মাদরাসা সহ কয়েকটি গ্রাম। প্রতিবছর ঢলে ক্ষতিগ্রস্তের পর জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সাময়িক নড়েচড়ে বসলেও পরে আর খবর থাকেনা।
অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড এই নদীতে বেড়িবাঁধের মাপযোগ করেই কাটিয়ে দিয়েছে প্রায় দুই যুগ। ফলে
বেড়িবাঁধ না থাকায় ঝিনাইগাতীর মহারশি নদী এখন স্থানীয় জনগণের কাছে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
এ বছরেই পাহাড়ি ঢল হয়েছে চারবার। এরমধ্যে চতুর্থ ঢলে রামেরকুড়া পূর্বপাড়া, খৈলকুড়া, দিঘীরপাড় গ্রাম সহ ৪টি জায়গায় ভেঙ্গে যায়। এতে দিঘীরপাড় গ্রামে তিনটি বাড়ীঘর ঢলের পানিতে দুমড়ে মোচড়ে ভেঙ্গে গিয়ে সেখানে গভীর খাদে পরিণত হয়েছে। সেখানে আরো কয়েকটি বাড়ীঘর ব্যাপক হুমকির মুখে রয়েছে। পাহাড়ি ঢল আসা মানেই নদীর পাড়ে বসবাসকারি পরিবারগুলো আতংকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল আলম রাসেল বলেন নদীতে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্যে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ভাঙ্গনগুলোতে ইতিমধ্যেই জিও ব্যাগ দ্বারা আপদকালীণ কাজ করা হচ্ছে। পাকা বাঁধ নির্মাণের জন্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদন পেলেই দ্রুত নির্মাণ করা হবে মহারশি নদীতে বেড়িবাঁধ।