ক্রাইম পেট্রোল ডেস্ক :
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদে জৈব প্রযুক্তিতে স্বাস্থ্য সম্মত বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন বিষয়ক এক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৮ নভেম্বর সোমবার সকাল ১০টায় কোস্ট ট্রাস্ট এর আয়োজনে ও ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) এর অর্থায়নে এ জৈব শুঁটকি উৎপাদন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিউট, কক্সবাজার উপকেন্দ্রের প্রধান ড. জুলফিকার আলী, কোস্ট ট্রাস্ট(আইওএম) প্রকল্পের শুঁটকি মাছের মান-নিয়ন্ত্রক কৃষিবিদ আবুল কাশেম। এছাড়াও কোস্ট ট্রাস্টের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।উত্তম পরিচর্যার মাধ্যমে কাঁচা মাছের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস ও শুঁটকির উন্নয়ন, জৈব শুঁটকি উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণে আলোচনা করা হয়।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জুলফিকার আলী বলেন, পুষ্টিগত দিক হতে শুঁটকি মাছ একটি উচ্চ আমিষ জাতীয় খাদ্য। প্রজাতিভেদে এতে আমিষের পরিমাণ শতকরা ৫০-৭৫ ভাগ। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো শুঁটকিতে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এ মূল্যবান ভোগ্য পণ্যটি আজ মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চয়তায় বিষমুক্ত জৈব শুঁটকি উৎপাদন একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
জৈব শুঁটকি উৎপাদনে বি,এফ,আর,আই উদ্ভাবিত মেকানিক্যাল ফিশ ড্রায়ার ব্যবহারের গুরুত্ব উল্লেখপুর্বক তিনি বলেন, এ পদ্ধতিতে যে কোনো ধরনের দূষণ নিয়ন্ত্রণ করে গতানুগতিক পদ্ধতির চেয়ে কম সময়ে শুঁটকি শুকানো যায়। এই পদ্ধতি শুঁটকি শুকানোর জন্য খারাপ আবহাওয়া ও রাত্রি বেলায় সমানভাবে কার্যকরী।তিনি মহেশখালীতে জৈব শুঁটকির অপার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে আরও বলেন , আগামীতে অপ্রচলিত মৎস্য পন্য হিসেবে শুঁটকি বিদেশে বিশাল বাজার দখল করবে।
এ বিষয়ে জৈব শুঁটকির মান-নিয়ন্ত্রক ও প্রশিক্ষক আবুল কাশেম বলেন, আমরা মহেশখালী উপজেলার পৌরসভা,মাতারবাড়ি,ধলঘাটা,কুতুবজোম,ঘটিভাঙ্গা ও সোনাদিয়ার প্রায় ২০০ জন শুঁটকি উৎপাদনকারীকে জৈব প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ দিয়ে মশারি জালযুক্ত মাঁচা এবং ফিশ ড্রায়ার ব্যবহার করে জৈব শুঁটকি উৎপাদনে সহায়তা করে যাচ্ছি। এতে আরো ৫০০ জন উৎপাদনকারি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
শুঁটকির মান নিয়ন্ত্রণক এই কর্মকর্তা আরো বলেন, চাষীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি একটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল প্রদান করা হয় যাতে জৈব শুঁটকি উৎপাদনের বিভিন্ন কলাকৌশল এবং সংরক্ষণের উপায় বর্ননা করা হয়েছে। এছাড়াও ভিডিও মডিউল প্রদর্শন, লিফলেট বিতরণ, সভা- সেমিনার করেও চাষীদের জৈব শুটকি উৎপাদন বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণ করা হচ্ছে। উৎপাদিত শুঁটকি ক্রয়ের জন্য আমরা সীড ফান্ড প্রদান করে কয়েকজন উদ্যোক্তা তৈরি করেছি যারা ই-বিজনেস সেন্টারের মাধ্যমে অনলাইন ভিত্তিতে সারা দেশে বিষমুক্ত জৈব শুঁটকি বাজারজাতকরণ করে যাচ্ছে। ফলে চাষীদের জন্য বাজারমূল্য এবং বাজারজাতকরণ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।
এ বিষয়ে মহেশখালীর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিমেল চন্দ্র রায় বলেন, কোস্ট ট্রাস্ট যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফিশ ড্রায়ার এবং মাঁচা ব্যবহার করে বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত জৈব শুঁটকির প্রচুর চাহিদা বাজারে রয়েছে। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে নিরাপদ শুঁটকি উৎপাদন করে চাষীরা অনেক লাভবান হতে পারবে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এ প্রক্রিয়া চলমান রাখার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।
প্রকল্প সমন্বয়কারী জিয়াউর রহমান বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চয়তার অংশ হিসেবে জৈব শুঁটকি উৎপাদন প্রক্রিয়া একটি সময়োপযোগী প্রকল্প। তাই এ ধরনের কার্যক্রমে অর্থায়ন করার জন্য আমি আইওএম কে ধন্যবাদ জানাই। সেইসাথে এ ধরনের প্রকল্প চলমান রাখার জন্য তিনি অন্যান্য দেশী-বিদেশী দাতা সংস্থাকেও এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেন।