মোঃ পারভেজ আলম, জেলা প্রতিনিধি, ঢাকা>>
রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পর দু’জনের শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে গত শনিবার একজন মারা যান। এটাই দেশে এই ফাঙ্গাস এর কারণে প্রথম মৃত্যু। তবে সেটা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট কি না, পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে ল্যাবে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস দেশে আগে থেকেই ছিল। গোবরে, আকাশে, বাতাসে ছত্রাকটি আছে। এছাড়া অপরিচ্ছন্ন স্থান থেকেও এটা হতে পারে। খুবই ছোঁয়াচে একটা রোগ এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। এতে আক্রান্ত হলে মৃত্যুহার ৫০ থেকে ৫৪ শতাংশ। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সতর্ক থাকতে হবে। যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হতে পারেন। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। আইসিইউতে এই ওষুধ বেশি ব্যবহূত হয়। এই ওষুধ ব্যবহারের ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ক্যান্সার রোগী, কিডনি রোগী ও এইডস রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। করোনায় আক্রান্ত রোগীর ওপর স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ বেশি প্রয়োগ করা হয়। তাই করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে বাড়ে সেই জন্য ডাক্তারের পরামর্শে থাকতে হবে।
গতকাল ২৫ মে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি বলেন, ‘ভারতের নতুন ভ্যারিয়েন্টের পাশাপাশি ব্ল্যাক ফ্যাঙ্গাসও দেশে চলে এসেছে। তবে এই মুহূর্তে খুব বেশি ভয়ের কারণ নেই। কারণ এখন পর্যন্ত এটি দেশে ছড়িয়ে পড়েনি। আগাম সতর্কতা হিসেবে দেশের বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিকে ব্ল্যাক ফ্যাঙ্গাসের ওষুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে এবং একই সঙ্গে এই রোগের উপযুক্ত চিকিৎসায় করণীয় কী হবে সে ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কালো ছত্রাক তথা মিউকরমাইকোসিস খুবই বিরল সংক্রমণ। মাটি, গাছপালা, বিষ্ঠা এবং পচা ফল ও সবজি থেকে যে কেউ এর সংস্পর্শে আসতে পারেন। মাটি ও বাতাস এবং এমনকি সুস্থ মানুষের নাকে বা কফেও এটা পাওয়া যায়। যাদের মধ্যে এর সংক্রমণ ঘটেছে, তাদের মাথাব্যথা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে রক্তা পড়া, মুখের একপাশ ফুলে যাওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া বা ব্যথা করা, চোখের পাপড়ি ঝরে পড়া, ঝাপসা দেখা এবং এক সময় দৃষ্টি হারানোর মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে নাকের আশপাশে চামড়ায় কালচে দাগ দেখা দিতে পারে। এ ছত্রাক সাইনাস, মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে আক্রমণ করে। ডায়াবেটিস, এইডস বা ক্যান্সারে যারা আক্রান্ত, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দারুণভাবে দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে এ সংক্রমণ প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগটি এদেশে আগেই ছিল। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। করোনামুক্ত হওয়ার পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে বাড়ে সেজন্য চিকিৎসকের পরামর্শে থাকতেও বলেন তিনি।