
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি>>
ঝিনাইদহের ডাকবাংলা সাধুহাটি এলাকার মাঠে মাঠে চলছে অবৈধ পুকুর খনন। খাল, বিল ও ফসলের মাঠে পুকুর কাটায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সাধুহাটি বীজ উৎপাদন কামারের ২২ একর বীজ খেতসহ পাশ্ববর্তী এলাকার কয়েক হাজার একর জমির আউস, আমন, বোরো ও রবি ফসলের জমি পানির নীচে তলিয়ে যাচ্ছে। এলাকার কৃষক ও বীজ উৎপাদন কামারের কর্মকর্তা অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেননা। তারা এলাকার প্রভাবশালী পুকুর মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ধান ও ফসলের জমি রক্ষার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
এলাকাবাসীরা জানান, ডাকবাংলা, সাধুহাটি, মধুহাটি সাগান্না ইউনিয়ন সহ পাশ্ববর্তী এলাকার তিন ফসলি উর্বর জমি। এসব এলাকার মাঠে মাঠে ধান, পাট, আখ, ছোলা মুগ, মসুরসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। মাঠের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন বিল ও খাল দিয়ে বর্ষা মৌসুমে পানি নবগঙ্গা, ইছামতি ও চিত্রা নদীতে পৌঁছায়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সাধুহাটি সরকারি বীজ উৎপাদন খামারের নিচে নলবিলের বুকে, মাগুরাপাড়া ও নাথকুন্ডু গ্রামের খালের মুখে, সাধুহাটির ছাইভাঙ্গা বিল ভেদুড়ের বিল, বংকীরা বিলসহ বিভিন্ন বিলের মাঝে এবং সরকারি বেসরকারি উঁচু ফসলের জমিতে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা একের পর এক ঘের ও পুকুর কেটে চলেছেন। তাদের দলীয় ক্ষমতার দাপট আর হুমকি ধামকির কারণে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। অসহায় কৃষক ইচ্ছা না থাকলেও বাধ্য হয়ে প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে জমি লিজ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকের জমি ইতোমধ্যে অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে পুকুরের বিরুপ প্রভাবে।
এলাকাবাসী জানান, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে জানানোর পরও কোনো প্রতিকার তারা পাননি।
এ বিষয়ে সাধুহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজি নাজিরউদ্দিন জানান, পুকুর খননের প্রভাবে এলাকার ডাকবাংলা, মাগুরাপাড়া, পোতাহাটি, সাধুহাটি অঞ্চলের ২০ থেকে ৩০টি মাঠ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
সাধুহাটি বীজ উৎপাদন খামারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ মজিবর রহমান জানান, বিলে ও মাঠে পুকুর খননের কারণে তার ফার্মের ১২একর বিজতলা পানির নীচে তলিয়ে আছে। পানি বাড়লে বর্ষাকালে ২২ একর তলিয়ে যায়। ফলে দেশের প্রথম ভিত্তিবীজ উৎপাদনকারী এ কৃষি খামার খেকে ২২ একর জমির বীজ সরবরাহ থেকে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি আরো জানান, এবিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসক ও কৃষি বিভাগকে অবহিত করেছেন। তবে এখনও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, কিছু দিন পুর্বে জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ তার দফতরের লোক ও পুলিশ পাঠিয়ে স্থানীয় একটি পুকুর কাটা বন্ধ করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট পুকুর মালিক আবার সাধুহাটি কৃষিফার্ম সংলগ্ন জমিতে নতুন করে মেশিন লাগিয়ে রাতে পুকুর কেটেছে।
সাগান্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন আল্ মামুন জানান, ওসব পুকুর-ঘের কাটার কারণে তার এলাকার স্বাভাবিক ফসলের জমি পানিতে ডুবে যাচ্ছে।
একই অভিযোগ, মাগুরাপাড়া গ্রামের প্রবীণ সমাজসেবক আব্দুল বারি মিয়া, কৃষক রফিকুল ইসলাম, মামুন শিয়ার আব্দুল মতিন, সাবেক চেয়ারম্যান বাকের আলী বিশ্বাস, আবুল কাসেম বিশ্বাস, মিজানুর রহমানসহ এলাকার শতাধিক জমি মালিকদের।
পোতাহাটি গ্রামের কৃষক সামছদ্দিন জানান, এ মাঠে নাথকুন্ডুর এলাহী বক্স নামের একজন সবচেয়ে উঁচু মাঠ বলে পরিচিত ঘোপের মাঠ, সেখানে পুকুর কেটেছেন। ফলে ওই মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। অথচ সেখানে আগে আখ, পাট, ধান, ছোলা, মসুরসহ আউস ধান চাষ হতো। প্রভাবশালী আনার হোসেন, তিনি নল বিলের মাঝে বিশাল অট্টালিকা বানিয়ে ২০০ বিঘা জমিতে পুকুর কেটে অন্যের ক্ষতি করে মাছের চাষ ও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার দেখাদেখি অনেকেই এখন পুকুর ও মাছ চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তিনি জেলা প্রশাসনের বিনা অনুমতিতে বিলের বুকে বিশাল প্রাসাদ তৈরি করেছেন। পাশে বিলের বুকে পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করে মাছ চাষ করছেন। তিনি কারো কথা তোয়াক্কা করছেন না। এক সময় তিনি চরমপন্থিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা ছিলেন বলে এলাকায় প্রচার আছে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কেউ জমির শ্রেণির পরিবর্তন ঘটাতে পারেন না। তিনি ধানের মাঠে পুকুর খনন খাল-বিলের বুকে ও সরকারের জমিতে পুকুর ও ঘের কেটে পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করে সাধারণ কৃষকের জমি ক্ষতি করার জন্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা ৪টি সার্ভে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছি। কমিটি কে কে, কোথায় কোথায় অবৈধভাবে জমির ক্ষতি করে পুকুর কেটেছেন তার তালিকা করবে। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে এবং ফসল চাষের নিশ্চিত পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। কোনো ভাবেই পুকর খননকারী প্রভাবশালীরা ছাড় পাবেন না।