ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহ আদালতে সামস্ আরেফিন অনু নামের এক গাড়ি ব্যাবসায়ীর বিরুদ্ধে ‘ধ-র্ষ-ণ’ মামলা করার পর ফের সেই অনুর বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাবের অভিযোগে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করলেন স্বপ্না কর্মকার নামে এক নারী। ধ-র্ষ-ণ মামলা পর কুপ্রস্তাবের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলনের ঘটনায় শহরজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। শহরের মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকান গুলোতে চলছে কানাঘুষা। সামস্ আরেফিন অনু খোর্দ্দ ঝিনাইদহ শহরের চাকলা পাড়া এলাকার মৃত শরীফুল ইসলামের ছেলে ও স্বপ্না কর্মকার একই এলাকার সনৎ কর্মকারের স্ত্রী। অনুর স্ত্রী নুরুন্নাহার অসুস্থ থাকার কারণে ৪ই সেপ্টেম্বর শনিবার সকালে খোর্দ্দ ঝিনাইদহের চাকলাপাড়া নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন অনু ও তার পরিবারসহ এলাকাবাসী।
সংবাদ সম্মেলনে সামস্ আরেফিন অনু বলেন, আমার সাথে স্বপ্না কর্মকারের দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রেমের সম্পর্ক চলা অবস্থায় গত এক বছর পূর্বে স্বপ্না কর্মকার ঝিনাইদহ সদর থানায় আমার বিরুদ্ধে দেনা পাওনার বিষয়ে একটি অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। ১৭/০৮/২০২০ ইং তারিখে সেই অভিযোগের বিষয়ে উভয় পক্ষের মতামতে থানায় লিখিত আকারে আপোস মীমাংসা সম্পন্ন হয়। আপোসের এক বছর পরে ০৪/০৮/২০২১ ইং তারিখে স্বপ্না কর্মকার আমাকে ফোন করে মোবাইল ফোনে মিথ্যা ধ-র্ষ-ণ মামলায় ফাঁসানোর হুমকি প্রদান করে। যেটা আমার মোবাইলে কল রেকর্ডে সংরক্ষিত রয়েছে। মোবাইল ফোনে মিথ্যা ধ-র্ষ-ণ মামলায় ফাঁসানোর হুমকির পর পরই স্বপ্না কর্মকার ঝিনাইদহ জজ কোর্টে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালতে ১৬/০৮/২০২১ ইং তারিখে আমার বিরুদ্ধে একটি ধ-র্ষ-ণ মামলা দায়ের করে। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে (নারী ও শিশু পিটিশন নং-২২০/২০২১) ঝিনাইদহ অফিস ইনচার্জ সদর থানাকে মামলাটি গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করে। বর্তমানে মামলাটি ঝিনাইদহ সদর থানায় তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে ধ-র্ষ-ণ মামলা করার পর ফের কুপ্রস্তাবের অভিযোগ এনে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে কীভাবে সংবাদ সম্মেলন করল স্বপ্না? ধ-র্ষ-ণের পর কুপ্রস্তাব দেই কীভাবে? সমাজের আমজনতার কাছে আমার প্রশ্ন রইল। তাছাড়া আমি কোনো সাংবাদিক না। আমার গাড়ির ব্যবসা রয়েছে। আমাকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আমাকে ও সাংবাদিক সমাজকে অপমানিত করেছে স্বপ্না। আমি তার বিচার দাবি করছি। তাছাড়া স্বপ্না কর্মকারের পিছনে কারা ইন্ধন দিয়ে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা ও সংবাদ সম্মেলন করাচ্ছে তাদের খুঁজে বের করে আমি তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।
অনু আরো বলেন, আমাকে খুন, জখম, মিথ্যা ধ-র্ষ-ণ মামলায় ফাঁসানোর হুমকির প্রতিবাদে ১৭/০৮/২০২১ ইং তারিখে আমি ঝিনাইদহ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে একটি সাত ধারায় মামলা দায়ের করি। সাত ধারা মামলাটি চলমান অবস্থায় আমি জানতে পারি ১৬/০৮/২০২১ ইং তারিখে স্বপ্না কর্মকার আমার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা ধ-র্ষ-ণ মামলা দায়ের করেছে। উক্ত মামলার স্বাক্ষী স্বপ্না কর্মকারের শাশুড়ি মিনতি রানী কর্মকার, স্বামী সনৎ কর্মকার, তার মেয়ে সুজাতা কর্মকার বর্ষা ও উজ্জল বিশ্বাস।
অনুর স্ত্রী নুরুন্নাহার বলেন, ০৪/০৮/২০২১ ইং তারিখে সকাল ১১ টার সময় সনৎ কর্মকার ও স্ত্রী স্বপ্না কর্মকার অজ্ঞাত কারণে আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে আমাকে বাড়িতে একা পাইয়া চুলের মুঠি ধরিয়া টানা হেচড়া করে কাপড় চোপড় খুলে বে-আব্রু সহ শ্রীলতাহানি করে। এসময় আমার গলায় থাকা ৮ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নিয়ে খুন জখম ও মিথ্যা মোকদ্দমায় ফাঁসাইবে বলে হুমিক দিয়া চলে যায়। এ ঘটনার পর আমি বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়ায় ম্যাজিস্ট্রেট ঝিনাইদহ সদর আমলী আদালতে ১১৪/৩২৩/৩৫৪/৪২৭/৩৭৯ ও ৫০৬ দন্ডবিধি আইনে স্বপ্না কর্মকার ও তার স্বামী সনত কর্মকারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দাখিল করি। বর্তমানে সেই মামলাটি ঝিনাইদহ সদর থানায় তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে।
তিনি বলেন, আমার স্বামীকে ও তার টাকা না হাতাতে পেরে স্বপা পাগলের মত আচরণ করে আমার স্বামীর মানহানি করছে ও সমাজে অপমানিত করছে। আমি স্বপ্নার জোর বিচার দাবী করছি।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে শামস আরেফিন অনু ও তার স্ত্রী নুরুন্নাহারসহ এলাকাবাসীদের মধ্যে সাধন কর্মকার, আব্দুর রাজ্জাক, সাদ্দাম হোসেন এবং জয় কর্মকার বলেন, স্বপ্না কর্মকার চাকলাপাড়া এলাকায় তার নিজ বাড়িতে অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যকলাপ চালাতে থাকলে আমরা এলাকাবাসী স্বপ্না কর্মকারের অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ও বন্ধ করতে গত ২০শে আগস্ট এলাকার ৪৩ পরিবার স্বাক্ষর বিশিষ্ট একটি অভিযোগ পত্র প্রস্তুত করে আমারা পুলিশ সুপার, ঝিনাইদহ, কোম্পানী কমান্ডার সিপিসি-২ র্যাব-৬, ঝিনাইদহ, অফিসার ইনচার্জ (ডিবি), ঝিনাইদহ, মেয়র ঝিনাইদহ পৌরসভা, সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, প্রেস ক্লাব, ঝিনাইদহ ও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, ঝিনাইদহ জেলা কমিটিতে প্রেরণ করি। অভিযোগ পত্রে আরো উল্লেখ রয়েছে, স্বপ্না কর্মকার শহর থেকে বিভিন্ন লোকজন নিয়ে এসে তার নিজ বাড়িতে অনৈতিক কার্যকলাপ করে। এলাকাবাসীসহ সমাজের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন সময় স্বপ্নাকে এসব অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যকলাপ করতে নিষেধ করা সত্ত্বেও ও স্বপ্না কর্মকার কারো কথার তোয়াক্কা না করে বহাল তবিয়তে তার অনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। স্বপ্না কর্মকারের কারনে আমরা এলাকাবাসী অতিষ্ট হয়ে পড়েছি। ১৩/১০/২০১৯ তারিখে স্বপ্না কর্মকারের স্বামী সনৎ কর্মকার তার স্ত্রী’র এসব কমর্কান্ডে বাধা দেওয়ার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে স্বপ্না কর্মকার তার স্বামী সনত কর্মকারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে (সংশোধিত-০৩) এর ১১(গ) ধারায় কোর্টে একটি মামলা করে স্বপ্না কর্মকার। সেই মামলাটি আদালতে বিচারধীন রয়েছে। যাহার নাম্বার ঝিনাইদহ জি আর-৬১৩/১৯ ও এনটিসি ১১৫/২০।
সাধন কর্মকার আরো জানান, স্বপ্না কর্মকারের শ্বাশুড়ি ও ভাশুর শ্যামল পরিবারকে নিয়ে স্বপ্না কর্মকারের অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যকলাপে অতিষ্ট হয়ে নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যাত্র ভাড়া বাড়িতে চলে যায়। অভিযোগ পত্রানুযায়ী স্বপ্না কর্মকার বিভিন্ন লোক জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা ধ-র্ষ-ণ মামলাসহ মানুষকে নিজ বাসস্থানে জিম্মি করে অর্থ আদায় করে আসছে। এলাকায় স্বপ্না কর্মকার একজন মামলাবাজ হিসেবে পরিচিত। স্বপ্না কর্মকার তার বাসস্থানে দিন রাত বিভিন্ন লোকজন নিয়ে এসে মাদক সেবনসহ মাদক বিক্রয়ের আড্ডাখানা তৈরি করায় আমাদের ছেলে-মেয়েরা ঠিকমত সামাজিক পরিবেশ রক্ষা করিতে পারছে না আমারাসহ এলাকাবাসীর সম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। স্বপ্না কর্মকারের অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যকলাপের বিষয়ে এলাকার লোকজন স্বাক্ষী আছে। স্বপ্না কর্মকার বর্তমানেও তার নিজ বাসস্থানে তার অনৈতিক কর্মকান্ড বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছে। তাকে কিছু বললে বিভিন্ন ভয়ভীতিসহ মিথ্যা মামলা দেওয়ার হুমকি প্রদর্শন করছে। স্বপ্না কর্মকারের কারণে এলাকায় যে কোন সময় আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গের সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। এমতাবস্থায় একালাবাসীদের জন্য আইনী সহায়তা একান্ত প্রয়োজন বলে অভিযোগ পত্র থেকে জানা যায়।
এদিকে ২৩/০৮/২০২১ ইং তারিখ সনৎ কর্মকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, অপহরণকারী, ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য ও স্বপ্না কর্মকারের বিরুদ্ধে সকল কু-কাজের সহযোগী হিসেবে ফৌজদারী দন্ডবিধী আইনের ৩৬৩, ৩৬৫, ৩৭৯ ও ৩৪ ধারায় ঝিনাইদহ বিজ্ঞ সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে একই গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে তরিকুল ইসলাম (২৬) একটি মামলা দাখিল করে। যাহার মামলা নং-ঝি-পি ২০৬/২১, তারিখ: ২৩/০৮/২০২১। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন) প্রতিষ্ঠানে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ প্রদান করে।
এবিষয়ে বক্তব্য নিতে চাইলে ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের মোস্তফা কাউন্সিলর তার মোবাইল ফোন রিসিভ করেন নি। স্বপ্না কর্মকারের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।