আবু সায়েম মোহাম্মদ সা’-আদাত উল করীম: জামালপুর জেলা সদর উপজেলায় অবস্থিত ঝালা গোপালপুর কলেজের অধ্যক্ষের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে উপাধ্যক্ষ ফরহাদ উদ্দিন অনশন ও প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খোলা চিঠি দিয়েছেন। তিনি গত দুইদিন ধরে অনশন করে অসুস্থ হলে জামালপুর শহরের বকুল তলায় সুফিয়া হার্ট সেন্টারে ভর্তি হন। এ খবর পেয়ে ২ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় জামালপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ তার অনশন ভাঙান। তার লেখাটি পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো। প্রিয় সভানেত্রী, মুজিবীয় সালাম নিবেন। আমি আপনার সংগঠনের একজন নগণ্য কর্মী।প্রায় চল্লিশ বছর যাবাৎ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত আছি। জাতির পিতাকে স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল।১৯৭৫ সালে আমি যখন জামালপুর জিলা স্কুলের ছাত্র তখন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রেডিওতে ঘোষণা শুনলাম বঙ্গ পিতা, বঙ্গমাতাসহ সকলকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। সেদিন আপনার হৃদয়ে যেমন করে রক্তক্ষরণ হয়েছিল ঠিক তেমনি করে আমার হৃদয়েও রক্তক্ষরণ হয়েছিল। সেই ক্ষত আজও শুকায় নাই। স্কুল জীবন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন কালীন ছাত্র লীগের রাজনীতি সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে স্বৈরাচার বিরোধী প্রতিটি আন্দোলন- সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছি। পিতাসহ সকল শহীদদের হত্যার বিচার চেয়ে রাজপথে আন্দোলন করেছি। শুধু রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকে এলাকার মানুষের সেবা করার আশায় ভালো চাকুরি পেয়ে তা প্রত্যাখান করে আমি ১৯৯৪ সালে জামালপুর সদর উপজেলার অর্ন্তগত ঝাওলা গোপালপুর কলেজে প্রভাষক পদে যোগদান করি। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অত্র কলেজের অধ্যক্ষ’র নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ডিজি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এর নির্দশে ২০০৭ সালে গভর্নিং বডি কর্তৃক বরখাস্ত হয়। আমি ২০১১ সালে ১ অক্টোবর উপাধ্যক্ষ পদে যোগদান করি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে ২০১৫ সালের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করি। গভর্নিং বডির নির্দেশ মোতাবেক ১২ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে জামালপুর সদর থানায় মামলা কারি। মামলাটি বর্তমানে চীফ জুডিশিয়াল আাদালতে বিচারাধীন আছে।পরবর্তীতে মেফাজ্জল হোসেন আদালতকে ম্যানেজ করে ২০১৫ সালের ১২ অক্টোবর তারিখে পুর্নবহাল হয়ে সাধারণ শিক্ষক- কমর্মচারী ও আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের উপর নির্যাতন শুরু করেন। দুদকের মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বিজ্ঞ আদালত আমার বিরুদ্ধে কোন তথ্য প্রমাণ না পাওয়ায় ২০১৭সালে আমাকে বেকসুর খালাশ দেন। অধ্যক্ষ ও এমপি সাহেব ও স্থানীয় কিছু হাইব্রিড আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় আমার বেতন ভাতা বারবার স্থগিত করতে থাকেন । আমাকে কোন কাজ করতে দেন নাই। এমতাবস্থায় জেলা আওয়ামী লীগের সুযোগ্য সাধারণ সম্পাদক জনাব ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সার্বিক সহযোগিতায় আমি বেতন -ভাতাসহ সব কিছু ফিরে পাই। এদিকে এমপি সাহেবের অজান্তে অধ্যক্ষ সাহেব গোপালপুর বাজারে এশিয়ান এজেন্ট ব্যাংকে একটি ব্যাংক হিসাব খোলেন। উক্ত ব্যাংক হিসাবে তিনি এমপি সাহেবকে অপারেটর মনোনীত না করে প্রায় ৩৭ লক্ষ টাকা ছাত্রদের নিকট থেকে বিভিন্ন ফি বাবদ আদায় করে আত্মসাৎ করেন। এ বিষয়ে বর্তমান এমপি সাহেবকে সকল শিক্ষক- কর্মচরী নালিশ করলে তিনি কোন প্রতিকার করেন নাই। উপরন্তু শিক্ষক প্রতিনিধি খোরশেদ আলম প্রতিবাদ করায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। অধ্যক্ষ সাহেবের অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললে কারণ দর্শানো নোটিশ ছাড়াই সাময়িক বরখাস্ত করাসহ বেতন- ভাতা বন্ধ করা হয় । এ যাবৎ ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষকের বেতন- ভাতা বন্ধ করা হয়েছে । ফলে সকল শিক্ষক- কর্মচারী সর্বদা আতঙ্কগ্রস্ত থাকে। এ যাবৎ আমার বেতন- ভাতা কোন কারণ ছাড়াই ৪ বার বন্ধ করা হয়েছে। আমি বিগত মার্চ মাসে চলমান মামলায় তাদের চাপে আপোস মীমাংসাপত্র দাখিল করি। কিন্ত তিনি আপোসের সকল শর্ত ভঙ্গ করে আমার মে/১৯ মাসের বেতন- ভাতা বন্ধ করে দেন। আমি হার্টের রোগী, ঘরে খাবার নাই, ঔষধ নাই, বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছি। সামনে ঈদ, এমপির কাছে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে অনেক অনুরোধে করলাম। কিন্তু কিছুতেই তার পাথর মন গললো না। আদালত বন্ধ এমপি সাহেব জানিয়ে দেন, মামলা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আমার পূর্নাঙ্গ বেতন- ভাতা দেওয়া হবে না। ৪০ বছর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার পর আমার যদি এই করুন পরিনতি হয়, তাহলে আপনার অন্য কর্মীদের কী করুণ অবস্থা তা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারেন । বর্তমান এমপি জামাত বিএনপি ও কিছু হাইব্রিড ছাড়া কাউকে মূল্যায়ন করেন না। এযাবৎ ১৩ জন কৃর্মচারীর নিয়োগ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা অধ্যক্ষ ভাগ ভাটোয়ারা করে খেয়েছেন। ৩৫ উর্ধ্ব কোন ব্যক্তি বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে নাl তারপরও মোটা টাকা লেনদেন করে কেরানিকে জাল সনদে লাইব্রেরি পদে নিয়োগ দিয়েছে। কারণ সে বিএনপি। সকল সম্ভাবনার কলেজ গোপালপুর। টাকা হলে এ কলেজে সবই সম্ভব। তিনটি তৃতীয় বিভাগ নিয়েও জিয়া পরিষদের সাবেক নেতা বর্তমানে হাইব্রিড আওয়ামী লীগ সহকারী অধ্যাপকে পদোন্নতি পেয়েছেন। আরও আছে, বলে শেষ করা যাবে না।আপনি দয়া করে তদন্ত করে জরুরি ব্যবস্থা নিবেন বলে আশা রাখি। মানবতার মা, আামি তাদের অত্যাচার আর সইতে পারছিনা। আমি ঘৃনা, ক্ষোভে তিনদিন যাবৎ আমার ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আমরণ অনশন শুরু করেছি। আমার এই করুণ পরিনতির জন্য মোঃ মোজাফফর হোসেন এমপি সাহেব প্রত্যক্ষভাবে ও অধ্যক্ষ মোফাজ্জল হেসেন সরাসরি দায়ী। আপনি ন্যায় বিচারক। আপনার নিকট ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করি। মানবতার মা,আমার বড় সন্তানটি বিবিএ শেষ করেছে। মেয়েটি ভুগোল বিষয়ে সম্মান শ্রেণিতে পড়ে। তাদের ভরন- পোষণের ভার আপনার উপর দিয়ে গেলাম। আল্লাহ আপনাকে নেক হায়াত দান করুন। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।