চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধিঃ কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের অধীনস্থ খুটাখালী বনবিটের জায়গায় বনদস্যুরা বনভূমির উচুঁ-নিচু পাহাড় ‘কেটে’ রাস্তা তৈরি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বনের ওই রাস্তা দিয়ে দিব্যি বনখেকোরা বন থেকে পাচার করছে ছোট-বড় গর্জনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও অবৈধভাবে উত্তোলিত বালি। এতে সংশ্লিষ্ট বনবিভাগের লোকজন তা দেখেও নিরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ স্থানীয় এলাকাবাসীর।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, খুটাখালী বনবিটের নিয়ন্ত্রণাধীন বনবিভাগের ২০১৯ সনের ১০হেক্টর বাগান থেকে ১৯৮০সনের মধুরশিয়ার শেষ মাথা পর্যন্ত কতিপয় ‘ভূমিদস্যু’ বনভূমির জায়গায় উচুঁ-নিচু পাহাড়ের মাটি ‘কেটে’ রাস্তা তৈরি করেছে স্থানীয় ওবাইদুল্লাহ গ্যাংয়ের লোকজন। ওই ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের ফরেস্ট অফিস পাড়ার মৃত মোকতার আহমদের ছেলে ওবাইদুল্লাহ’র নেতৃত্বে তার ‘সন্ত্রাসী’ বাহিনী নিয়ে বনবিভাগের জায়গায় চলছে নানা ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকাণ্ড ও পাহাড় নিধনের মহাযজ্ঞ। বনের জায়গায় রাস্তা তৈরি করে ওই পথ ধরে বনের ভেতরে হরিন্নাঝিরি থেকে শ্যালো মেশিন বসিয়ে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন অবৈধ বালু উত্তোলন। বিগত ২০১৯সনের বাগানের জায়গায় গড়ে তুলেছে বালির স্তুপ। ওবাইদুলের ভাই আমির সোলতান পুলিশের কথিত সোর্স পরিচয় দিয়ে এলাকার নিরীহ মানুষকে প্রতিনিয়তই ‘হয়রানি’ করে আসছে বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ। তাছাড়া সোলতানের ছত্রছায়ায় এলাকার চিহ্নিত ডাকাত, অস্ত্রধারী, চোর, মাদক কারবারি, সাজাপ্রাপ্ত ও পালাতক আসামীরা থানা পুলিশের কাছে অধরা রয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা। পালাতক ও সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের ‘ভয়’ দেখিয়ে বাগানিয়া পাড়ার মুখে খুটাখালী ছড়া সংলগ্ন প্রায় ৩ একর ধানী জমি থেকে উপরের মাটি সরিয়ে দিব্যি অবৈধভাবে বালি উত্তোলন এবং বনের সংরক্ষিত গাছ কেটে ওবায়দুল্লাহ তার বাহিনীর মাধ্যমে ‘পাচার’ করে আসছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, খুটাখালী বনবিটের হরিন্নাঝিরি ও বাগানিয়া পাড়ায় বনবিটের ২/১ জন বনকর্মী এবং মুন্সির সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন ওবায়দুল্লাহ। এলাকার সাধারণ মানুষ তার বাহিনীর ‘ভয়ে’ নিরব ভূমিকা পালন করছে। ওবায়দুল্লাহ ‘বাহিনীর’ বিরুদ্ধে এলাকায় কেউ অভিযোগ করলে তাকে ওই এলাকা থেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়, না হয় তাদের নির্যাতনে বসবাস করাও দায় হয়ে পড়ে। বনকর্মীরাও তার বাহিনীর ভয়ে উৎকোচ নিয়ে নিরবতা পালন করে যাচ্ছে।
জানা গেছে,ওবায়দুল্লাহ বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে ‘ডাকাতি’, ‘অপহরণ’, ‘চুরি’’ ‘দাঙ্গা-হাঙ্গামা’, বন মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। যার মধ্যে জিআর ৩৪০/১৫, ৩৩৯/১৫, ৩৩৫/১৫)। এছাড়াও তার ভাই হামিদ উল্লাহ (হামিদ) বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অপরাধের একাধিক মামলা যার জিআর ৩৪০/১৫, ৩৩৯/১৫, ১২/১২। বর্তমানে সেও সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী। ওবায়দুল্লাহ বাহিনীর লিডার রেজাউল সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধী কর্মকাণ্ডসহ রয়েছে ডজনাধিক মামলা, যার মামলা নং-জিআর-১২১/১৪, ৩৪৪/১৪, ৩৪০/১৫, ৩৩৯/১৪, ১৮/১৪, ২০৬/১৪, ২০৫/১৪। তার অপর ভাই নজির আহমদ বর্তমানে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী। দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত বনের ভেতরে ওবাইদুল্লাহ তার ভাইসহ ১০/১২ চিহ্নিত আসামীরা অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে জীবন যাপন ও আয়-রোজগার করে। তাই বনের ক্ষতি করে নিজেদের জীবিকায়নসহ বনাঞ্চল ধ্বংসের বড় শত্রুতে পরিণত হয়েছে। বনবিভাগ ও পুলিশ প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইন প্রয়োগ করলে অনেকটা অপরাধ প্রবণতা রোধ হবে বলে সূত্রে জানায়।
এ ব্যাপারে খুটাখালী বনবিট কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে বলেন, বনের জায়গায় যে রাস্তাটা করেছিল তা আমরা অবগত হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দিই।এছাড়াও কোন ধরণের যানবাহন যেন ঢুকতে না পারে সেজন্য বড় বড় গর্ত করে দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।