crimepatrol24
২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, এখন সময় সকাল ৮:০২ মিনিট
  1. অনুসন্ধানী
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইটি বিশ্ব
  5. আইন-আদালত
  6. আঞ্চলিক সংবাদ
  7. আন্তর্জাতিক
  8. আফ্রিকা
  9. আবহাওয়া বার্তা
  10. আর্কাইভ
  11. ইউরোপ
  12. ইংরেজি ভাষা শিক্ষা
  13. উত্তর আমেরিকা
  14. উদ্যোক্তা
  15. এশিয়া

কালিগঞ্জের অবহেলিত ফাতেমা এখন স্বাবলম্বী, কৃষিতে অনন্য অবদান

প্রতিবেদক
মো: ইব্রাহিম খলিল
ডিসেম্বর ৪, ২০১৯ ৩:৪৮ অপরাহ্ণ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বলাকান্দর গ্রামের শিরিষ খালের পাড়ে সরকারের খাস জমিতে একটি টিনের ঝুঁপড়ি বাড়িতে বসবাস কারা ফাতেমা বেগম। তার বাবা মৃত সৈয়দ আলী মন্ডল আর মা রুশিয়া বেগম। বড় ছেলে কায়েম আলী এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী আর ছোট মেয়ে তৃপ্তি খাতুন চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। একসময় ফাতেমা ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে অন্যের খেজুর গাছের রস চুরি করে খেয়ে রাত কাটিয়েছেন। গভীর রাতে সন্তানের ক্ষুধায় প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে পানি দেয়া ভাত চেয়ে এনেছেন। কিন্তু তিনি এখন কৃষিকাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। ধান, সবজির আবাদ ছাড়াও শুধু কেঁচো কম্পোস্ট থেকেই প্রতি মাসে তার আয় ২০ হাজার টাকা। বলছিলাম ফাতেমার সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তার সংগ্রামী জীবনের কথা। অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা ফাতেমার বিয়ে হয় মাত্র ১১ বছর বয়সে। স্বামীর সংসারে সুখে দিন কাটবে এমন আশা থাকলেও তাকে প্রতিনিয়ত অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে। স্বামীর সংসারে সুখের পরিবর্তে অনাহারে অথবা অর্ধহারে দিন কেটেছে তার। বিয়ের ১০ বছরের মাথায় দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে স্বামী মারা যায়। এরপর বিধবা ফাতেমার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। স্বামী মারা যাওয়ার পর শ্বশুর-শাশুড়ি আর দেবরের নির্যাতনে টিকতে না পেরে রাতের আঁধারে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন ফাতেমা। এরপর বাবার বাড়িতে অভাবের সংসারে খেয়ে না খেয়ে কেটে যায় পাঁচ বছর। পরে আবার বিয়ে হয় পাশের গ্রাম ষাটবাড়িয়া গ্রামের আশরাফুল হাদির ছেলে ইকবল হোসেনের সঙ্গে। এরপর গ্রামের শিরিষ খালের পাড়ে সরকারি খাস জমিতে টিনের ঝুঁপড়ি ঘরে বসবাস শুরু করেন তারা। অভাবের সংসারে মাদকাসক্ত স্বামীর যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ জীবন, পালাতে চাইলেও সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে সব কিছু সহ্য করতে হয়েছে ফাতেমাকে। এরপর থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ফাতেমার সংগ্রামী জীবন শুরু হয়। ধৈর্য এবং সততার সঙ্গে নিজের কর্ম প্রচেষ্টায় এখন সেই দিন পাল্টে গেছে তার। বাড়িতে কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি করে বিক্রির মাধ্যমে ফাতেমা সংসারে সুখ ফিরিয়েছেন। ২০০৫ সালে মাত্র একটি চাড়িতে (মাটির তৈরি বড় পাত্র) কেঁচো দিয়ে শুরু করেন জীবন যুদ্ধের পথচলা। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। এখন তার ৩৫০টি চাড়িতে কেঁচো কম্পোস্ট রয়েছে। সেখান থেকে উৎপাদিত সার ও কেঁচো বিক্রি করে মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় করেন ফাতেমা। সেই টাকা দিয়ে মাঠে প্রায় এক বিঘা জমি কেনা ছাড়াও সাড়ে ৯ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ধান, গম, সরিষা, কলা, মরিচ, লাউসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করে এখন ভালোই চলছে তার সংসার। ফাতেমার বাড়িতে রয়েছে টিনের ছাউনির একটি লম্বা ঘর। সেখানে সারি সারি বসানো রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক গোবর ভর্তি মাটির চাড়ি। যার ভেতরে ছেড়ে দেয়া রয়েছে লাল রঙের এক জাতীয় কেঁচো। যে কেঁচো গুলো চাড়ির ভেতরে একদিকে বংশ বিস্তার করছে অন্যদিকে গোবর খাওয়ার পর শুকিয়ে তৈরি হচ্ছে অধিক উর্বর কেঁচো কম্পোস্ট সার। যা ফসলি ক্ষেতে ব্যবহার করে ভালো ফলন পাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।

ফাতেমা বেগম জানান, রাসায়নিক সার অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাছাড়াও রাসায়নিক সার দিয়ে উৎপাদিত ফসল খেয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত নানান জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া রাসায়নিক সার জমিতে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মাটির স্বাভাবিক স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে। ২০০৫ সালে জাপানভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাঙ্গার ফ্রি ওয়াল্ডের প্রশিক্ষণ কর্মশালা থেকে তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়িতে কেঁচো কম্পোষ্ট সারের উৎপাদন শুরু করেন। স্থানীয় মাটির চাড়িগুলোর মধ্যে গোবর দিয়ে এর মধ্যে ছেড়ে দেন এক ধরনের কেঁচো। কেঁচোগুলো গোবর খেয়ে যে পায়খানা করে সেটাই কোঁচো কম্পোস্ট সার। চাড়িগুলো বসত ঘরের পাশের একটি চালা ঘর তৈরি করে বসানো হয়েছে। এরপর থেকে বাড়িতে এ সার তৈরি করে এলাকার কৃষকদের কাছে বিক্রি করছেন। ফাতেমা আরও জানান, প্রথম দিকে নিজের গরু না থাকায় গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে গোবর কুড়িয়ে ও কিনে কম্পোস্ট সার তৈরি করতেন। সে সময় লাভ অনেকটা কম হতো। বর্তমানে তার তিনটি গরু। ফলে বাইরের গোবরের আর প্রয়োজন হচ্ছে না। প্রতি কেজি সার ১২ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করছেন। আর কেঁচো বিক্রি করছেন কেজি এক হাজার টাকা থেকে ১২শ টাকা। যেখান থেকে প্রতি মাসে তিনি কমপক্ষে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকার সার ও কেঁচো বিক্রি করতে পারছেন। এ ছাড়া ধান, গম, সরিষা, মরিচ, লাউসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করছেন। যা দিয়ে এখন ভালোভাবে তার সংসার চলছে।

ফাতেমা বলেন, বাবার অভাবের সংসার থেকে স্বামীর সংসার পর্যন্ত কখনও অভাব পিছু ছাড়েনি। স্বামীর সংসারে এসে প্রথমে বেশ কিছুদিন হতাশার মধ্যে জীবন চলতো। পরে ভাবলাম নিজে উৎপাদনশীল কোনো কাজ করবো। যা দিয়ে সংসারের গতি ফেরানো যাবে। এ ভাবনা অনুসারেই সুযোগ পেয়ে কেঁচো সার তৈরির প্রশিক্ষণ নিই। এরপর নিজ বাড়িতেই শুরু করি কম্পোস্ট সার তৈরির কাজ।

ফাতেমার প্রতিবেশী সাইফুল ইসলাম জানান, মাঠে ফাতেমার স্বামীর নিজের কোনো চাষযোগ্য জমি নেই। কিন্তু ফাতেমা কয়েক বছর ধরে কম্পোস্ট সার তৈরি করে বিক্রির মাধ্যমে বর্তমানে বেশ টাকার মালিক হয়েছেন। এক বিঘা জমি কেনা ছাড়াও আরও সাড়ে ৯ বিঘা জমি লিজ নিয়ে অর্গানিক পদ্ধতিতে ফসল চাষ করছেন ফাতেমা নিজেই। একসময় সাংসারিক জীবনে তাকে অনেক কষ্ট মোকাবিলা করতে হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে তার একক প্রচেষ্টায় একটি স্বনির্ভর সংসার গড়ে উঠেছে। ফাতেমা তার মাদকাসক্ত স্বামীকেও মাদক থেকে ফিরিয়ে এনেছেন। তার স্বামী এখন কোনো কাজ না করলেও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে।

ওই গ্রামের আমেনা বেগম জানান, আগে ফাতেমার সংসারে অনেক অভাব ছিল। দুই সন্তান নিয়ে জীবন চলা অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল তার। কিন্তু ফাতেমা কৃষি কাজ করার পর থেকে সংসারের অভাব দূর হওয়ার পাশাপাশি তার সন্তানদের পড়ালেখা করাতে পারছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিজুল ইসলাম বলেন, অবহেলিত নারীদের জন্য ফাতেমা একটি দৃষ্টান্ত। নারীরা আর পিছিয়ে নেই এটা ফাতেমাকে দেখলেই বোঝা যায়। কেঁচো সার উৎপাদন করে এই নারী যে শুধু স্বাবলম্বী হচ্ছেন তা নয়, পাশাপাশি ধান, গম, সরিষা, কলাসহ বিভিন্ন দেশি ফসল উৎপাদনেও তিনি ভূমিকা রাখছেন। আমরা সবসময় ফাতেমার পাশে আছি।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, তিনি ফাতেমা বেগমের কৃষি ও কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন পদ্ধতি নিজে দেখেছেন। একজন কৃষাণীর চেষ্টায় শূন্য থেকে সফলতা অর্জন দেশের কৃষক ও কৃষাণীদের জন্য অনুকরণীয়। যখন দেশের অগণিত কৃষক কৃষি কাজে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করে জমির উর্বরতা নষ্ট করছে তখন ফাতেমার জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ সবাইকে চমকে দিয়েছে।

Share This News:

সর্বশেষ - লাইফ স্টাইল

আপনার জন্য নির্বাচিত
সুন্দরগঞ্জে ৭ জুয়ারী গ্রেফতার

সুন্দরগঞ্জে ৭ জুয়ারী গ্রেফতার

ময়মনসিংহের ভালুকায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৫ এর সহযোগিতায় শ্রমিকদের অসন্তোষ নিরসন

ময়মনসিংহের ভালুকায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৫ এর সহযোগিতায় শ্রমিকদের অসন্তোষ নিরসন

ঝিনাইদহে মাদকবিরোধী র‌্যালি ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত

গাইবান্ধায় করোনায় মোট আক্রান্ত ৩৩ জন

তিতাসে নির্মিত হলো এক ব্যতিক্রমধর্মী শহিদ মিনার, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

ঝিনাইদহে আমের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতের দাবিতে বাগানমালিক ও ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন

এ বছর ফিতরা সর্বনিম্ন ৭০ ও সর্বোচ্চ ২৩১০ টাকা

ডোমারে সাংবাদিক মাহাবুবার রহমানের জানাযা সম্পন্ন

ডিমলায় তিনবারের নির্বাচিত সংসদসদস্য আফতাব উদ্দিন সরকারকে সংবর্ধনা

চাউল আত্মসাতের মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন গোস্বামী দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান

দেশপ্রেমের মহান ব্রতে দায়িত্ব পালন করুন : ক্যাডেট এসআইদের উদ্দেশে আইজিপি