মো. ইব্রাহিম খলিলঃ
ফেনী -১ আসনের এমপি শিরীন আখতার বলেছেন, ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি যৌক্তিক এবং তা শ্রীঘ্রই জাতীয়করণ হওয়া প্রয়োজন।’
আজ সোমবার, এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকদের চলমান অবস্থান কর্মসূচির ১১তম দিবসে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাদের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে একথা বলেন এমপি।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান দিতে হবে, তাদের জীবনমান উন্নত করতে হবে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আপনাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে কথা বলব। আগামী জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আপনাদের পক্ষ হয়ে জাতীয়করণের বিষয়টি উপস্থাপন করবো।’
জানা গেছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে সারা দেশ থেকে আসা শিক্ষক-কর্মচারীরা আজ সোমবার ১১ তম দিন রাজপথে পার করেছেন।
গত ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রি. থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোটের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে।
আজ সোমবার, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোটের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মহাজোটের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মো. মাইন উদ্দিন শিক্ষাব্যবস্থায় বিরাজমান বৈষম্য তুলে ধরে বলেন, ‘সরকারি- বেসরকারি শিক্ষকদের যোগ্যতা, শিক্ষাক্রম ও কর্মঘণ্টাসহ সকল দায়-দায়িত্ব একই রকম হওয়া সত্ত্বেও আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দেশের এমপিওভুক্ত প্রায় ৫ লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী চরম বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মাঝে বিরাজমান বৈষম্যগুলো হলো- সরকারি শিক্ষকরা বাড়ি ভাড়া পান মূলবেতনের ৪০-৫০% আর এমপিওভুক্ত বে শিক্ষকরা পান মাত্র ১ হাজার টাকা, সরকারি শিক্ষকরা মূলবেতনের সমপরিমাণ দু’টি উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন আর এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পান মূলবেতনের ২৫%, সরকারি শিক্ষকরা চিকিৎসা ভাতা পান ১ হাজার ৫শ’ টাকা আর এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পান মাত্র ৫শ’ টাকা। এছাড়াও, সরকারি শিক্ষকদের রয়েছে বদলি, পদোন্নতি ও পেনশন সুবিধা। অথচ এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ‘
তিনি আরও বলেন, এ দাবি এখন শিক্ষকদের মাঝে সীমিত নয়, এটি এখন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ গণ দাবিতে পরিনত হয়েছে।তাই অনতিবিলম্বে এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের ঘোষণার মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান সকল বৈষম্য দূরীভূত হবে আমরা সে প্রত্যাশা করছি।’
মহাজোটের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ একটি স্বাধীন দেশে দুই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা থাকতে পারে না। আমরা এর অবসান চাই, এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীকরণ চাই। সরকারের পক্ষ থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীকরণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা শিক্ষক সমাজ ঘরে ফিরে যাব না।’
কর্মসূচিতে শিক্ষকদের উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় যাতে কোনো প্রকার বিঘ্ন না ঘটে সে বিষয়টি মাথায় রেখেই একসঙ্গে সকল শিক্ষককে জড়ো করছি না। আর যেহেতু আমার কর্মসূচি লাগাতার, সেহেতু আমরা প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান থেকে পর্যায়ক্রমে ২/১ করে শিক্ষক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছি।’
এসময় অন্যদের মাঝে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের (বাবেশিকফো) যুগ্ম মহাসচিব মো. জহিরুল ইসলাম, আব্দুল জব্বার, মতিউর রহমান দুলাল, আফজাল হোসেন, মো. মামুনুর রশিদ, মো. মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, শিক্ষক নেতারা বিভিন্ন সময় সংবাদ সম্মেলন, সভা-সমাবেশ ও কুটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েও কোনো প্রকার সুফল না পাওয়ায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খ্রি. তারিখ থেকে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সারা দেশের শিক্ষকদের নিয়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে। আজ কর্মসূচির ১১তম দিনেও এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে সারাদেশ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করেছেন। দিন বাড়ার সাথে সাথে শিক্ষকদের উপস্থিতিও বাড়ছে।
