মো. ইব্রাহিম খলিলঃ
দেশের এমপিওভুক্ত প্রায় ৫ লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী যুগের পর যুগ আর্থিকসহ বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। তারা বিভিন্ন সময় সংবাদ সম্মেলন, সভা-সমাবেশ ও কুটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েও কোনো প্রকার সুফল না পাওয়ায় গতকাল ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খ্রি. তারিখ থেকে ঢাকায় জাতীয প্রেসক্রাবের সামনে সারা দেশের শিক্ষকদের নিয়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। আজ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনেও এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে সারাদেশ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করেছেন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী মহাজোটের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘আমরা গত ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ খ্রি. তারিখে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তুলে ধরেছিলাম এবং সরকারের নজরে আনার আহ্বান জানিয়েছিলাম। গণমাধ্যমকর্মীরা আমাদের দাবিগুলো তাদের লেখনীর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রিণ্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার করেছেন। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের ঘোষণা দেওয়ার জন্য আমরা সরকারকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি,২০২৩ খ্রি. তারিখ পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলাম। কিন্তু উক্ত সময়সীমার মধ্যে সরকার আমাদের যৌক্তিক দাবি বিবেচনায় না নেওয়ায় আমরা গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছি। আজ আমাদের কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনেও শিক্ষক-কর্মচারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা ঘোষণা না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
মহাজোটের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ একটি স্বাধীন দেশে দুই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা থাকতে পারে না। আমরা এর অবসান চাই, এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীকরণ চাই। সরকারের পক্ষ থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীকরণের ঘোষণা আসা পর্যন্ত আমরা শিক্ষক সমাজ ঘরে ফিরে যাব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার দেশে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে তা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। এ সরকার নিজেদেরকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দাবি করছে। আমরা মনে করি, এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করে শিক্ষাক্ষেত্রের বৈষম্য নিরসন হলেই সরকারের সকল উন্নয়ন পূর্ণতা পাবে। তাই আমরা আশাবাদী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অতি দ্রুত এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়ে শিক্ষকদের স্ব-স্ব কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
মহাজোটের যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মো. দেলোয়ার হোসেন আজিজি বলেন, ‘আমাদের দাবি ন্যায্য। এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করা হলে কেবল শিক্ষকরা উপকৃত হবেন এমনটা নয়। সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে এদেশের খেটে খাওয়া ১৭ কোটি মানুষ। কারণ তাদের সন্তানেরা অল্প বেতনে পড়াশোনা করতে পারবে। ‘
তিনি আরও বলেন, ‘ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে স্মার্ট নাগরিক তৈরি করতে হবে। আর স্মার্ট নাগরিক তৈরীর মহান দায়িত্বে রয়েছেন এদেশের শিক্ষক সমাজ। তাই সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বার্থেই এমপিওভুক্ত শিক্ষাকে জাতীয়করণ করা জরুরি বলে আমি মনে করি।’
প্রসঙ্গত, দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি দীর্ঘ দিনের। কিন্তু অদৃশ্য কারণে স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের শিক্ষাগতযোগ্যতা, শিক্ষাক্রম ও কর্মঘণ্টা ও অন্যান্য দায়-দায়িত্ব একই রকম হওয়া সত্ত্বেও সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মাঝে বিরাজমান বৈষম্যগুলো হলো- সরকারি শিক্ষকরা বাড়ি ভাড়া পান মূলবেতনের ৪০-৫০% আর এমপিওভুক্ত বে শিক্ষকরা পান মাত্র ১ হাজার টাকা, সরকারি শিক্ষকরা মূলবেতনের সমপরিমাণ দু’টি উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন আর এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পান মূলবেতনের ২৫%, সরকারি শিক্ষকরা চিকিৎসা ভাতা পান ১ হাজার ৫শ’ টাকা আর এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পান মাত্র ৫শ’ টাকা। এছাড়াও, সরকারি শিক্ষকদের রয়েছে বদলি, পদোন্নতি ও পেনশন সুবিধা। অথচ এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত।