মো. হেলাল উদ্দিন। বয়স ৫৫ বছর। কম্পিউটারের দোকানে বসে ছাপাতেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লোগোযুক্ত চিঠি। সেই চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর সই নকল করতেন তিনি।
শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুদক চেয়ারম্যান, এনবিআরের চেয়ারম্যান, এনএসআই প্রধানের সিল-স্বাক্ষর নকল করে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই প্রতারক ও তার চক্রের সদস্যরা।
দীর্ঘদিন ধরে তারা চালিয়ে যাচ্ছিলেন এই প্রতারণা, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে এই জালিয়াত চক্রের মূলহোতা হেলাল উদ্দিনসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে মালিবাগের সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (সিরিয়াস অ্যান্ড হোমিসাইডাল স্কোয়াড) সৈয়দা জান্নাত আরা বলেন, গ্রেপ্তার ছয়জনের মধ্যে তিনজনকে গত বছরের ২৯ নভেম্বর এবং বাকি তিনজনকে গতকাল সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৯ নভেম্বর গ্রেপ্তার তিনজন হচ্ছেন, হেলাল উদ্দিন, মো. এনামুল হক (৪৮) ও নাজমুল হাবিব (৫৪)। তবে তদন্তের স্বার্থে সোমবার রাতে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের নাম জানাননি তিনি।
সৈয়দা জান্নাত আরা আরও বলেন, হেলাল উদ্দিন জাল স্বাক্ষর চক্রের মূলহোতা। তিনি প্রধানমন্ত্রীর জাল স্বাক্ষর তৈরি করতেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লোগো ও চিঠি এক কম্পিউটারের দোকান থেকে মাত্র ৫০০ টাকার বিনিময়ে প্রিন্ট করিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার লক্ষ্যে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জালিয়াতি করতেন। চক্রটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ভুয়া ৫৪ হাজার কোটি টাকার যাচাই কপি তৈরি করে জনমনে বিশ্বাস স্থাপন করে। এভাবে তারা ৪২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। গ্রেপ্তারের সময় আসামিদের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাল স্বাক্ষরসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুদক চেয়ারম্যান, এনবিআরের চেয়ারম্যান, এনএসআই প্রধানের স্বাক্ষর সম্বলিত জাল প্যাডের পাতা, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভুয়া ৫৪ হাজার কোটি টাকার যাচাইকৃত কপি, প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে হেলালের বিভিন্ন মানহানিকর কথাবার্তার ভিডিও ক্লিপ ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত পাঁচটি মোবাইল জব্দ করা হয়।
সিআইডির এ বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, জালিয়াত চক্রটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ভুয়া যাচাই কপি তৈরি করে প্রথমে সাধারণ মানুষের মনে বিশ্বাস স্থাপন করত। তারা দাবি করত, ৫৪ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে কথিত ফরিদুজ্জামান সেলিমের অ্যাকাউন্টে আছে। তিনি ফ্রান্সের এল সি এল ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা পাঠান, যা পুরোটাই ভুয়া। চক্রটি সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের উন্নয়নের কথা টার্গেট মানুষকে জানাত এবং প্রয়োজন মতো তারা প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরসহ কার্যালয়ের প্যাডে ওই প্রকল্পের কাজের আদেশনামা দেখাত।
এই চক্রের ফরিদুজ্জামান সেলিমকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে এবং খুব শিগগিরই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান।