একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ যে ৭৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ হয়েছিল তাদের সঙ্গে ফের সংলাপে বসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তাদের ফের আমন্ত্রণ জানাবেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে সংলাপে অংশ নেয়া নিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব প্রত্যাশা করছে নির্বাচনের আগে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে অংশ নেয়া বিএনপি। দলটির নেতারা বলেছেন, দ্রুত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা পেলেই তারা এ সংলাপে অংশ নেবে। তবে কোন উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী সংলাপের ডাক দিয়েছেন- আমন্ত্রণপত্র পেলে তখন দেখা যাবে। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
রোববার দুপুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথসভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ঐক্যফ্রন্ট-যুক্তফ্রন্টসহ ৭৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গণভবনে সংলাপ হয়েছিল। নির্বাচন শেষ হয়েছে, আমাদের নেত্রী (শেখ হাসিনা) শনিবার দলের ওয়ার্কিং কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ বৈঠকে বলেছেন, যাদের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে তাদেরকে আমন্ত্রণ করবেন, আহ্বান করবেন, নিমন্ত্রণ করবেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ‘জাতীয় সংলাপ’ করার ঘোষণা দেয়ার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তরফ থেকে এমন বার্তা এলো।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে মাত্র আটটি আসন পাওয়া ঐক্যফ্রন্ট শপথ না নেয়ার ঘোষণা দিয়ে অবিলম্বে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানায়। আর কামাল হোসেন জোটের পক্ষ থেকে জাতীয় সংলাপ করার ঘোষণা দেন। ঐক্যফ্রন্টের ওই সংলাপ আহ্বানকে দু’দিন আগে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন আ’লীগের এই সাধারণ সম্পাদক।
কাদের বলেন, দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন (প্রধানমন্ত্রী) এবং তাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকবে। এ ব্যাপারে আমরা সবাই একমত। একসঙ্গে সবাইকে দাওয়াত দেয়া হবে। তবে কবে নাগাদ এ সংলাপ হতে পারে সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, সেটা খুব শিগগির জানিয়ে দেয়া হবে। সব রাজনৈতিক দল গণভবনে আমন্ত্রিত। এর মধ্যে ঐক্যফ্রন্ট, যুক্তফ্রন্ট, ১৪ দল আছে, জাতীয় পার্টি আছে, অন্যান্য যেসব দল আছে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
আগামী উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে তাতে আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে কি না- এমন প্রশ্নে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রতিপক্ষকে আমরা কখনও দুর্বল মনে করি না। সেটা মনে করেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। সেদিক থেকে বিএনপি বা তাদের ফ্রন্ট নির্বাচনে যদি আসে, তাহলে তাদেরকে স্বাগত জানাই। তিনি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনেরও আলাদা মজা। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের আশা করি। তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এ রকমই আশা করব।
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকের সংলাপে বসার ঘোষণা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একদফা সংলাপ করেছিলেন। কিন্তু সেই সংলাপে কোনো ফল আসেনি। সংলাপে প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন তা রক্ষা করেননি। আবারও তিনি সংলাপে বসার কথা বলছেন। কিন্তু এর আগে আমাদের জানতে হবে কেন এ সংলাপ। সংলাপের বিষয়বস্তু স্পষ্ট করতে হবে। দ্রুত একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যদি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করতে চান তাহলে আমরা অংশগ্রহণ করব কিনা তা চিন্তাভাবনা করব। আমন্ত্রণপত্র পেলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের প্রার্থী করা ‘ভুল’ ছিল বলে যে স্বীকারোক্তি কামাল হোসেন দিয়েছেন, সে বিষয়েও ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।
জবাবে তিনি বলেন, তিনি তো ‘জেনেশুনে বিষ করেছি পান’- বিষয়টি এমন। আমাদের দেশের নেতারা একেক সময় একেক কথা বলেন, কামাল হোসেনের বক্তব্য এখানে আমরা স্ববিরোধী বলে মনে করছি।
কেননা তিনি জেনেশুনেই তো বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করেছেন। জামায়াত ছাড়া তো বিএনপির কোনো অস্তিত্ব নেই, বিএনপি মানেই জামায়াত, জামায়াত মানে বিএনপি। এ অবস্থায় কামাল হোসেন সাহেব জেনে শুনে কেন এত বড় ভুল করলেন? এ ভুলের খেসারত তাকেই দিতে হবে।
যৌথসভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।
ফের সংলাপে বসা নিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে একমত পোষণ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, দ্রুত একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী যদি সংলাপের আহ্বান জানান তবে তাকে আমরা স্বাগত জানাব। দুদু বলেন, নির্বাচনের আগে সংলাপের নামে তিনি চালাকির আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি যদি সংলাপের নামে ফের চালাকির চেষ্টা করেন তাহলে সেই সংলাপে আমরা যাব না।