পাবনা প্রতিনিধি :
পাবনার চাটমোহর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বড়াল নদী এখন ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। বড়াল পাড়ের মানুষজন নদী দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের পাশাপাশি হরেক রকম ফসলের চাষাবাদ করছেন। নদীর বিশাল এলাকাজুড়ে এখন বোরো ধানের সমারোহ। দেখলে মনে হবে বিশাল ফসলের মাঠ। একই সাথে দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
নদীর পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করতে একদিকে বাঁধ অপসারণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে ,বড়ালের পাড় দখল করে মার্কেট ও রাস্তা তৈরি করাসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। নদীর বিভিন্ন অংশ প্রতিনিয়ত দখল করা হচ্ছে। নদীর দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। একই সাথে ধান, গম, রসুন,পেঁয়াজের আবাদ হচ্ছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বড়াল রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা।
জানা গেছে,১৯৮০ সাল পর্যন্ত বড়াল নদী পানিপ্রবাহ ছিল। ১৯৮১ সালে রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মা থেকে বড়ালের উৎসমুখে ও পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার সীমান্ত এলাকা দহপাড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দুটি জলকপাট নির্মাণ করে। এতে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে নৌযান চলাচল ব্যাহত হতে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দারা তখন নদ পারাপারের জন্য সেতু তৈরির দাবি তোলেন। কিন্তু সেতু না করে বড়ালে চারটি আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে বড়ালে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। দিনে দিনে দখল-দূষণে ২২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বড়াল পরিণত হয় মরা খালে। পানি না পেয়ে ব্যাহত হতে থাকে বিস্তীর্ণ চলনবিলের চাষাবাদ।
২০০৮ সালে বড়াল রক্ষায় তৈরি হয় আন্দোলন কমিটি। সহায়তা করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা),পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), এএলআরডিসহ বিভিন্ন সংগঠণ। বড়া রক্ষা আন্দোলন কমিটির নিয়মিত সভা,সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে বেলার দায়ের করা রিট মামলায় উচ্চ আদালত বড়াল থেকে সব বাঁধ ও জলকপাট অপসারণের নির্দেশ দেন সরকারকে। সে অনুযায়ী বাঁধ অপসারণ করে সেতু নির্মাণ করা হয়। এতে স্বস্তি ফিরতে থাকে বড়ালপাড়ের বাসিন্দাদের। কিন্তু বড়াল দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। মরা বড়ালের তলদেশে শুরু হয় ফসলের আবাদ। নাটোরের বড়াইগ্রাম থেকে চাটমোহরের চরমথুরাপুর পর্যন্ত বড়ালের ৪০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে চাষাবাদ।