চরমোনাইর পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। ছবি: সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক >> ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, সত্য বেশিদিন চাপা দিয়ে রাখা যায় না। ‘ইভিএম চালু হলে রাতে ভোট হবে না’ সিইসির এমন বক্তব্যের মাধ্যমেই থলের বিড়াল বের হয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ডাকসু নির্বাচনকে বিতর্কিত করার মাধ্যমে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করেছে। ঢাবি ক্যাম্পাসে ইসলামী সংগঠনের মিছিলের পর মুসলমানের সন্তানদের অনেকের মনেই আগুন ধরে গেছে। সেখানে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি শোনার পর তারা প্রশ্ন করছেন- বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি? তিনি বলেন, কেবল ডাকসু নির্বাচনই নয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনও হয়েছে কারচুপির।
শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের জাতীয় শ্রমিক কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় এবং দলীয় লুটপাট, দুর্নীতি ও কায়েমি স্বার্থবাদীদের কারণে শ্রমিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না। দুর্নীতি বন্ধ না করে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টা দেশের সাধারণ মানুষকে শোষণের নামান্তর। গ্যাসের মূল্য একবার বাড়ানো হয়নি। বেশ কয়েকবার বাড়ানো হয়েছে।আবারও গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হলে দেশের লাখ লাখ মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক বিভীষিকা নিয়ে আসবে। গ্যাসের মূল্য আর এক টাকাও বাড়ালে জনগণ মেনে নেবে না। সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, মাদ্রাসাশিক্ষাকে ‘বিষবৃক্ষ’ এবং ইসলামী শাসনব্যবস্থাকে ‘মোল্লাতন্ত্রের’ সঙ্গে তুলনা করে জাতীয় সংসদে সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান জাতীয় সংসদকে কলঙ্কিত করেছেন।
শ্রমিক অধিকারের বিষয়ে মুফতি রেজাউল করিম বলেন, স্বাধীনতার ৪৮ বছর অতিক্রান্ত হলেও শ্রমিকদের সমস্যার শেষ নেই। গার্মেন্টস, কৃষি থেকে শুরু করে সর্বস্তরের শ্রমিকরা এখনও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে ন্যায্য মজুরির বঞ্চনা নিয়েই কাজ করছেন।
সংকটের বাস্তবমুখী সমাধান না হওয়ার কারণে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, শিল্পবিরোধ, স্বাস্থ্য সমস্যা, বকেয়া মজুরি, বিনা নোটিশে ছাঁটাই, নারী শ্রমিকদের যৌন হয়রানিসহ সর্বত্র সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। এসবের অন্যতম কারণ মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্কের অনুপস্থিতি। ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন হলে শ্রমিকরা সুযোগ-সুবিধা ও ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না।
একমাত্র ইসলামই শ্রমিককে তার ন্যায্য অধিকার দিয়েছে। মালিক শ্রমিক পরস্পরের মধ্যে ভাই ভাই সম্পর্ক- এটা ইসলামেরই ঘোষণা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৯২ ভাগ মুসলমান। কিন্তু আমরা ভিনদেশিদের আদর্শ তথা রাশিয়া চীনসহ তাদের শ্রমনীতি মেনে নিচ্ছি। অথচ ইসলাম সবচেয়ে যোগ্য শ্রমনীতি দিয়েছে। শ্রমিকের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ এবং শ্রমিকের শ্রমের ন্যায্যমূল্য পরিশোধে ইসলাম কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে।
ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আশরাফ আলী আকনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ খলিলুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত শ্রমিক কনভেনশনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক হাফেজ মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দীন, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নেতা মুফতি হেলার উদ্দিন, অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন, ডা. আল আমীন এহসান, মাওলানা মামুনুর রশীদ, অধ্যাপক আব্দুল করীম, সৈয়দ ওমর ফারুক, এবিএম শাহাবউদ্দিন, অ্যাডভাকেট আব্দুল বাসেদ, আব্দুল ওয়াহেদ, আব্দুর রহমান, মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ, হাফেজ মাওলানা ছিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।