মাহতাব উদ্দিন আল মাহমুদ,ঘোড়াঘাট(দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে ৩নং সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য মফিজুল ইসলামসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ২ লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে উপজেলার কুচেরপাড়া গ্রামে ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত ও সাবেক ১২নং খতিয়ানভুক্ত ১৫২ দাগে ৬ শতাংশ জমিসহ ১৫৩ নং দাগে সরকারি খাস জমি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সরকারি জমি দখলের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন জানতে পেরে সরেজমিনে গিয়ে ঘর অপসারণের নির্দেশ প্রদান করেন। নির্দেশ প্রদানের এক সপ্তাহ পার হলেও এখন পর্যন্ত ঘর অপসারণ করা হয়নি।
উপজেলা সেটেলমেন্ট ও ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কুচেরপাড়া গ্রামে ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত ও সাবেক ১২নং খতিয়ানভুক্ত ১৫২ দাগে ৬ শতাংশ এবং ১৫৩ নং দাগে ১৪ শতাংশ সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত জমি রয়েছে। উক্ত জমির ১৫৩ নং দাগে বসবাসরত গণেশ টুডু ও তালামাই মার্ডি নামে এক আদিবাসী দম্পতিকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আদিবাসী দম্পতি গণেশ টুডু ও তালামাই মার্ডির বাড়ির পশ্চিম দিকে ১৫২ নং দাগে ৬ শতাংশ জমিতে বেগুন, শিমসহ বিভিন্ন সবজির বাগান। এর দক্ষিণ পার্শ্বে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উত্তর পার্শ্বে বিদ্যালয়ের জমিতে লাগানো একটি মেহগনির বাগান রয়েছে। সবজি বাগানের দক্ষিণ ও পশ্চিম পার্শ্বে সিমেন্টের পিলার দিয়ে টিন শেডের ২টি ঘর তুলে রাখা হয়েছে। সেখানে বসবাসযোগ্য কোনো ঘর নেই। শুধু দ’খলের উদ্দেশে ঘর ২টি তোলা হয়েছে বলে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা তালামাই মার্ডি জানান, ‘এ জায়গা দীর্ঘ দিন ধরে স্কুলের দ’খলে রয়েছে। স্কুল ও আমাদের বাড়ি পাশাপাশি হওয়ায় এ ফাঁকা জায়গাটিতে আমরা শাক-সবজি আবাদ করে খেয়ে আসছি। কিন্তু হঠাৎ করে কয়েকদিন আগে মফিজুল মেম্বারসহ এই এলাকার আলম ও রুহুল আমিনকে সাথে নিয়ে জোর করে লোকজন দ্বারা এই ঘর দুটি তুলেছেন।’
অপর দিকে স্কুলের পাশে বসবাসরত তমছের আলী ও তার স্ত্রী জানান, ‘গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার চর এলাকার নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সুরুজ আলী নামে আমাদের এক ভাতিজার নিকট থেকে অন্য জায়গায় জমি কিনে দেওয়ার কথা বলে এই এলাকার মেম্বার মফিজুল ইসলাম প্রায় ২ লক্ষ টাকার মতো নিয়েছে।
এছাড়াও তিনি আরো অনেকের নিকট থেকে টাকা নিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। পরে এখানে ঘর তুলে দিলে জানতে পারি এটা নাকি সরকারি খাস জমি।’
এ বিষয়ে কুচেরপাড়া এম.এম আদিবাসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. নার্গিস বেগম বলেন, ‘এ জায়গাটার দুই পার্শ্বে স্কুলের জায়গা রয়েছে। স্কুলের বাচ্চারা সব সময় এখানে খেলাধুলা করে।
এছাড়া স্কুলসহ এর আশেপাশের পরিবেশ বজায় রাখতে জায়গাটা স্কুলের দ’খলে ছিল। কিছু দিন আগে স্কুল বন্ধের পরের দিনে এসে দেখি এ জায়গায় ২টি ঘর তোলা হয়েছে। পরে এলাকার লোক মারফত জানতে পারি ইউপি সদস্য মফিজুল ইসলাম জায়গাটি দখল করেছে।’
অপর দিকে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও সাবেক প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) নার্গিস আক্তার বানু বলেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমিন ২০১৬ সালে কিছু লোকজন নিয়ে জায়গাটি দ’খল করে একটি ঘর তুলেছিল।
তখন আমি স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে ঘরটি ভেঙ্গে দিয়েছিলাম। সে সময় রুহুল আমিন জানান, রানীগঞ্জ বাজারে আল-মদিনার ব্যবসায়ী তারাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির নিকট থেকে বায়না নিয়েছে। পরে সরকারি জমি দ’খলের বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করতে চাইলে তারাজুল ইসলাম আমাকে জানান, আমি এক দালাল চক্রের ফাঁ’দে পড়েছিলাম।
স্কুলের স্বার্থে আর কোন দিন এখানে আসবো না বলে ভুল স্বীকার করে চলে যায়।’
এ বিষয়ে সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য মফিজুল ইসলাম বলেন, তারাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি উক্ত সম্পত্তি রেজিষ্ট্র বায়না দলিল করেছেন। মূলত সেই বায়না দলিল মূলে আমরা মৌখিক বায়না করে উক্ত জমিতে দুইটি টিনসেড ঘর তুলেছি। পরে জানতে পেরেছি ওই জমি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। আমি ইউএনও স্যারের নিকট দুইটি ঘরের আবেদন করেছিলাম। আমি স্যারের সাথে কথা বলেছি। স্যার আপাতত ঘরের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলেছিলেন। পরে সরেজমিনে এসে ঘর অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা ঘরের কিছু অংশ ভেঙ্গে নিয়েছি। বাকি অংশ ভেঙ্গে নিয়ে যাবো।’
অন্য দিকে তারাজুল ইসলাম জানান, মফিজুল মেম্বারের সাথে আমার কোনো জায়গা জমির বায়না হয়নি।’
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান জানান, সরকারি খাস জমি দ’খল হচ্ছে প্রথমে জানতে পেরে ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে ইউপি সদস্যকে কাজ বন্ধ রাখতে নিষেধ করা হয়েছিল।
পরে সরেজমিনে গিয়ে ঘর অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘সরেজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে ঘর অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এখন আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম এখন পর্যন্ত ঘর অপসারণ করা হয়নি। সরকারি জায়গা দখলের কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’