
নীলফামারী রিপোর্টার।। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় পতাকা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি অবমাননার অভিযোগসহ নানান অভিযোগ উঠেছে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা নুর আলমের বিরুদ্ধে।দীর্ঘদিন থেকে তার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ থাকলেও অজানা কারণেই বহাল তবিয়তেই রয়ে গেছেন এই কর্মকর্তা।
সরেজমিনে মঙ্গলবার(১৭ মে)দুপুরে দেখা যায়,নিয়ম অনুসারে যে কোনো কর্মকর্তার বসার স্থানের মাথার উপরে অথবা সম্মানজনক স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি টাঙানোর কথা থাকলেও তার ভিন্ন চিত্র।ভূমি অফিসটির ভিতরে ঢুকতে চোখে পড়ে অফিসটির দরজার সামনের দেয়ালে ঘেঁষা কাগজপত্র রাখা একটি আনুমানিক মাত্র তিনফিটের কাঠের র্যাগের উপরে দায়সারাভাবে কোনো রকমে হেলে রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি।ওই অফিসে ঢুকতেই ডানদিকের দেয়ালের সামনে চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে দেদারছে অফিস করছেন ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা নুর আলম।বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবির ঠিক সামনে সেবা নিতে আসা ব্যক্তিরা লম্বা সারি হয়ে বসে আছেন।পুর্বেও এই ভূমি কর্মকর্তা রাত্রিকালীন পর্যন্ত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে রেখে তার অবমাননা করেছিলেন।শুধু তাই নয়,তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানান অনিয়ম-দু’র্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও।
উক্ত ইউনিয়নের মধ্যছাতনাই গ্রামের ওমর ফারুক (৫০)নামের এক জমির মালিক অভিযোগ করে ওই কর্মকর্তার সামনেই বলেন,এই ভূমি কর্মকর্তার কাছে ঘু’ষ ছাড়া কোনো কাজই হয়না।পৈতৃকমূলে আমার ভোগ-দখলকৃত জমির খারিজ করতে গেলে তিনি আমার কাছে ৪০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন।আমি এত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমার জমির খারিজ আর হয়নি।খোঁজ নিলে এলাকায় তার বিরুদ্ধে শত-শত অভিযোগ পাওয়া যাবে।
এ ছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের একাধিক এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন,ভূমি কর্মকর্তা নুর আলমের নানান অনিয়ম-দু’র্নীতি ও ঘু’ষ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ববাবর বেশকিছু এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ করে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস না পেয়ে পরে ওই ভূমি কর্মকর্তাকে দেয়া ঘু’ষের টাকা গোপনে ফেরত পাওয়ায় আপোষ-মীমাংশা করতে বাধ্য হই আমরা।এর আগে তিনি রাত পর্যন্ত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে রেখে তার অবমাননা করে বহাল তবিয়তে থাকায় এবার তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি অবমাননার দৃষ্টান্ত দেখালেন!আমরা জানতে চাই এই ভূমি কর্মকর্তার আসলে খুঁটির জোর কোথায়।তার বিরুদ্ধে গোপনে তদন্ত করা হলে অগণিত অনিয়ম-দু’র্নীতি,ঘু’ষ বাণিজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতার সত্যতা পাওয়া যাবে।আমরা এই ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আন্তরিক হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক সরকার বলেন,শুনেছি এই ভূমি কর্মকর্তা খুব ভেজালি লোক।পাইসা(টাকা)ছাড়া ওই অফিসে কোনো কাজ হয়না।এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা নুর আলমের ব্যবহৃত(০১৭২৮৮৬০৬৩৩)নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ডিমলা উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি)ইবনুল আবেদিন বলেন,তার বিরুদ্ধে কোনো লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় আমরা তাকে প্রথমত শোকজ করব।তবে তার বিরুদ্ধে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমাদের আরও ব্যবস্থা নিতে সহজ হত।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন,আমরা ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়গুলো অবগত করেছি।খুব দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন,জাতীয় পতাকার বিষয়টি আমি শুনিনি।শুনেছি তিনি নাকি অফিসের কাজ করার সময় ছবিগুলো ওখানে রেখে ছিলেন।তবে সে যদি এমনটা করে থাকেন তাহলে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।