
আনিছুর রহমান মানিক, ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধি>>
দীর্ঘ দুই মাস পর বাক প্রতিবন্ধী শিশুকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো ডোমার থানা পুলিশ।
থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ জুলাই রাত ২টায় ডোমার থানা পুলিশের টহল দল ডোমার রেলঘুন্টিতে ব্যাগ হাতে একটি শিশু ঘোরাফেরা করছে। টহলে দায়িত্বরত অফিসার শিশুটির নাম, ঠিকানা জানতে চায়। শিশুটি বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় কোন উত্তর না দেওয়ায় ডোমার থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমানকে অবগত করেন। পরে শিশুটিকে থানায় নিয়ে আসে। শিশুটির খাবার ও থাকার সু-ব্যবস্থা থানায় করেন ওসি নিজেই। তিনি বিভিন্ন স্থানে শিশুটির পরিচয় জানার চেষ্টা চালান। পরে স্থানীয় সাংবাদিকদের ডেকে গণমাধ্যম ও ফেসবুকে শিশুটির ছবি ছড়িয়ে দেন। হাফসা খান ও সায়মা সামিয়া নামের ফেসবুক ব্যবহারকারী দুটি মেয়ে ওই শিশুটিকে শনাক্ত করে তার পরিবারকে বিষয়টি জানায়।
শিশুটির বড় ভাই সাইফুল ইসলাম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ডোমার থানার ওসি’র সাথে যোগাযোগ করে জানায়, শিশুটির নাম পটল মিয়া নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাজিহাটি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল রশিদ মিয়ার ছেলে আমার ছোট ভাই গত ১৮জুন সে হারিয়ে যায়। বাক প্রতিবন্ধী শিশুর নাম পটল মিয়া। এতো দিনে পটল মিয়ার সাথে ডোমার থানার পুলিশ সদস্যদের বেশ আন্তরিকতা তৈরি হয়। রাতে ডিউটি অফিসারের রুমে তার ঘুমের ব্যবস্থা করা হয়। আর পুলিশ সদস্যদের মেসেই তার খাওয়া-দাওয়া চলে। বাজার থেকে ফেরার সময় অনেক পুলিশ সদস্যই শিশু পটল মিয়ার জন্য চকলেট ও বিভিন্ন সু-স্বাদু খাবার নিয়ে আসে। কোরবানির ঈদে তাকে দেওয়া হয় নতুন পঞ্জাবি-পায়জামা।
সোমবার (৩ আগষ্ট) সন্ধ্যায় ডোমার থানায় আসে পটল মিয়ার বড় ভাই সফিকুল ইসলাম ও চাচাতো ভাই মাজু মিয়া। সফিকুল ২মাস পর আদরের ছোট ভাই পটলকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ডোমার থানার ওসি মোহনগঞ্জ থানা পুলিশ ও ওই এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সাথে যোগাযোগ করে পটলের বড় ভাইয়ের পরিচয় নিশ্চিত করে। বাবা-মায়ের ছবি দেখে পটলও ইশারায় নিজের বাবা-মা বলে জানিয়ে দেয়। এরপর আইনি কাগজপত্র সম্পূর্ণ করে বড় ভাইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় বাকপ্রতিবন্ধী শিশু পটল মিয়াকে। এ সময় সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) জয়ব্রত পাল, ডোমার থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বিশ্বদেব রায়, পুলিশের শিশুবান্ধব কর্মকর্তা এসআই পারভিন আক্তারসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গত ৭ দিনে শিশু পটল মিয়ার সাথে পুলিশের অনেক সদস্যের গভির সম্পর্ক তৈরি হয়। বিদায়ের সময় পটলসহ বেশ কিছু পুলিশ সদস্য অশ্রুভেজা চোখে জল মুৃছতে দেখা যায়। ডোমার থেকে রাতে নেত্রকোনা যাওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় পটল মিয়া ও তার ভাইদের রাতের খাবার ও স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করেন ওসি মোস্তাফিজার রহমান। পরদিন মঙ্গলবার (০৪ আগস্ট) সকালে বাসযোগে কয়েকজন পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে তারা বাড়ির উদ্দ্যেশে রওনা দেয়।
বাক প্রতিবন্ধী শিশু পটল মিয়ার বড় ভাই সফিকুল ইসলাম আবেগালুপ্ত হয়ে জানান, গত দুই মাস আগে পটল বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাড়িতে ফিরে আসে নি। অনেক খোঁজা-খোঁজি করেও তার সন্ধান পাইনি। গত ২ আগষ্ট একটি মেয়ে তাদের বাড়ি গিয়ে জানায়, ফেসবুকে পটলের ছবি দিয়েছে সে ডোমার থানায় আছে। ডোমার থানার ওসি সাহেবের সাথে যোগাযোগ করে আমার হারিয়ে যাওয়া প্রতিবন্ধী ভাইকে ফিরে পাই। এ প্রতিদান কোন দিন ভুলার নয়