মো. আক্তার হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি:
কুমিল্লার হোমনায় ঘরের ভেতরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে থাকা মা ও সন্তানের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯ টায় উপজেলা সদরের ফকির পাড়ার জজ মিয়ার বাড়ি থেকে লাশ দু’টি উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন মো. বাবুর স্ত্রী সানজিদা আক্তার (২০) ও ২ বছরের শিশু আবদুল্লাহ।
পুলিশ জানায়, স্থানীয় কমিশনারের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরের বাহির থেকে শাবল দিয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে একই রশিতে ঝুলে থাকা মা ও সন্তানের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ দুটি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িকে থানায় নেয়া হয়।
জানা যায়, স্বামী মো. বাবু উপজেলা সদরের চৌরাস্তায় ফর্নিচারের দোকানে কাজ করেন। শ্বশুর জজ মিয়া নসিমন চালক ও শাশুড়ি গৃহিণী।
প্রতিবেশীরা জনান, তখন ঘরে কেউ ছিল না। স্বামী ও শ্বশুর নিজ নিজ কাজে চলে যাওয়ার পরেই আত্মহত্যার এই ঘটনা ঘটে।
সানজিদার বাবা রনি মিয়া বলেন, মো. বাবু ও সানজিদার তিন বছর আগে পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়। পরে তাদের ঘরে আবদুল্লাহর জন্ম হয়। বছর খানেক আগে তাদের মধ্যে মনোমলিন্য ও ঝগড়াঝাটি হয়েছিল। এছাড়াও প্রায়ই তাদের মধ্যে মোবাইল চালানো নিয়ে ঝগড়াঝাটি হতো। আমার মেয়ে আ’ত্মহত্যা করে নি, তাকে হ’ত্যা করা হয়েছে।’
স্বামী মো. বাবু বলেন, ‘রাতে স্ত্রী সন্তানের সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমিয়েছি। আমাদের মধ্যে কোনো কথাকাটি কিংবা কোনো সমস্যা হয়নি। সকালে প্রতিদিনের মতো এক সঙ্গেই ঘুম থেকে উঠি। আমি কাজে যাওয়ার আগে সে অন্য এক বাড়িতে গিয়েছিল। তখন তাকে নিজের ঘরে যাওয়ার কথা বলে কাজে চলে যাই। পরে শুনি, সে ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।’
শাশুড়ি রফেজা খাতুন জানান, ‘একটু দূরে চাচা শ্বশুরের বাড়ি থেকে দুধ এনে বাড়ির মেইন গেট বন্ধ দেখতে পান। পরে অন্য জনের বাড়ির ওপর দিয়ে নিজের বাড়িতে গিয়ে দেখেন- ভেতর থেকে ঘরের দরজা আটকানো। ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে জানালার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে বউ ও নাতিকে ফ্যানের সঙ্গে ফাঁসি দিয়ে ঝুলে থাকতে দেখেন। তা দেখে কান্নাকাটি করে প্রতিবেশীদের ডাকেন।’
তবে ঝুলন্ত লাশের অবস্থান ও পারিপার্শ্বক অবস্থা দেখে সচেতন মহল মনে করছেন এটি একটি পরিকল্পিত হ’ত্যাকাণ্ড।
এ ব্যাপারে হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টায় স্থানীয় কমিশনারের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল স্বামীর বাড়ি থেকে ঘরেরর দরজা ভেঙে ফ্যানের সঙ্গে একই রশিতে ঝুলে থাকা মা ও সন্তানের লাশ দুটি উদ্ধার করে পুলিশ। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ দুটি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে পারিবারিক কলহের কারণেই এই আত্মহত্মার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িকে থানায় আনা হয়েছে।