গ্যাসের সরবরাহ না থাকলেও গ্রাহককে নিয়মিত দিতে হচ্ছে বিল!
মো. ইব্রাহিম খলিল, হোমনা, কুমিল্লা।।
কুমিল্লার হোমনায় অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. এর বিরুদ্ধে। এর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের যোগসাজসে হাজার হাজার অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগ দেওয়ায় গ্যাস পাচ্ছে না বৈধ গ্রাহকরা। প্রতিটি অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগের বিনিময়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন ওই অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদাররা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লার হোমনা পৌরসভার ৬ ও ৭ নং ওয়ার্ডে ভোর ৫ টা থেকে সারাদিন গ্যাসের সরবরাহ থাকে না। রাত ১০টায় দেখা মেলে গ্যাসের। এমতাবস্থায়, রানবান্নার কাজ সম্পন্ন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। গ্যাসের সরবরাহ না থাকলেও বছরের পর বছর গ্রাহকদের নিয়মিত পরিশোধ করতে হচ্ছে গ্যাস বিল। এদিকে রান্না-বান্নার কাজ সারার জন্য প্রতিটি গ্রাহককে নির্ভর করতে হচ্ছে এলপি গ্যাসের ওপর। ফলে আর্থিকভাবেও চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রাহকরা। এ যেন গ্যাস সংযোগের নামে গ্রাহকদের সঙ্গে করা হচ্ছে প্র*তারণা।
গ্যাসের এই সমস্যা সমাধানের জন্য গত ৫-০৯-২০২১ খ্রি. তারিখে ব্যবস্থাপক, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রবিউশ কোম্পানি লি. গৌরিপুর অফিস, বরাবর, অভিযোগ করা হয়, যার গ্রহণ নং- ৪৯১, তারিখঃ ৫-০৯-২০২১খ্রি.। পরে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি),কুমিল্লা বরাবরও লিখিত অভিযোগ করতে বলেন। পরবর্তীতে গত ১৫-০৯-২০২১ খ্রি. তারিখে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি), কুমিল্লা বরাবর অভিযোগ করেন গ্রাহকরা। যার স্মারক নং- MD/ ১৩২৪, তারিখঃ ১৫-০৯-২০২১ খ্রি.। কিন্তু এসব অভিযোগ দাখিলের পর কিছু অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেই দায় সারেন। কিন্তু অভিযোগ করার পর সাড়ে ৩ বছর অতিবাহিত হলেও রহস্যজনক কারণে ৬ ও ৭নং ওয়ার্ডের গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার কোনো ব্যবস্থা নেয় নি কর্তৃপক্ষ।
হোমনা পৌর এলাকার শ্রীমদ্দি গ্রামের গ্রাহক মো. জহিরুল ইসলাম দানু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. এর কিছু দু*র্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কণ্ট্রাক্টররা ঘু*ষের বিনিময়ে অবৈধভাবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্যাস লাইন সংযোগ দেওয়ার কারণেই আমরা বৈধ গ্রাহকরা গ্যাস পাচ্ছি না। কারণ প্রথম দিকে যখন গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছিল তখন গ্যাসের কোনো সংকট ছিল না, এখন সমস্যা হবে কেন। এছাড়া একটা নির্দিষ্ট সময়ে রাত ১০ টায় গ্যাস আসে কোত্থেকে, ভোর ৫ টা বাজতেই নিয়মিত গ্যাস থাকে না কেন? আবার কিছু কিছু এলাকায় সারা দিনরাত গ্যাস থাকে কীভাবে? আমাদের ধারণা গ্যাস কর্তৃপক্ষ কোনো অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের এলাকায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ রাখে। আমরা এ সমস্যার দ্রুত সমাধান চাই।’
হোমনা পৌরসভাধীন শ্রীমদ্দি গ্রামের বাসিন্দা আ. মালেক, মো. হারুন-অর-রশিদ, মো. রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ভোর ৫ টার পর থেকে রাত ১০টা না বাজা পর্যন্ত গ্যাসের সরবরাহ থাকে না। ফলে রান্না-বান্নার কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। গ্যাসের সরবরাহ না থাকলেও বছরের পর বছর আমাদেরকে নিয়মিত পরিশোধ করতে হচ্ছে গ্যাস বিল। এ যেন গ্যাসের নামে গ্রাহকদের সঙ্গে করা হচ্ছে প্র*তারণা। অপরদিকে রান্না-বান্নার কাজে এলপি গ্যাস বা লাকড়ি ব্যবহার করতে হচ্ছে। এভাবে আমাদের দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। আমাদের গ্যাসের সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রাহক জানান, প্রতিটি গ্যাস সংযোগ দিতে ঠিকাদার মোন্তাজ মিয়া আমাদের কাছ থেকে গ্যাস অফিসের কর্মকর্তাদের কথা বলে ৬০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়ে আমাদের গ্যাস লাইন বৈধ বলে আমাদেরকে গ্যাস বিল পরিশোধের জন্য বইও দিয়েছে। কিন্তু আমরা বই নিয়ে গৌরিপুর অফিসে গেলে, তারা জানায়- আমাদের গ্যাস সংযোগ অবৈধ।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শংকর মজুমদার এর মুঠো ফোনে একাধিকবার ফোন করেও তার সংযোগ পাওয়া যায় নি।
প্রসঙ্গত, অভিযোগের পর গ্যাসের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে জানতে তার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘অবৈধ গ্যাসের সংযোগগুলো আমরা বিচ্ছিন্ন করে দিলেই আপনারা গ্যাস পাবেন।’
এ সমস্যার সমাধান করতে কত সময় লাগবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আশা করি, আগামী ছয় মাসের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।