
মো. সাইফুল্লাহ খাঁন, জেলাপ্রতিনিধি, রংপুর: রংপুর বিভাগজুড়ে বেড়েই চলেছে করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ। কাগজে-কলমে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে স্বাস্থ্যবিধি পালনে তেমন কোনো তৎপরতা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ভারতঘেঁষা এই বিভাগ। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগজুড়ে আরও ৪৫৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশে। এর আগের দিন মঙ্গলবার ৩৯৯ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। সে দিন শনাক্তের হার ছিল ৪১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এর আগে সোমবার ৪৭৮ জন শনাক্ত হয়েছিল। ওই দিন বিভাগে দু’জন মারা গেছেন। বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৯১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে বিভাগের আট জেলার মধ্যে রংপুরের ১৩৬, নীলফামারীর ৬৬, দিনাজপুরে ৬৫, ঠাকুরগাঁওয়ে ৬৪, গাইবান্ধার ৪০, পঞ্চগড়ের ৩৮, কুড়িগ্রামের ২৬ ও লালমনিরহাট ২১ জন করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১৩৫ জন। বর্তমানে বিভাগে করোনা আক্রান্ত গুরুতর ৮৫ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সংকটাপন্ন ১১ রোগীকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। বাকিদের বাসায় রেখে চিকিৎসা চলছে। বিভাগজুড়ে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ রয়েছেন ৫ হাজার ১৮১ জন রোগী। পরিচালক আরও জানান, রংপুর বিভাগে করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে দিনাজপুরে। এ জেলায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত ১৬ হাজার ৫৯ এবং ৩৩৪ জন মারা গেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বিভাগীয় জেলা রংপুরে। এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮০৯। এ ছাড়া জেলা হিসেবে সবচেয়ে কম ৬৩ জন মারা গেছে গাইবান্ধায়। এ জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ২০৩ জনের। ঠাকুরগাঁওয়ে মৃত্যু ২৫৬ ও শনাক্ত ৮ হাজার ২৭২, নীলফামারীতে মৃত্যু ৮৯ ও শনাক্ত ৪ হাজার ৯৯৮, পঞ্চগড়ে মৃত্যু ৮১ ও শনাক্ত ৪ হাজার ১২৩, কুড়িগ্রামে মৃত্যু ৬৯ ও শনাক্ত ৪ হাজার ৮০৮ এবং লালমনিরহাট জেলায় মৃত্যু ৭০ ও আক্রান্ত ৩ হাজার ১ জন।
তিনি জানান, ২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত বিভাগে মোট ৩ লাখ ২১ হাজার ৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ হাজার ২৭৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আট জেলায় মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ২৫৭ জনের। এখন পর্যন্ত বিভাগে সুস্থ হয়েছেন ৫৫ হাজার ৯১ জন। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে রংপুর বিভাগের দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট জেলাকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বা রেড জোন বলা হয়েছে। এ ছাড়া ইয়েলো জোন বা মধ্যম ঝুঁকিতে রয়েছে রংপুর, কুড়িগ্রাম ও ঠাকুরগাঁও জেলা। দিন দিন করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে এই বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, করোনা প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কোথাও কার্যক্রম চলছে না। বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার কথা থাকলেও হাটবাজার, পরিবহন, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত সবখানেই তা উপেক্ষিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার নীতি অমান্য করে সভা-সমাবেশ, উৎসবসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, গণটিকাসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষকে টিকার আওতায় আনার ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার আগের চেয়ে কমে আসছে। তবে বর্তমানে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন এবং করোনার ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতিতে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। তবে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে জনগণকে সচেতন করতে মুখে মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে মাস্ক সরবরাহ করা অব্যাহত আছে।