
মো. সাইফুল্লাহ খাঁন,জেলা প্রতিনিধি, রংপুর : করোনা প্রতিরোধে রংপুর জেলা প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী নগরীতে বিকাল ৪টার পর থেকে সকল প্রকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ দোকানপাট বন্ধ রাখা হচ্ছে। এছাড়াও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নগরীর বিভিন্ন ওষুধের দোকানে বেঁচাকেনা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এদিকে, মহানগরীর দোকানপাটগুলো বন্ধ রাখা হলেও থেমে নেই রংপুর কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালের আম বাজারে বেঁচা-কেনা। এই বেঁচা- বিক্রি প্রতিদিন সকাল থেকে চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। করোনার এই প্রার্দুভাবে আম বাজারে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। আম বাজারে সামাজিক দূরত্ব মানছেন না ক্রেতা ও বিক্রেতারা। এতে করে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে স্থানীয় সচেতন মহল। এ বিষয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে টার্মিনালের আম বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রংপুরের বাজারে বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গা , ফজলি, হিমসাগর (খিরসাপাত), গোপালভোগ, মোহনভোগ, ল্যাংড়া, বৌ-ভোলানি, রাণিপছন্দ, জামাই খুশি, বৃন্দাবন, তুতাপরি, লখনা, বোম্বাই, দাউদভোগ, সিন্দুরি, আম্রপালি, আশ্বিনা, ব্যানানা, ক্ষুদি খিরসাপাত, কালীভোগসহ শতাধিক জাতের আম রয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব জাতের আমের দাম প্রতি মণে বেড়ে দাঁড়িয়েছে এখন ২০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত।
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানান, রংপুরের বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গা আম মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছিল ১৯০০-২২০০ পর্যন্ত। সেই হাড়িভাঙ্গা আম এক সপ্তাহের ব্যবধানে মণপ্রতি ২৬০০-২৮০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়াও বানেশ্বরে প্রতিমণ হিমসাগর ২৫০০-৩২০০ টাকা, ল্যাংড়া ১৮০০-২২০০, লক্ষণভোগ ৮০০-১১০০, গুটি ৭০০-১৬০০ ও রাণিপছন্দ ২০০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
পদাগঞ্জ হাটের আম চাষি হাফেজ মো. আওলাদ হোসেন জানান, করোনার কারণে সরাসরি আম কিনছেন এমন ক্রেতার সংখ্যা খুব কম। অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা ক্রেতাদের হাতে আম তুলে দিচ্ছি। এভাবে আমের অনেক অর্ডার পাচ্ছি। নিজস্ব কুরিয়ারের মাধ্যমে ফরমালিনমুক্ত আম পাঠাচ্ছি। এছাড়াও হোম ডেলিভারিও দিচ্ছি।
রংপুর মহানগরীর মেডিকেল ধাপ এলাকার শফিকুল ইসলাম জানান, করোনাকালে আম বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের ভিড় দেখে অবাক হয়েছি। এখানে সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। এই পরিস্থিতি দেখে আম কিনা হয়নি।
অপরদিকে, নগরীর সাতগাড়া সবুজপাড়া এলাকার মেহেবুব পারভেজ সুমন জানান, করোনার প্রার্দুভাবের কারণে আমবাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি কম। এবার অনেক ক্রেতা অনলাইনে আমের অর্ডার দিচ্ছেন। তিনি আরও জানান, দেশে বিভিন্ন স্থান থেকে আমার আত্মীয়- স্বজনরা ফোন করে আম চাইলে আমি বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
এ বিষয়ে রংপুর কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল আম বাজারের ইজারাদার মহিদুল ইসলাম লুথু জানান, মুখে মাস্ক পরে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ব্যবসায়ীদের আম বিক্রির কথা বলা হচ্ছে।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের বাজার শাখার সহকারী আনারুল হক জানান, করোনার এই পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব রেখে আম ক্রয় ও বিক্রয় করার জন্য সিটি কর্পোরেশন থেকে ব্যবসায়ীদের চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে কেউ যদি নির্দেশনা না মানে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হারুন অর রশিদ জানান, আম বাজারের ইজারাদারকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আম ক্রয়- বিক্রয়ের কথা বলা হয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, আমবাজারের বিষয়টি নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আব্দুল আলীম মাহামুদ জানান, নগরীতে বিকাল ৪টার পর থেকে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ রাখা হচ্ছে। তবে আমবাজারের বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।