ঝিনাইদ প্রতিনিধি ঃ
সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে জেলার মহেশপুরে নস্তি বাওড়ের প্রায় ২০ বিঘা জমি সরকারের হাতছাড়া হতে চলেছে। আদালতের আদেশ সরকারের পক্ষে থাকলেও বাওড়ের জমি শিবেন্দ্রনাথ হালদার নামে এক ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়েছে। জমির পর্চায় সরকারের নাম নেই। ফলে জমিটি সরকারের অনুকুলে রাখার জন্য ইজারা গ্রহীতা নস্তি গ্রামের মহিলা সমিতি’র চেষ্টা ব্যর্থ হতে চলেছে। সমিতির সদস্যরা বলছেন, তারা ইজারার মাধ্যমে মাছ চাষ করার আশা নিয়ে বাওড়ের জমি রক্ষার জন্য ২৪ বছর আইনী লড়াই চালিয়ে জয়ী হলেও প্রিন্ট পর্চা ব্যক্তি মালিকের নামেই রয়ে গেছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার নস্তি ও উজ্জলপুর মৌজায় রয়েছে সরকারি একটি বাওড় যার নাম নস্তি বাওড়। এটি নস্তি মৌজায় ৬৯.১৫ একর ও উজ্জলপুর মৌজায় ৯৩.৭৫ একর জমির ওপর অবস্থিত। ১৬২.৯০ একর বিশিষ্ট বিশাল আকারের বাওড়টি মাছ চাষের অনুপযোগী ছিল। ১৯৮৮ সালে নস্তি গ্রামের একটি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে প্রথম ইজারা দেওয়া হয়। ১৯৯২ সালে বাওড়টি জেলা প্রশাসকের নিকট থেকে মৎস্য বিভাগ শর্ত সাপেক্ষে গ্রহণ করে। ১৯৯৫-৯৬ সালে ইফাদ প্রকল্পের আওতায় বাওড়টির শুকিয়ে যাওয়া ২৩.৮৫ একর জমিতে ১৩ টি পুকুর কাটা হয়। পুকুরগুলি মাছ চাষের জন্য নস্তি গ্রামের বিত্তহীন মহিলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির কাছে ইজারা দেওয়া হয়। সমিতির সভাপতি নাছিমা খাতুন জানান, বাওড়টির কিছু জায়গা স্থানীয় প্রভাবশালী শিবেন্দ্রনাথ হালদার ওরফে শিবেন হালদার দখল করে নিয়েছেন। তিনি সরকারি ৬.৫০ একর জমি ব্যক্তি নামে রেকর্ড করে দখল করে নিয়েছেন। সূত্রমতে, সমিতির সদস্যদের তৎপরতায় স্থানীয় ভূমি অফিস ৩০ ধারায় (আপত্তি নং-৬৭৮) এই রেকর্ডের বিপক্ষে আপীল করেন। এই আপীল খারিজ হয়ে যায়। পরে সরকারের পক্ষে ৬৭৮ নং আপত্তি কেইসের বিরুদ্ধে ২০৫৮৭৫/১৫ আরেকটি আপিল মামলা দায়ের করেন। ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট আদালত বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক ঝিনাইদহ এর অনুকুলে রায় প্রদান করেন। কিন্তু সর্বশেষ ছাপা পর্চা তৈরীর সময় দখলদারের নামে ছাপা হয়েছে বলে সমিতির সদস্যরা নিশ্চিত করেছেন। এ ক্ষেত্রে রেকর্ডকৃত জমি ছাপা পর্চা তৈরীতে যাওয়ার সময় ওয়ার্কিং ভলিউম টেম্পারিং করা হয়েছে বলে সমিতির সদস্যরা আশংকা প্রকাশ করছেন। এ বিষয়ে মহেশপুর ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুজন সরকার জানান, ওই জমিটি সরকারি বাওড়ের। মাঠ জমিপে ভুল করে ব্যক্তি মালিকানায় চলে গেলেও পরবর্তীতে তা সংশোধন হয়েছে। এরপর তারা ছাপা পর্চার জন্য পাঠানো হয়। তিনি শুনেছেন ছাপা পর্চা ব্যক্তি মালিকের নামেই হয়েছে। যদি এটা হয়ে থাকে তাহলে কেন হলো তা খুঁজে বের করা এবং এটা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। জমির দখলদার শিবেন্দ্রনাথ হালদার জানান, জমিটি আইনত তার হওয়ায় তারই নামে রেকর্ড হয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। মামলার নিস্পত্তির পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান।